আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ঔষধ প্রদান করা – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত | প্রাত্যহিক জীবনে আমরা সবাই কম বেশি রোগ-ব্যাধির চিকিৎসার সাথে পরিচিত। আমরা অসুস্থ হলে বা সুস্থ থাকার জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। ডাক্তার তখন আমাদের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে পথ্য – ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকেন। প্রায় প্রতিটি মানুষই নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে ঔষধ সেবন করে থাকে।
ঔষধ প্রদান করা

আমরা আমাদের বাসা-বাড়িতেও পরিবারের সদস্যদের অনেক সময় শারীরিক নানা অসুবিধার কারণে ঔষধ নিতে দেখি। আবার একজন বয়োজ্যেষ্ঠ অসুস্থ ব্যক্তি যিনি নিজে নিজে ঔষধ নিতে পারেন না, তাকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিয়মমাফিক ঔষধ খাওয়ানো একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের প্রধানতম দায়িত্ব।
এ কারণে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানকে ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী রোগীকে মুখে ঔষধ খাওয়ানোর জন্য এ সংক্রান্ত কিছু তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক।
ঔষধ বা ড্রাগ:
যে সকল দ্রব্য রোগ নির্ণয়, আরোগ্য লাভ, উপশম, প্রতিকার কিংবা প্রতিরোধ প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং যা মানবদেহের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করতে পারে তাকে ঔষধ বলা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঔষধ এমন দ্রব্য যার আরোগ্য এবং প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে অথবা যা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে; Drug (ড্রাগ বা ঔষধ) হচ্ছে এমন একটা agent যেটিকে Diagnosis (ডায়াগনোসিস), Prevention (প্রিভেনশন) এবং Treatment (ট্রিটমেন্ট)করার কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এখানে Diagnosis মানে হচ্ছে কোনো রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বা Reagent ব্যবহার করা হয়। Prevention মানে শরীরে যাতে কোনো রোগ আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য আগে থেকে শরীরকে প্রস্তুত করে রাখা।
যেমন Vaccine বা টিকা হচ্ছে এক ধরনের ঔষধ যেটি ব্যবহার করলে শরীরে ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট রোগ সাধারণত আক্রমণ করতে পারে না। W Treatment মানে যদি কেউ রোগাক্রান্ত হয় তবে সেই রোগকে নিরাময় করার জন্য ঔষধ ব্যবহার করা।
বিভিন্ন tings ধরনের Antibiotic আছে যেগুলো treatment এর কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই বলা যায় ঔষধ হতে পারে থেরাপিউটিক বা রোগনিরাময়কারী, প্রোফাইলেকটিক বা প্রতিরোধমূলক এবং ডায়াগনস্টিক বা রোগ নিৰ্ণয়মূলক |
ঔষধ বিজ্ঞানের কতিপয় টার্ম / পরিভাষা:
ফার্মাকোলজি:
বিজ্ঞানের যে শাখায় একটি ঔষধের উৎস থেকে শুরু করে এটি মানব দেহের উপর যে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া করে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে “ফার্মাকোলজি” বলে। ফার্মাকোলজি’র দু’টি প্রধান শাখা হলো- ফার্মাকোকাইনেটিকস ও ফার্মাকোডাইনামিক |
ফার্মাকোকাইনেটিকস:
ফার্মাকোলজির যে শাখায় ঔষধের শোষণ, বন্টন, বিপাক এবং নিষ্কাশন নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে “ফার্মাকোকাইনেটিকস” বলে।
ফার্মাকোডাইনামিক:
ফার্মাকোলজির যে শাখায় দেহের উপর ঔষধ বা রাসায়নিক পদার্থের ক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়, তাকে “ফার্মাকোডাইনামিক” বলে।
ক্লিনিকাল ফার্মাকোলজি:
চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে শাখা জীব ও মানব দেহের উপর চিকিৎসার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে।
