আজকে আমরা কর্মক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর পেশেন্ট কেয়ারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অংশের অন্তর্গত।

কর্মক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বলতে সাধারণ কিছু কর্যক্রমকে বোঝায় যার মধ্যে রয়েছে গ্লাভস পরা, চোখের সুরক্ষা পরা, ভালো সরঞ্জাম ব্যবহার করা, কোনো কিছু ছিটকে পড়লে তা পরিষ্কার করা, প্রাথমিক চিকিৎসা কিট ব্যবহার করতে পারা ইত্যাদি। তবে মনে রাখতে হবে যে, এগুলো জানার মধ্যেই শুধু সতর্কতামুলক ব্যবস্থাগুলো সীমাবদ্ধ নয়। এর সাথে আরও কিছু বিষয় জড়িত।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার সুবিধা
যখন এক দল কর্মীবাহিনী সত্যিকার অর্থে কাজে নিবেদিত হয় এবং একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরির লক্ষে একত্রিত হয়, তখন এটি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের আবাত হ্রাস এবং অসুস্থতা নিরসনে অবদান রাখা এবং অগণিত সুবিধা প্রদান করে থাকে।
কর্মক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় করণীয়
একটি নিরাপদ কাজের পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করার জন্য সমস্ত কর্মচারীদের দ্বারা অনুসরণ করা যেতে পারে এমন কিছু নিরাপত্তামুলক করণীয় রয়েছে। যদিও নিম্নের বিষয়গুলোই একমাত্র করণীয় নয়, বরং সেবাদানকারীরা যাতে তাদের কর্মক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে কাজ করতে পারে তার মধ্যে এগুলোই মূল মৌলিক আদর্শগুলোর অন্যতম। যেমন:

১। সর্বদা অনিরাপদ অবস্থার রিপোর্ট করা:
কখনও কখনও, কর্মীরা নিজের বা অন্য কেউ সমস্যায় পড়ার স্তরে তাদের ঊর্ধ্বতনদের সাথে নির্দিষ্ট ঝুঁকির বিষয় এবং বিপদগুলো জানাতে দ্বিধা বোধ করতে পারে। এটি নিরাপদ কাজের পরিবেশের জন্য অনুকূল নয়। কারণ এটি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বা আঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই কর্মীকে অন্যান্য সহকর্মীদের এবং নিজেদের রক্ষায় সাহায্য করার জন্য অবিলম্বে ঝুঁকির বিষয়গুলো রিপোর্ট করতে হবে। একবার এই সমস্যা চিহ্নিত হয়ে গেলে, দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরবর্তী ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
২। ওয়ার্কস্টেশন বা কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার রাখা:
সেবাদানকারীরা তাদের ওয়ার্কস্টেশনের কাছাকাছি অপ্রয়োজনীয় জিনিস থাকলে অথবা ওয়ার্কস্টেশনে কোনো কিছু পড়ে থাকলে তা অবশ্যই সর্বদা পরিষ্কার করবে এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে মিলে কাজ করা লাগলে সেই এলাকাটিকে পুঙ্খানুপুনভাবে স্যানিটাইজ করতে হবে।
৩। প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) পরিধান করা:
কাজের সময় কর্মীদের সর্বদা প্রয়োজনীয় ব্যক্তিত্ত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) পরা অতি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায়শই কর্মীরা নির্দিষ্ট গিপিই পরতে ভুলে যান, যেমন প্রতিরক্ষামূলক গগলস, হেয়ার নেট ইত্যাদি। কারণ তারা মনে করে যে এটি ছাড়াই তারা দ্রুত কাজটি শেষ করতে পারবে। কর্মীদের নিরাপদ রাখতে এবং তাদের আঘাত বা অনুস্থতা থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যক্তি সুরক্ষামুলক সরঞ্জামগুলো দেওয়া হয়, তাই সর্বদা তাদের কাজের জন্য নির্ধারিত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE) যথাযথভাবে পরে নিতে হবে।

৪। কাজের ফাঁকে বিরতি নেয়াঃ
কর্মস্থলে দায়বদ্ধতার এবং অতিরিক্ত কাজ করার কারণে কর্মীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই কিছু কিছু কাজ শেষ করার আগে কর্মীদের বিশ্রাম নিয়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজে ফেরার জন্য মাঝে মাঝে বিরতি নেয়া উচিত। কাজ করতে করতে ক্লান্ত হলে কর্মীরা একটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েন এবং হাতের কাজটিতে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারে না, এর ফলে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৫। ধারাবাহিক পদক্ষেপগুলো এড়িয়ে না যাওয়া:
কখনও কখনও কর্মীরা একটি কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করে । এতে তাদের কাজের ধারাবাহিকতার বিচ্যুতি ঘটে। এসময় দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সঠিক উপায়ে কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার ভুলে যেতে পারে। এটি যে কোনো মূল্যে এড়ানো উচিত।
৬। নতুন কর্ম পদ্ধতির সম্পর্কে ওয়াকিবহাল (Up-to-Date) থাকা:
কর্মক্ষেত্রে কোনো নতুন পদ্ধতি বা নতুন সরঞ্জামাদি যুক্ত হলে কর্মীদের সেই ব্যাপারে সর্বদা সচেতন এবং ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। সম্ভাব্য দুৰ্ঘটনা এড়াতে কর্মীদের কী করা দরকার সে সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা প্রদান করা আবশ্যক। কোনো প্রশ্ন বা কিছু জানার থাকলে সুপারভাইজারকে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে।

৭। সঠিক দেহ ভঙ্গি (Body Posture) বজায় রাখা:
সঠিক দেহ ভঙ্গি বজায় রেখে কাজগুলো সম্পাদন করা কর্মীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভারি জিনিস তোলা, এমনকি কম্পিউটারে বসে কাজ করার ক্ষেত্রে এই নিরাপত্তার উপদেশগুলো মেনে চলা উচিত। সঠিক দেহ ভঙ্গি বজায় রেখে কাজ করলে ঘাড়, পিঠ বা কাঁধে ব্যথাসহ সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়।
৮। নতুন কর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করা:
প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণের উচিত নতুন কর্মীদের সঠিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার নির্দেশনা দেওয়া। উক্ত সংস্থার নিরাপত্তা নিয়ম এবং এর মানদণ্ড সম্পর্কে অবহিত করলে কর্মস্থলের নিরাপত্তার ভীত আরো শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
আরও দেখুনঃ
3 thoughts on “কর্মক্ষেত্রে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা”