আজকে আমরা অঙ্গ ও তন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর বেসিক হিউমান বায়োলোজি ও এর প্রয়োগ অংশের অন্তর্গত।

অঙ্গ ও তন্ত্র
তন্ত্র (Organ System):
কয়েকটি অঙ্গ একত্রিত হয়ে তৈরি হয় একটি তন্ত্র। মানবদেহকে প্রধানত ১১ টি তন্ত্রে বিভক্ত করা যায়। যেমন- কঙ্কালতন্ত্র, পেশি তন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র, হৃদপিণ্ড ও রক্তসংবহনতন্ত্র, লসিকাতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র, রেচনতন্ত্র, জননতন্ত্র, অন্তঃক্ষরাতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র ও বহিরাবরণতন্ত্র।

কঙ্কালতন্ত্র (Skeletal System):
এই তন্ত্র অস্থি, তরুণাস্থি, সন্ধি প্রভৃতি সমন্নয়ে গঠিত। কঙ্কালতন্ত্রের কাজ-দৈহিক কাঠামো গঠন, চলাচল, রক্ষণাবেক্ষণ, সঞ্চয়, লোহিত কণিকা উৎপাদন প্রভৃতি।
পেশিতন্ত্র (Muscular System):
এই তন্ত্র অস্থির সাথে যুক্ত বিভিন্ন পেশি নিয়ে গঠিত। পেশি কলা মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের কাজ করে।
শ্বসনতন্ত্র (Respiratory System)
এই তন্ত্র শ্বাস যন্ত্র বা Pharynx, শ্বাসনালী বা Trachea, Bronchi এবং তার সঙ্গে যুক্ত ফুসফুসদ্বয় বা Lungs ও তার বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত। বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে রক্তে মিশ্রিত করা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড রক্ত থেকে বের করে দিয়ে রক্তকে বিশুদ্ধ করা শ্বসনতন্ত্রের কাজ।

রক্তসংবহনতন্ত্র (Cardio Vascular System):
এর মধ্যে আছে হৃৎপিন্ড বা Heart, ধমনী বা Artery, শিরা বা Vein এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত সরু ও সূক্ষতম ধর্মনী ও শিরার নালিকাগুলো। রক্তসবহন তন্ত্রের কাজ- রক্তসঞ্চালন, অক্সিজেন পরিবহণ, কার্বন-ডাই-অক্সাইড পরিবহণ, খাদ্যসার পরিবহণ, সঞ্চিত খাদ্য পরিবহণ, হরমোন পরিবহণ, দৈহিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করা প্রভৃতি।
লসিকাতন্ত্র (Lymphatic System):
লসিকা, লসিকা গ্রন্থি ও লসিকা নালী নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত হয়। লসিকার কাজ- প্রতিরক্ষা, প্রতিরোধ, প্রোটিন পরিবহণ, তৈলাক্ত বা স্নেহ পদার্থ পরিবহণ, পুষ্টি, শোষণ, দেহ রসের পুনর্বণ্টন প্রভৃতি।
পরিপাকতন্ত্র (Digestive System):
মুখবিবর, গলবিল, অন্ননালী, পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, যকৃত, অগ্নাশয়, পিত্তথলি প্রভৃতি নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত হয়। পরিপাকতন্ত্রের কাজ- খাদ্যগ্রহণ, পরিপাক, শোষণ, বৈর্জ্য পদার্থ ত্যাগ প্রভৃতি এই তন্ত্রের কাজ।

রেচনতন্ত্র (Urinary System):
এক জোড়া বৃক্ক, এক জোড়া রেচন নালী বা ইউরেটার, একটি মূত্রথলি ও মূত্রনালী নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। রেচনতন্ত্রের কাজ- রক্ত থেকে নাইট্রোজেন জাতীয় বর্জ্য অপসারণ করা, রক্তে অম্ল ও ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, ভিটামিন ডি ও লোহিত কণিকা তৈরিতে অংশ নেয়া, দেহে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
জননতন্ত্র (Reproductive System) :
পুরুষ ও স্ত্রী প্রজননতন্ত্র নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। জননতন্ত্রের কাজ- মানুষের বংশবৃদ্ধি করা, পুরুষ এবং স্ত্রী গ্যামেট শুক্রাণু, ডিম্বাণু সৃষ্টি ও নিষেক করা।
অন্তঃক্ষরা তন্ত্র (Endocrine System)
পিটুইটারী, থাইরয়েড, প্যারা থাইরয়েড, এড্রেনাল প্রভৃতি গ্রন্থি নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত হয়। অন্তঃক্ষরা তন্ত্রের কাজ দেহের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির কর্টেক্স অঞ্চলের বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ, জনন গ্রন্থির বৃদ্ধি, ক্ষরণ ও কার্য নিয়ন্ত্রণ, মাতৃদেহে দুধ ক্ষরণ ও নিয়ন্ত্রণ, বিপাক বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন লক্ষণ প্রকাশে সহায়তা করা।

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System):
এই তন্ত্র মস্তিস্ক (Brain) ও তা থেকে ছড়িয়ে পড়া সুষুমা কাণ্ড (Spinal Cord) এবং তার সঙ্গে অসংখ্য স্নায়ু (Nerves) নিয়ে গঠিত। স্নায়ুতন্ত্রের কাজ- অনুভূতি গ্রহণ, পরিবহণ, সমন্বয় এবং স্নায়ু উদ্দীপনা বহন করা।
ত্বকতন্ত্র (Integumentary system )
দেহের বাইরের দিকে যে আচ্ছাদনকারী আবরণ থাকে তাকে ত্বক বা চামড়া (skin) বলে। শরিরের সবচেয়ে বড় এই অঙ্গ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রন্থিযুক্ত, যা তাপমাত্ৰা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ত্বক, চুল, নখ, ঘর্ম গ্রন্থি এবং তৈল গ্রন্থি নিয়ে এই তন্ত্র গঠিত। বহিরাবরণ তন্ত্রের কাজ দেহের প্রতিরক্ষা, তাপ নিয়ন্ত্রণ, জলীয় পদার্থের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা। এছাড়াও বাইরের আঘাত এবং জীবাণুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। দেহের জলীয় অংশকে দেহের ভিতর সংরক্ষণ করে।
বিশেষ অনুভূতির অঙ্গসমূহ (Special Sense Organs):
মানুষের বিশেষ বিশেষ অনুভূতি ও কাজের জন্য যে সব অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হয় তাকে বিশেষ অনুভূতির অঙ্গ (Special Sense Organs) বলা হয়। সেগুলো হলো
১। জিহ্বা বা Tongue যার দ্বারা আমরা স্বাদ গ্রহণ করি।
২। চক্ষু বা Eye যার দ্বারা আমরা দর্শন করি।
৩। নাক বা Nose যার দ্বারা আমরা ঘ্রাণ উপভোগ করি।
৪। কান বা Ear যার দ্বারা আমরা শব্দ শ্রবণ করি। ৫। চর্ম বা Skin যার দ্বারা আমরা স্পর্শ অনুভব করি।
আরও দেখুনঃ