নিউরোফার্মাকোলজি:
যে শাখা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতার উপর ঔষধের প্রভাব সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
সাইকোফার্মাকোলজি:
যে শাখা মস্তিস্কের উপর ঔষধের ক্রিয়া ও এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ, আচরণগত পার্থক্য নির্ণয় ও শারীরতাত্বিক প্রভাব পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
পোসোলজি:
যে শাখা কিভাবে ঔষধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয় সে সম্পর্কিত জ্ঞান (নির্ভর করে রোগীর বয়স, ওজন, লিঙ্গ, আবহাওয়া ইত্যাদির উপর) নিয়ে আলোচনা করে।
ফার্মাকোগনসি:
যে শাখা ভেষজ গুনাগুণ সম্পনড়ব উদ্ভিদ বা প্রাণীজ পদার্থ থেকে চিকিৎসাগত দ্রব্যাদির আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, সুষ্ঠু বন্টন ও বিতরণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
ফার্মাকোজেনেটিক্স:
যে শাখা বিভিন্ন জাত, বিভাগ, বর্ণ, তারতম্য ভেদে ঔষধের প্রভাবে পার্থক্য নিরুপণ করা এবং এগুলোর উপর ভিত্তি করে সঠিক পরিমানের ও সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়াযুক্ত ঔষধ নির্বাচন করা নিয়ে আলোচনা করে।
ফার্মাকোজেনোমিক্স:
যে শাখা ঔষধ প্রযুক্তিতে জিন প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করে এবং এই সম্পর্কিত বিদ্যমান ঔষধের গুনাবলি এবং নতুন ঔষধ আবিস্কারের নিমিত্তে গবেষণা করে।
বিভিন্ন প্রকার ঔষধ:
ঔষধ বা ড্রাগকে তাদের উৎস, কার্যকারিতার ধরন, ওষধি ক্রিয়া ও গুণাগুণ প্রভৃতি নানা শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। উৎসের উপর ভিত্তি করে ঔষধকে নিম্নোক্ত ৭টি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
১. প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: ভেষজ, উদ্ভিজ্জ, সামুদ্রিক ও খনিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ।
২. রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: এ সকল ড্রাগের কিছু অংশ প্রাকৃতিক ও কিছু অংশ রাসায়নিক উপায়ে তৈরি হয়। যেমন: স্টেরয়েডীয় ড্রাগ।
৩. রাসায়নিকভাবে উৎপাদিত ড্রাগ
৪. প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমন: হরমোন ও এনজাইম বা উৎসেচক।
৫. অণুজীব উৎস হতে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমন: এন্টিবায়োটিক।
৬. জীবপ্রযুক্তি ও জীনপ্রকৌশলের মাধ্যমে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমন: হাইব্রিডোমা টেকনিক।
৭. তেজস্ক্রিয় বস্তুর মাধ্যমে প্রাপ্ত ড্রাগ: যেমন: Stereotactic Body Radiation থেরপী, Potassium Iodide (K1) ইত্যাদি।
আরেক ধরনের মুখ্য শ্রেণিবিভাগ হলো-
- সিনথেটিক বা রাসায়নিক উপায়ে তৈরি ড্রাগ
- জৈবলব্ধ উপাদান যেমন- রিকম্বিনেন্ট প্রোটিন, ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক, স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি।

কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে ঔষধকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-
- এন্টিপাইরেটিকস: এগুলো জ্বর (পাইরেক্সিয়া বা পাইরেসিস) কমায় ।
- এনালজেসিক: এরা বেদনা বা ব্যথার উপশম করে (ব্যথানাশক)।
- এন্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগ: ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়
- এন্টিবায়োটিক: জীবাণুর বৃদ্ধি রোধ করে।
- এন্টিসেপটিক: পোড়া, কাটা কিংবা ক্ষতের আশেপাশে জীবাণুর বৃদ্ধি বন্ধ করে।
- মুড স্ট্যাবিলাইজার: লিথিয়াম এবং ভ্যালপ্রোমাইড এ কাজ করে।
- এন্টি স্পাজমোডিক: স্পাজম বা পেট ব্যথা কমায়।
- হরমোন রিপ্লেসমেন্টস: প্রিমারিন। হরমোনের স্বল্পতা দূরীকরনে ব্যবহৃত হয়।
- এন্টিহেলমেনথিক: এগুলো কৃমিনাশক ঔষধ।
আরও দেখুন: