আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ইনসুলিন পেন বা কলম দিয়ে ইনসুলিন দেওয়ার নিয়ম – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত |
ইনসুলিন পেন বা কলম দিয়ে ইনসুলিন দেওয়ার নিয়ম

ইনসুলিন পেন এর সাহায্যে সাতটি সহজ ধাপে ইনসুলিন নেওয়া যায়। ধাপগুলো নিচে তুলে ধরা হলো—
ধাপ ১: হাত ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
ধাপ ২: ইনজেকশনটি শরীরের কোন জায়গায় দিবে সেটি ঠিক কর। ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হলো শরীরের চর্বিযুক্ত স্থান। যেমন: তলপেট (নাভির নিচের অংশ), উরু অথবা নিতম্ব। প্রত্যেকবার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় ইনজেকশন নেওয়া উচিত।
আগে যেখানে ইনসুলিন নেওয়া হয়েছে তার থেকে থেকে অন্তত ১ সেন্টিমিটার বা আধা ইঞ্চি দূরে পরের ইনজেকশনটি দেওয়া উচিত। একই জায়গায় বারবার ইনজেকশন দিলে ওই জায়গাটি শক্ত হয়ে ফুলে যেতে পারে—যা পরবর্তীতে ইনসুলিন শোষণে ও সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দিবে।
ধাপ ৩: ইনসুলিন পেন এর বাইরের ও ভেতরের ক্যাপ খুলে এতে সুঁইটি লাগিয়ে নাও। ডায়াল ঘুরিয়ে দুই ইউনিটে নিয়ে আসুন। এরপর পেনটিকে সোজা করে ধর। যতক্ষণ পর্যন্ত সুইয়ের মাথায় ইনসুলিন না দেখা যায় ততক্ষণ পেনের পেছনে থাকা প্লাঞ্জারে ধীরে ধীরে চাপ দাও। এই কাজটিকে বলা হয় ‘প্রাইমিং’। সুঁই ও ইনসুলিন ভায়াল বা কার্তুজের ভেতরে কোনো বাতাস থাকলে তা এই পদ্ধতিতে বের করা যায়, ফলে ডোজ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
ধাপ ৪: এবার ডায়াল ঘুরিয়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজটি বাছাই কর। যেখানে ইনজেকশনটি নিবে সেই স্থান পরিষ্কার ও শুকনো আছে কি না তা নিশ্চিত কর।
ধাপ ৫: সমকোণে বা খাড়াভাবে (৯০ ডিগ্রী কোণে) সুইটি শরীরে প্রবেশ করাও। ইনজেকশন দেওয়ার আগে ত্বক আস্তে চিমটি দিয়ে উঠিয়ে নিতে পারেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ডায়ালটি জিরোতে (০) ফেরত না যায়, ততক্ষণ প্লাঞ্জারে চাপ দিয়ে ধরে রাখ।
ধাপ ৬: সুঁইটি সরানোর আগে ইনসুলিন যেন শরীরে প্রবেশ করার যথেষ্ট সময় পায়, সেজন্য ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনে নাও। ত্বকে চিমটি দিয়ে রাখলে তা সরিয়ে নাও ।
ধাপ ৭: সুঁইটি সরিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলে দাও।

ইনসুলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অনেকেই ইনসুলিন ইনজেকশন শুরু করার আগে এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কারও কারও সুঁই দেখে ভয় লাগতে পারে, কেউ কেউ অস্থির বোধ করতে পারে, ব্যথা নিয়ে চিন্তিত হতে পারে—এমনকি অনেকে অন্যদের সামনে ইনজেকশন নিতে লজ্জা অথবা ভয় পেতে পারে। এই ধরনের অনুভূতি হওয়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।
এক্ষেত্রে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের দায়িত্ব হচ্ছে রোগীকে সঠিকভাবে কাউন্সেলিং করা। পরিচিত কোনো আত্মীয়, বন্ধু, সহকর্মী অথবা প্রতিবেশী যদি ইনসুলিন ব্যবহার করে থাকে তাহলে তাদের সাথেও এই ব্যাপারে রোগীকে কথা বলানো যেতে পারে।
ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন নিয়ে প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা ভিন্ন, তাই এসব আলোচনা থেকে রোগী তার নিজের জন্য উপযোগী কিছু পরামর্শ পেতে পারে। অন্যান্য ঔষধের মতোই ইনসুলিন নিলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন :
- মাথাব্যথা, বমি বমি লাগা, সর্দিজ্বর অথবা ফ্লু এর মতো লক্ষণ
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া: ইনসুলিনের সবচেয়ে কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া। রক্তে গ্লুকোজ তথা সুগারের পরিমাণ ন্যূনতম স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কমে গেলে তাকে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। অনেকে একে সংক্ষেপে ‘হাইপো’ হিসেবে চেনেন। মূলত ইনসুলিন নিতে হয় এমন ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া দেখা দেয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত পরিমাণে ইনসুলিন নিলে অথবা ইনসুলিন নেওয়ার পরে খাবার না খেলে এই অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ভুল ডোজে ইনসুলিন নেওয়া। তাই এমনক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে কথা বলে সঠিক ডোজ এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জেনে নিতে হবে |
- ইনজেকশনের জায়গায় কালশিটে দাগ পড়া: ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার সময়ে চামড়ার নিচের কোনো ছোটো রক্তনালিকায় আঘাত লাগলে তা থেকে ত্বকে কালশিটে দাগ পড়তে পারে। যারা নিয়মিত ইনসুলিন নেয় তাদের ইনজেকশন নেওয়ার পদ্ধতিতে ত্রুটি না থাকলেও, কখনো কখনো এমন কালশিটে হতে পারে। এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে ইনসুলিন দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে এবং রোগীকেও সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেবল সুঁইয়ের সাইজ পরিবর্তন করে অথবা প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার পরে ব্যবহৃত সুই পরিবর্তন করে এমন কালশিটে দাগ পড়া কমিয়ে আনা যায়।

- ইনজেকশনের জায়গা ফুলে যাওয়া: একই জায়গায় বারবার ইনসুলিন নেওয়া হলে জায়গাটি শক্ত হয়ে ফুলে যায়। একে মেডিকেলের ভাষায় ‘লাইপো-হাইপারট্রফি’ বা সংক্ষেপে ‘লাইপো’ বলা হয়। এমন ফোলা ইনসুলিন শোষণে ও সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়। তাই প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার জন্য ভিন্ন ভিন্ন জায়গা বেছে নিতে হবে। আগেরবার যেখানে ইনসুলিন নেওয়া হয়েছে সেটি থেকে অন্তত এক সেন্টিমিটার বা আধা ইঞ্চি দূরে পরের ইনজেকশনটি দেওয়া উচিত। বেশ কিছুদিন পার হওয়ার পরেও ‘লাইপো’ বা ফোলা সেরে না উঠলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও দেখুন: