আজকে আমরা কর্মক্ষেত্রে আপদ (হ্যাজার্ড) সনাক্তকরণ সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর পেশেন্ট কেয়ারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অংশের অন্তর্গত।

কর্মক্ষেত্রে আপদ (হ্যাজার্ড) সনাক্তকর
আপদ বা হ্যাজার্ড:
খুব সহজভাবে বলা যায় যে, যার মাধ্যমে জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ বা পরিবেশের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে সেটিই হল আপদ। যেমন: আগুন, বিদ্যুৎ, এসিড ইত্যাদি আমাদের উপকারে ব্যবহার হলেও হঠাৎ করে জীবন, স্বাস্থ্য, সম্পদ বা পরিবেশের ক্ষতি করে বসতে পারে। তাই এদেরকে আপদ বা হ্যাজার্ড বলা হয়। অতএব হ্যাজার্ড হলো, যখন কোনো কিছু বা কোনো বিষয় কোনো ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে বা ক্ষতির কারণ হয়। কোনো বিষয় কোনো সম্পদের পরিবেশের ক্ষতি করে বা ক্ষতির কারণ হয়। উভয় আপদই ঘটতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে প্রধান প্রধান আপদ
কর্মক্ষেত্রসহ সকল জায়গায় মোটামোটিভাবে ৭ প্রকার আপদ লক্ষ করা যায়। যথা:
ক) বস্তুগত বা ফিজিক্যাল আপদ-
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট জড় বস্তু যেমন: ইট, পাথর, বালি, পেরেক, লৌহ খন্ডসহ যে কোনো কিছুই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই এগুলোকে বস্তুগত বা ফিজিক্যাল আপন বলে।
খ) রাসায়নিক আপদ-
যেকোনো রাসায়নিক পদার্থ বা রাসায়নিক বিক্রিয়া যেমন: এসিড, পেট্রোল, থিনার, আগুন এ সকল কিছুই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
গ) অনুজীব ও জীবাণু আপদ-
নোংরা স্থান ও বাসি পচা খাবারে বসবাসকারি অনুজীব যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যামিবা, এন্টামিবা, ভাইরাস এ সব কিছু মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটাতে পারে বিষায় এটি আপদ হিসাবে বিবেচিত। বিভিন্ন রোগ যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত ব্যক্তি তার কফ, শুঁচি, থুথু যেখানে সেখানে ফেললে রোগের জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পরে। ফলে পাশে বসা কোনো সুস্থ মানুষের নাক বা মুখ দিয়ে এ জীবানু শরীরে প্রবেশের ফলে রোগের বিস্তার ঘটতে পারে।
এ জীবাণু গুলো কোনো পৃষ্ঠের উপর যেমন: টেবিল, দরজার লক, যন্ত্রপাতির হাতল, টাকা প্রভৃতির উপর ২ ঘন্টা বা তার বেশি সময় পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। তাই রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি হাত দিয়ে তার নাক পরিষ্কার করে অথবা মুখে হাত দিয়ে হাঁচি ফেলে সেই হাতে যা স্পর্শ করবে তাতেই জীবাণু লেগে যাবে এবং সুস্থ শরীরে জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটবে।

ঘ) মনস্তাত্ত্বিক আপদ-
মানসিক চাপ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে বিধায় মানসিক চাপ মনস্তাত্বিক আপদ। প্রচন্ড কাজের চাপ, পারিবারিক অশান্তি বা পীড়নদায়ক পরিবেশ প্রভৃতি কারণে মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
ঙ) বিকির্ণ রশ্মি বা রেডিয়েশন আপদ-
ওয়েন্ডিং মেশিন থেকে এক ধরনের রশ্মি নির্গত হয় যা চোখের সাময়িক ক্ষতিসহ স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। ইহা বিকির্ণ রশ্মি বা রেডিয়েশন আপদের উদাহরণ। চ) নয়েজ ও ভাইরেশন – বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি, শীটমেটাল ওয়ার্কশপ এবং কলকারখানার যন্ত্রপাতি ও মেশিন থেকে প্রচন্ড শব্দ নির্গত হয়। এ শব্দ মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্রবণ শক্তিকে লোপ করতে পারে। আবার মনুষ্য সৃষ্ট গোলমাল হৈ চৈ হঠাৎ কোনো কর্মীকে অমনোযোগী করতে পারে যা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

ছ) আর্গোনোমিক হ্যাজার্ড
যখন শরীরের মাংশপেশী একই ধরনের পোঁচ পায় কিছু তা পুরণ হওয়ার মত সময় পায়না তখন সে স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যে পরিস্থিতি এমনটা তৈরি করে ভাই আর্গোনোমিক হ্যাজার্ড। যেমন সারাক্ষণ একইভাবে একই অবস্থানে কাজ করা। এই একই অবস্থানে কাজ করার দরুণ শরীরের মাংসপেশী ও হাড়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তাই এটি আর্গোনোমোকি হ্যাজার্ড। এই হ্যাজার্ডের ফলে মাংসপেশী, হাড়, ব্লাড ভেসেলস, নার্ভ ও অন্যান্য টিস্যুতে আঘাত ও ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং এ ক্ষতের কারণে ব্যথা হয় এমনকি স্থায়ী পঙ্গুও হতে পারে।
জ) যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক আপদ:
বিভিন্ন পাতি ও মেশিনারীর ঘূর্ণায়মান অংশের মাধ্যমে কর্মী আহত হতে পারে। তাই এগুলো আপদ। আবার বিদ্যুৎ একটি আপদ। কারণ বৈদ্যুতিক শক পেলে মানুষ আহত কিংবা মারা পর্যন্ত যেতে পারে।
আপদ নিয়ন্ত্রণ
আপদ নিয়ন্ত্রণ বলতে বিভিন্ন বস্তুগত বা ফিজিক্যাল, রাসায়নিক, জীবাণু, মনস্তাত্বিক, রেডিয়েশন ষ অথবা ভূকম্পন আপদ যেন দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থাকে বুঝায় ।
কর্মক্ষেত্রে আপদ নিয়ন্ত্রণের প্রধান প্রধান উপায়
আপদ নিয়ন্ত্রণের প্রধান প্রধান উপায়গুলো নিম্নরূপ-
১। আপদকে কর্মস্থল থেকে দূর করা।
২। আপদকে নিরাপদ বস্তু বা কৌশল দ্বারা প্রতিস্থাপন।
৩। প্রকোশলগত ব্যবস্থা- প্লান্ট, যন্ত্রপাতি, ভেন্টিলেশন পদ্ধতি অথবা কার্য প্রক্রিয়ার এমন ভাবে পরিবর্তন ঘটানো যাতে করে দুর্ঘটনা হ্রাস পায়।
৪। প্রশাসনিক নি- শ্রমিক কর্মীদের প্রম ঘন্টা পরিবর্তন, কাজের নীতি, কলা কৌশল ও অন্যান্য নিয়ম কানুন
৫। কর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
আরও দেখুনঃ
2 thoughts on “ কর্মক্ষেত্রে আপদ (হ্যাজার্ড) সনাক্তকরণ”