আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জনস্বাস্থ্যনীতির ধারনা – যা জনস্বাস্থ্য এর প্রাথমিক ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত।
জনস্বাস্থ্যনীতির ধারনা

জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক ধরনের কাজ আছে যেগুলো একটি অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১। কোন কমিউনিটির সাস্থ্য সমস্যা নির্দিষ্ট করার জন্য জনগনের স্বস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
২। স্বাস্থ্য সমস্যা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ সমূহ নির্নয় ও অনুসন্ধান করা,
৩। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় সম্পর্কে জনগনকে জানানো, শিক্ষাদান এবং ক্ষমতায়ন করা
৪। স্বাস্থ্য সমস্যা নির্দিষ্টকরন ও সমাধানের জন্য জনগনের অংশগ্রহণ কার্যকর করা,
৫। ব্যক্তিগত ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়ক নীতিমালা প্রনয়ন করা,
৬। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী আইন-কানুন প্রয়োগ করা
৭। জনগনকে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংযুক্ত করা এবং অন্য কোনোভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া
সম্ভব না হলে তখন স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা প্রদান করা,
৮। জনস্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসেবার জন্য দক্ষ কর্মীবাহিনীর নিশ্চয়তা প্রদান করা,
৯। ব্যক্তগত ও গনভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার কার্যকারিতা, সহজলভ্যতা ও মানের মূল্যায়ন করা এবং
১০। বিভিন্ন গবেষনার মাধ্যমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অনুসন্ধান ও স্বাস্থ্য সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা।
অনস্বাস্থ্যের নিয়ামক সমূহঃ
১। সামাজিক ও অর্থনৈনিক পরিবেশ,
২। প্রাকৃতিক পরিবেশ,
৩। ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আচারন,
৪। শিক্ষা
৫। সামাজিক সহায়তা নেটওয়ার্ক,
৬। স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা ও
৭। জেন্ডার বা লিঙ্গ বৈষম্য
জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির উদ্দ্যেশ্য
১। সবার জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা; ২। সমতার ভিত্তিতে সেবা গ্রহীতা কেন্দ্রিক মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সহজ প্রাপ্যতা বৃদ্ধি ও বিস্তৃত করা; ৩। রোগ প্রতিরোধ ও সীমিতকরনের জন্য অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে সেরা গ্রহনে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবায় সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, বিভিন্ন এনজিও ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সরকারি খাতে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা এবং ব্যষ্টিক এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের ব্যাপারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকে। যথা-
১। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ২। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, ৩। নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদপ্তর ৪। ঔষধ প্রশাসন অধিनর
যে সব বিষয় নিয়ে কাজ করে
পুঁটি ও জনসংখ্যা মাতঃ সরকার সকল জনগণ বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করার লক্ষে স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়নে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসহ পরিবার পরিকল্পনার বর্তমান অবস্থা বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রবীণদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং শারীরিক, সামাজিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার ক্ষেত্রে টেকসই উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত (এইচএনপি) সেক্টরের মূল লক্ষ্য। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীনে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি, জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি এবং জাতীয় জনসংখ্যা নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এনজিওঃ স্বাস্থ, পুষ্টি ও পরিবার পরিকল্পনা সেবায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রে এনজিও সমূহের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তারা মূলত: পরিবার পরিকল্পনা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য অধিক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। সাম্প্রতিককালে এনজিওসমূহ তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়েছে এবং শহরে প্রাথমিক সেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কাজ করছে।

ঔষধ নীতিঃ
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত পুন; গঠনের ক্ষেত্রে ১৯৮২ সালে প্রণীত ঔষধ নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো ক্ষতিকর, মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় ঔষধ বাজার থেকে অপসারণ করা এবং স্বাস্থ্য সেবার সকল স্তরে প্রয়োজনীয় ঔষধ ন্যায্য মূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
অর্জনঃ
১। ১৯৮২ সালের জাতীয় ঔষধ নীতি সাফল্যজনকভাবে রূপায়নের ফলে বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিকাল খাতে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।
২। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) সমূহ অর্জনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু সূচক যেমন: শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, শিশু ও মায়েদের টীকা দেওয়া, ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জন সাধিত হয়েছে |
আরও দেখুন: