ঔষধ কিভাবে কাজ করে

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ঔষধ কিভাবে কাজ করে – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত |

ঔষধ কিভাবে কাজ করে

 

ঔষধ কিভাবে কাজ করে

 

ঔষধ সাধারণত মুখে খাওয়ার মাধ্যমে অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ঔষধ মুখে খাওয়ার পর পাকস্থলীর মধ্য দিয়ে অন্ত্রে প্রবেশ করে। সেখানে এগুলো বিশোষিত হয়ে রক্তের মধ্যে মিশে যায় এবং দেহের যে সমস্ত অংশে রক্তের সরবরাহ আছে সেখানে ঔষধ বহন করে নিয়ে যায়।

যে সব ঔষধ ইনজেকশন হিসেবে দেওয়া হয় সেগুলো সরাসরি রক্ত স্রোত বা ব্লাড স্ট্রীমে মিশে। এজন্য ইনজেকশন তাড়াতাড়ি কাজ করে। ঔষধ শুধুমাত্র দেহের একটি অংশে কাজ করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলেও রক্তস্রোত এই ঔষধকে দেহের অনেক অংশে নিয়ে যায়।

সেজন্য দেহের অন্যান্য অংশেও ঔষধ অযাচিতভাবে কাজ করতে পারে। যেমন: এসপিরিন- ইহা স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে ব্যথা উপসম করে। কিন্তু এটা আবার পাকস্থলীর ঝিল্লীতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে (যা ক্ষতিকর হতে পারে), তাছাড়া এসপিরিন সন্ধির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে (যা উপকারী হতে পারে)।

এ ধরনের ফলাফলকে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট বলা হয়। এছাড়াও এসপিরিন রক্তকে পাতলা করে বলে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের দেওয়া হয়। দেহে ঔষধের কাজ বিভিন্ন রকম হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন ঔষধের ভিন্ন ভিন্ন কাজ রয়েছে। এগুলোর কিছু কিছু নীচে বর্ণনা করা হলো:

১। যে সমস্ত ঔষধ রোগ জীবানুকে ধ্বংস করে। যেমন-

এন্টিবায়োটিক- যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। পেনিসিলিন, এমপিসিলিন, এমক্সাসিলিন, কোট্রাইমোক্সাজল, টেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক জাতীয় ঔষধ। এছাড়াও new generation এর আরো অনেক antibiotics আছে।
এন্টিপ্যারাসাইটিক- যা পরজীবিকে আক্রমণ ও ধ্বংস করে। যেমন, বিভিন্ন ধরনের কৃমি হলো পরজীবি। এলবেনডাজল, মেবেনডাজল, লিভামিসল ইত্যাদি কৃমিনাশক ঔষধ

২। যে সমস্ত ঔষধ কোনো অঙ্গ বা তন্ত্রের উপর কাজ করে। যেমন-

স্নায়ুতন্ত্রের উপর: উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় প্রশান্তিদায়ক বা স্নায়ুর উত্তেজনা শান্তকারক ঔষধ (Tranquilizer/Sedative), যেমন- ডায়াজিপাম। ব্যথানাশক ঔষধ (Analgesic), যেমন- প্যারাসিটামল, এসপিরিন, ডিসপিরিন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম, হাইওসিন বিউটাইল ব্রোমাইড ইত্যাদি।

জ্বর উপসমকারী ঔষধ (Antipyretic), যেমন- প্যারাসিটামল। অনুভূতিনাশক ঔষধ (Anaesthetic), যেমন-লিগনোকেইন (Lignocaine) ইত্যাদি।

জরায়ুর উপর: প্রসবের পর রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু ঔষধ জরায়ুর মাংসপেশীর সংকোচন বাড়িয়ে দেয়। যেমন-অক্সিটোসিন, আরগোমেট্রিন।

ফুসফুসের উপর: হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু ঔষধ ব্যবহার করা হয়। এ ঔষধ ফুসফুসের বাতাস প্রবেশের পথকে প্রসারিত/বড় করে দেয়। এগুলোকে ব্রংকোডাইলেটর (Bronchodilator) বলা হয় যেমন- সালবিউটামল, থিওফাইলিন ইত্যাদি।

৩। যে সমস্ত ঔষধ খাদ্যের সম্পূরক হিসেবে কাজ করে

এসব ঔষধ খাদ্যের অত্যাবশ্যকীয় অংশ যোগান দেয় যখন কোনো ব্যক্তি খাদ্যের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাচ্ছে না অথবা তা শরীরে বিশোষিত (Absorption) হচ্ছে না। যেমন: ভিটামিন-এ, আয়রন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।

৪। যে সমস্ত ঔষধ দেহের বিভিন্ন অংশে রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ ঠিক করে

যেমন- এন্টাসিড, খাবার স্যালাইন ইত্যাদি। খাবার স্যালাইন একজন রোগীর ডায়রিয়াজনিত কারণে নির্গত পানি ও লবনের অভাব পূরণ করে।

রোগ/উপসর্গ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ঔষধের পরিচিত:

ঔষধ কিভাবে কাজ করে

ড্রাগ স্টোরেজ বা ঔষধ সংরক্ষণ

ক্লিনিক বা বাসায় যেখানেই হোক না কেন, ঔষধের সংরক্ষণ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আধুনিক সময়ে মডেল ফার্মেসীগুলোতে ঔষধ সংরক্ষণ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। সেই ঔষধ আমাদেরকে সেবাদান কেন্দ্রে কিংবা বাসাবাড়িতে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়।

এ সকল জায়গায় বেশি তাপ, বাতাস, আলো এবং ময়েশ্চার ওষুধকে নষ্ট করতে পারে। তাপ ও ময়েশ্চারে ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল জাতীয় ঔষধ সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। গুঁড়ো হয়ে যেতে পারে ওষুধ। সেই ওষুধ খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। আবার তরল ইঞ্জেকশন বা সিরাপ একবার সেবনের পর বেশিদিন রাখা উচিৎ নয়।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ইনসুলিন ও লিকুইড অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে বেশি সাবধানতা নেওয়া উচিত। যেমন, ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সাধারণত ৩০দিন পর্যন্ত ঠিক থাকে ইনসুলিন। তাই এ ধরনের ঔষধকে ফ্রিজে রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আরো কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলা যায়, যেমন:

  • ওষুধের খাপ থেকে ওষুধ খুলে রাখা যাবে না।
  • ঠাণ্ডা এবং শুকনো জায়গায় রাখতে হবে ওষুধ। ড্রেসার ড্রয়ার কিংবা কিচেন ক্যাবিনেটে রাখা যেতে পারে ওষুধ। স্টোরেজ বক্স বা তাকে রাখা যেতে পারে ওষুধ। না হলে মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে ওষুধ |
  • তবে, আগুন, স্টোভ, সিঙ্ক এবং গরম কোনো সরঞ্জাম থেকে দূরে রাখতে হবে
  • ওষুধের বোতল থেকে তুলোর বল বের করে নিতে হবে। কারণ, এই তুলো থেকে ময়েশ্চার জন্ম নিতে পারে। প্লাস্টিকের ব্যাগে ওষুধ রাখা যাবে না। রাখলে ওষুধের প্রভাব কমে যেতে পারে।
  • একটি পাত্রে অনেক ওষুধ একসঙ্গে না রাখাই উত্তম। অন্যথায় মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই বদলে যেতে পারে ওষুধের রং, গন্ধ। শিশুদের নাগাল থেকে দূরে রাখতে হবে ওষুধ।

আরও দেখুন:

Leave a Comment