আজকে আমরা কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ ও অনিরাপদ কার্যাভ্যাস সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর পেশেন্ট কেয়ারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অংশের অন্তর্গত।

কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ ও অনিরাপদ কার্যাভ্যাস
কর্মীদের যেকোনো পেশা বা প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে, একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরি করতে অবশ্যই যথোপযুক্ত জ্ঞান থাকতে হবে। এটি সাধারণ শোনালেও কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা উভয়ই বারবার ভুল করে। দুর্ভাগ্যবশত, অনিরাপদ কাজের পরিস্থিতি একটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে যা গুরুতর আঘাত বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
অনিরাপদ কাজের অভ্যাস
১। প্রশিক্ষণের অভাব, প্রশিক্ষণ বা অনুমোদন ছাড়া সরঞ্জামাদি অপারেটিং করা
২। যথাযথ ব্যক্তিগত সুরক্ষামুলক সরঞ্জামের
৩। ত্রুটিপূর্ণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা, যেমন পাওয়ার টুল বা মই
৪। সেফটি হ্যাজার্ড সম্পর্কে অন্যদের সতর্ক করতে ব্যর্থতা
৫। অনুপযুক্ত পদ্ধতিতে সরঞ্জাম পরিচালনা, অনুপযুক্ত ওয়ার্কস্টেশন বিন্যাস
৬। অগোছালো হাউস কিপিং, অপর্যাপ্ত আলোতে কাজ করা
৭। আগুনের বিপদ, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা সতর্কতা ব্যবস্থা
৮। একক ব্যক্তির উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ, নিরাপত্তা চিহ্ন উপেক্ষা করা

নিরাপদ কাজের অভ্যাস
নিম্নে কতগুলো নিরাপদ কাজের অভ্যাস উল্লেখ করা হল:
১। কর্মীদের ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া; নিরাপদ আচরণের জন্য কর্মীদের পুরস্কৃত করা
২। পেশাগত চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া
৩। সেফটি লেবেল এবং চিহ্ন ব্যবহার করা; জিনিস পরিষ্কার ও গুছিয়ে রাখা
৪। নিশ্চিত করা যে কর্মীদের সঠিক সরঞ্জাম আছে এবং এর কার্যকারীতা পরীক্ষা করা হয়েছে
৫। কাজের মধ্যে বিরতিকে উৎসাহিত করা; কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিয়ে নিয়মিত মিটিং করা।
৬। কাজের শুরু থেকেই নিরাপত্তা প্রোটোকল প্রয়োগ করা
৭। স্টাফ এবং নিয়োগকর্তাদের মধ্যে খোলা সংলাপ রাখার ব্যবস্থা উন্মুক্ত রাখা
নিরাপদ অপারেটিং পদ্ধতি
নিরাপদ অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) হল একটি সংস্থার দ্বারা সংকলিত ধাপে ধাপে নির্দেশাবলির একটি সেট যা কর্মীদের জটিল রুটিন কাজ-কর্ম পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
জরুরি বহির্গমন
যেকোনো জরুরি অবস্থায় ভবন থেকে নিরাপদে বের হতে যে রাস্তা বা পথ ব্যবহার করা হয় তাকে বহির্গমন পথ বা এক্সিট রুট বলে। প্রয়োজন অনুসারে একটি ভবনের প্রতিটি কক্ষের এক বা একাদিক এক্সিট রুট থাকতে পারে।

বহির্গমন পথের বিধিমালাসমূহ
১। ভবনের প্রত্যেক ফ্লোরে সহজে দৃশ্যমান এক বা একাদিক স্থানে বহির্গমন পথের নকশা দেওয়ালে টানিয়ে রাখতে হব; তিন বা তার চেয়ে কম তলা ভবনের জন্য বহির্গমন পথ সর্বনিম্ন ১ঘণ্টা অগ্নি প্রতিরোধক হতে হবে,
২। চার তলা বা তার চেয়ে বেশী তলা বিশিষ্ট ভবনের জন্য এ পথ সর্বনিম্ন ২ঘন্টা অগ্নি প্রতিরোধক হতে হবে।
৩। ভবনের প্রতিটি কক্ষ যেখানে ২০ জন বা তার অধিক লোক কাজ করে সেখানে ন্যূনতম ২টি বহির্গমন পথ থাকতে হবে,
৪। বহির্গমন পথ কোনো ব্যক্তির কাজের স্থান থেকে ৫০মিটারের অধিক দূরত্বে হবে না,
৫। বহির্গমন পথের গ্রন্থ ১.১৫ মিটার এবং উচ্চতা ২মিটারের কম হতে পারবে না, ভবনের মাঝের সিঁড়িপথ ও বাঁকের শেষ প্রাপ্ত ভবনের বহির্থী হতে হবে,
৬। বহির্গমন পথের দেওয়ান, ফ্লোর ও সিলিং অগ্নি প্রতিরোধক নির্মাণ দ্বারা তৈরি হতে হবে, বহির্গমন ছা অন্য কোনো কাজে তা ব্যবহার করা যাবে না, কমানো যাবে না,
৭। বহির্গমন পথ বাঁধা যুক্ত থাকতে হবে এবং এ পথের ধারণক্ষমতা
৮। উক্ত দরজা কখনো তালাবদ্ধ করা যাবে না, বহির্গমনের প্রত্যেক দরজা সুইংপিং ফায়ার ডোর হতে হবে।
বহির্গমন সংকেত বা এক্সিট সাইন – Exit Sign
বহির্গমন সংকেত বা এক্সিট সাইন হলো আলোযুক্ত এমন এক প্রকার সংকেত বা চিহ্ন যা সঠিকভাবে, দ্রুত ও নিরাপদে দুর্ঘটনা প্রবা স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে আসতে সাহায্য করে। তাই এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে সকল বিল্ডিং এ এক্সিট সাইন বা প্রস্থানের চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। আলোযুক্ত বহির্গমন সংকেত ব্যাটারি ব্যাকআপ ও ইসারজাপি পাওয়ারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি বহির্গমন পথের সামনে রাখতে হবে। যে সকল স্থান থেকে বহির্গমন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায় না সেখানে অতিরিক্ত এক্সিট সাইন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পথ নির্দেশক সাইন থাকতে হবে।

অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম
১। ফায়ার এক্সটিংগুইসার
২। ভাব ও রাইসার
৩। হোস ও আনুষঙ্গিক উপকরণ
৪। আগুন হাইফ্যান্ট
৫। রিল এবং ক্যাবিনেট

ট্যাগিং:
ট্যাগিং হল এমন একটি পদ্ধতি যা পেশাদারী কর্মীরা বিভিন্ন যন্ত্রপাতির দৃশ্যত পরিদর্শন করার পাশাপাশি লেবেলিং করে কাজের উপযুক্ত করে রাখা। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা নিয়মানুসারে সমস্ত যন্ত্রপাতি কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মক্ষম করে রাখার জন্য ট্যাগিং অপরিহার্য। কর্মচারী বা দর্শনার্থীদের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো বিপদ আছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন অবশ্যই করণীয়।
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ট্যাগিং করলে সরঞ্জামগুলোর সমস্যা সনাক্ত করা যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষার এটি একটি ভালো অভ্যাস। এর মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণও করা হয় এবং ক্ষতির হাত থেকেও যন্ত্রটিকে রক্ষা করা যায়। যন্ত্রপাতির ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন এবং মেরামত করাও অপরিহার্য। ব্যবহার্য সরঞ্জামগুলোর আপডেট রেখে ট্যাগিং পদ্ধতি চলমান রাখা নিরাপদ ও ঝুঁকির হাত থেকে কর্মীকে কাজে স্বচ্ছন্দ এনে দেয়।
আরও দেখুনঃ
2 thoughts on “কর্মক্ষেত্রের নিরাপদ ও অনিরাপদ কার্যাভ্যাস”