কেয়ারগিভার কোর্স ও পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনার ভবিষ্যৎ পেশা নির্বাচনের আগে কেয়ারগিভার কোর্স এবং তার পরে কেয়ার গিভার হিসেবে ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনাকে বিস্তারিত জানাতে চাই। বিশ্বব্যাপী বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে (বিশেষকরে ধনী বিশ্বের দেশগুলোতে)। বয়স্ক মানুষের দেখাশোনা করার জন্য আলাদা মানুষ প্রয়োজন পড়ছে। সেখানে ভালো বেতন দিয়ে এই খাতের লোক রাখছে। আমাদের দেশে আর্থিক সঙ্গতি বাড়ার কারণে, অনেকেই এই খাতে ভালো বেতন দিয়ে আলাদা লোক রাখার ইচ্ছে পেষান করছেন।

কেয়ারগিভার কোর্স ও পেশা

কেয়ারগিভার কোর্স ও পেশা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বর্তমান সময়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি পরিবার ও সমাজের মনোযোগ বাড়ছে, সংবেদনশীলতা বাড়ছে। এজন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দেখভাল করার জন্যও আলাদা লোকের চাহিদা বাড়ছে। সব মিলিয়ে কেয়ার গিভার পেশার লোকের চাহিদা উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে। আবার এই পেশাটি এমন যে তা অটোমেশন এর বিকল্প হবে না। তাই এই পেশাটি বেছে নিলে হঠাৎ বেকার হয়ে যাবার ঝুঁকিও কম। এজন্য এই পেশাটির প্রতি সবার আগ্রহী বাড়ছে। আজ সেজন্য বিস্তারিত জানাতে আমাদের এই আয়োজন।

কেয়ারগিভারের কাজ কি?

প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, বয়স্ক ব্যক্তির সেবা করা, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করাই কেয়ার গিভার এর কাজ। নিচে কেয়ার গিভারের কাজের পরিধি আলোচনা করা হল-

  • সেবাগ্রহীতাকে জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালে অথবা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া।
  • সেবাগ্রহীতার ব্যক্তিগত/অফিসিয়াল কাজ যেমন- ব্যাংকিং, লিগ্যাল ইত্যাদি কাজের জন্য সাহায্য করা।
  • সেবাগ্রহীতা শয্যাগত হলে এপাশ ওপাশ করানো বা ব্যায়াম করানো।
  • শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী সেবাগ্রহীতাকে সার্বক্ষণিক তদারকি ও সহচার্য প্রদান করা।
  • শ্বাস নালীতে খাদ্য বা পানীয় ঢুকে হঠাৎ শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়া, বার্ন, ইনজুরি এবং অন্যান্য ইমারজেন্সীতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা।
  • সেবাগ্রহীতাকে খাওয়ানো, গোসল করানো, ড্রেসিং, টয়লেটিং, সাজগোজ ইত্যাদি করানো।
  • সেবাগ্রহীতাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সময়মত ঔষধ ও পথ্যাদি খাওয়ানো।
  • সেবাগ্রহীতাকে ফিজিওথেরাপী প্রদান করা, ফিডিং টিউবে খাওয়ানো, নেবুলাইজ করা, অক্সিজেন দেয়া, ইনসুলিন দেয়া এবং প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাস প্রদান করা।
  • সেবাগ্রহীতাকে বিছানা/হুইল চেয়ার/গাড়ীতে উঠানামা করানো।
  • সেবাগ্রহীতাকে সার্বক্ষণিক সহচার্য প্রদান করা এবং তার যাবতীয় আদেশ নির্দেশ পালন করা।
  • সেবাগ্রহীতাকে হতাশায় শান্তনা দেয়া, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য ইমোশনাল সাপোর্ট প্রদান করা।
  • সেবাগ্রহীতার আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে সর্বদা যোগাযোগ রাখতে সহায়তা করা।
  • সেবাগ্রহীতার জন্য ক্যালরী হিসাব করে পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রী বাজার করা, রান্না করা ও পরিবেশন করা।
  • সেবাগ্রহীতার পালস, জ্বর, ব্লাড প্রেসার, ব্লাড সুগার, শ্বাস প্রশ্বাস ও অন্যান্য ভাইটাল সাইন মনিটর, রেকর্ড এবং রিপোর্ট করা।
  • সেবাগ্রহীতার হাউজকিপিং, হাউজক্লিনিং, লন্ড্রিসেবা।
  • সেবাগ্রহীতার বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমন করানো।

 

কেয়ারগিভারের অধিকার

 

কেয়ারগিভার কোর্স কী?

উপরে উল্লেখিত কেয়ার গিভারের দায়িত্বগুলো পালনের জন জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রটোকল এবং সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। প্রতিটি কাজ সেই প্রটোকল অনুযায়ী ধাপে ধাপে এবং সুনির্দিষ্ট উপায়ে করতে হয়। সুনির্দিষ্ট উপায়ে না করলে বা নিজের ইচ্ছেমত করার মাধ্যমে সেবা গ্রহীতার যদি কোন ক্ষতি হয়, তবে লাইসেন্স বাতিল থেকে শুরু করে আদালতের মাধ্যমে সাজা হতে পারে। তাই প্রতিটি কাজের সুনির্দিষ্ট উপায়ে পৌনঃপুনিক ভাবে করে নিজেকে দক্ষ করে তোলা প্রয়োজন। কেয়ারগিভার কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে সেভাবে গড়ে তোলা হয়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কেয়ারগিভার কোর্সের চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই দুটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত যেকোনো কেয়ার গিভার ইনিস্টিটিউটের আওতায় আপনি কেয়ারগিভার কোর্স করে পরীক্ষা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সার্টিফিকেট পেতে পারেন।

 

কেয়ারগিভারের অধিকার

 

কেয়ারগিভার কোর্সের সুবিধা:

কর্মসংস্থানের সুযোগ, পেশাদারী সুযোগ সুবিধা, পেশার নিরাপত্তা – ইত্যাদি বিবেচনায় কেয়ারগিভার কোর্সের নানামুখী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তার কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হল।

  • উচ্চ বেতনের এবং সম্মানজনক পেশা কেয়ার গিভার।
  • এই কোর্সের সার্টিফিকেট জাপান, কানাডা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে স্বীকৃত।
  • কেয়ার গিভার প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ আছে।
  • কোর্সটি মাত্র ছয় মাস, তাই দ্রুত শেষ করে সরাসরি চাকরিতে ঢোকা যায়।
  • বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, নার্সিং হোম, প্যারালাইসিস সেন্টার সমূহে চাকরির সুযোগ।
  • যোগ্য কেয়ার গিভারগণের বিভিন্ন কেয়ার গিভারস প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়ােগ প্রাপ্তির সুযোগ আছে।
  • সাধারণত কোর্স চলাকালে পার্ট টাইম চাকুরীর সুবিধা রয়েছে।
  • সেবা গ্রহীতাদের হোমকেয়ার প্রদানের মাধ্যমে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ রয়েছে।

 

কেয়ারগিভারের অধিকার

কোর্স শেষে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সরকারী/বেসরকারী হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, নার্সিং হোম, প্যারালাইসিস সেন্টার সমূহে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ আছে। শুরুর বেতন হতে পারে ১৫,০০০/- থেকে ২০,০০০/- টাকা। এরপর ভালো কাজ করলে দ্রুত বেতন বাড়বে। খুব দক্ষ হলে এবং ইংরেজিটা ভালো জানলে প্রথম সারীর বেসরকারী হাসপাতালে শুরুর বেতন ৩০ হাজার টাকা হতে পারে। এছাড়া তাছাড়া জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চাকরির বাজার ইতিমধ্যে সার্টিফায়েড কোয়াগিভারদের জন্য খুলে গেছে। সেখানে মাসে ১ লক্ষ টাকা থেকে ৩ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব।

 

কেয়ারগিভার কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা:

কমপক্ষে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা কেয়ারগিভার কোর্সটি করার সুযোগ পাবেন। তবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, মেডিকেল টেকনোলজি, ডিপ্লোমা নার্সিং, মিডওয়াইফারী, ফাষ্ট এইড প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ছাত্র/ছাত্রীদের দক্ষতা অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসাবে বিবেচ্য এবং অগ্রাধিকার পাবেন। এই কোর্সটির কোন বয়স সীমা নেই। অর্থাৎ যে কোন বয়সের ছেলে-মেয়েরা এ কোর্সটি করতে পারবেন।

 

কেয়ারগিভার কোর্সের সময় ও ফিস:

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এর অধীনে কেয়ারগিভার সার্টিফিকেট কোর্সের মোট মেয়াদ ৬ মাস। কোর্স ফিস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের মান, সুনাম ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। তবে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে মোটামুটি মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানে এই কোর্স করা যেতে পারে।

বছরের যে কোন সময়ে কেয়ারগিভার কোর্সটিতে ভর্তি হওয়া যায়। তবে যেহেতু বছরে দুবার রেজিস্ট্রেশন হয়, তাই সচরাচর প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে দুবার ভর্তি নিয়ে থাকে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কেয়ারগিভার চাকরি নিয়ে জাপান যাওয়ার সুযোগ:

বাংলাদেশ থেকে ইতোমধ্যেই জাপানে কেয়ার গিভার পাঠানো শুরু হয়েছে। জাপানে কেয়ার গিভারদের পেশার নূন্যতম বেতন মাসে ১ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে প্রার্থীকে কমপক্ষে এইচএসসি পাশ ও জাপানের বেসিক ভাষা ও সংস্কৃতি জানতে হয়।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment