জীবানু সনাক্তকরণ

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জীবানু সনাক্তকরণ  – যা অনুজীববিদ্যা এবং এর প্রয়োগ এর অন্তর্ভুক্ত |

জীবানু সনাক্তকরণ

 

জীবানু সনাক্তকরণ

 

অণুবীক্ষণ যা (Microscope): অণুজীবগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। সুতরাং খালি চোখে জীবাণু সনাক্তকরণ বাস্তবসম্মত নয়। অণুজীবগুলোকে সনাক্তকরণের জন্য অণুবীক্ষণ যা (Microscope) ব্যবহৃত হয়। রোগের কারণ নিরূপণের জন্য রোগ জীবাণু সনাক্তকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোগের জীবাণু দেখে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা করতে হলে ক্ষুদ্রাকৃতির জীবাণুগুলোকে সঠিকভাবে সনাক্ত করার জন্য ৫০ থেকে ১০০গুল বড়করে দেখা দরকার। যান্ত্রিক গঠন ও বীক্ষণ ক্ষমতার (Magnification) ভিত্তিতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত।

যথা: সাধারণ অণুবীক্ষণ যন্ত্ৰ (Simple microscope), বীক্ষণ ক্ষমতা ১০ থেকে ২০ গুণ বড় যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Compound microscope), বীক্ষণ ক্ষমতা ২০ থেকে ১০০ গুণ বড় ও ইলেক্ট্রোন অণুবীক্ষণ যন্ত্র (Electron microscope), বীক্ষণ ক্ষমতা ২ লক্ষ গুণ পর্যন্ত বড়। সকল অণুবীক্ষণ যন্ত্রেই দুই ধরনের যন্ত্রাংশ রয়েছে-

ক) যান্ত্রিক অংশ Mechanical part

যে সমস্ত যন্ত্রাংশ অন্যান্য যন্ত্রাংশকে উঠা নামা ও নড়া চড়া করতে সাহায্যে করে সেগুলো যান্ত্রিক অংশ।

খ) দর্শন অংশ (Optical part):

যে সমস্ত যন্ত্রাংশের সাহায্যে দর্শনীয় ৰঘু ৰড়ও স্পষ্ট করে দেখার ব্যাপারে সহায়তা করে সেগুলো দর্শন অংশ।

জীবানু সনাক্তকরণ

অণুবীক্ষণ যন্ধের ব্যবহার

১) রোগের জীবাণু সনাক্ত করা- ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং অন্যান্য বিভিন্ন রোগের জীবাণু

২) শরীরের বিভিন্ন উপাদান পরীক্ষা- রক্ত, প্রস্রাব, পায়খানা ও অন্যান্য উপাদানসমূহ পরীক্ষা করে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, অনুচক্রিকার পরিমাণ নিরূপণ, কফ, কাশি ও পূজ পর্যবেক্ষণ

অণুবীক্ষণ যন্ত্রের ব্যবহারবিধি-

একটি পরজীবী নিরিক্ষণের প্রক্রিয়া নিচে বর্ণনা করা হল-

১) অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ব্যবহারযোগ্য কিছু কাচের স্লাইড (slide) সংগ্রহ করে সেগুলো বিশুদ্ধ পানি (Distilled water) ও রেক্টিফায়েড স্পিরিট বা ইথাইল এলকোহলের সাহায্যে জীবাণুমুক্ত করা;

২) জীবাণুমুক্ত স্লাইডে পরজীবী আক্রান্ত রোগীর পায়খানার পাওনা প্রদেশ সৃষ্টি করা;

ক) পায়খানার নমুনার সাথে সমানুপাতিক হারে ডিস্টিল্ড পানির মিশ্রন তৈরি করা;

খ) মিশ্রণটি দিয়ে স্লাইডের উপর পাতলা প্রলেপ বা Smear তৈরি করা;

৩) নমুনাসহ স্লাইড অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মঞ্চে নির্ধারিত স্থানে মঞ্চ-ক্লিপ দিয়ে ভালোভাবে সেট করা;

৪) অণুবিক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ (Objectives) প্রথমে অল্পবীক্ষণ ক্ষমতা সম্পন্ন অভিলক্ষ সেট করে অভিনেত্রের (Eye piece) সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বেশি বীক্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন অভিলক্ষ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা

৫) ফোকাস ঠিক করা (Adjustment of focus) – অভিনেত্রে (Eye piece) চোখ রেখে স্থুল সন্নিবেশক ক্রু (Coarse adjustment screw) ও সুক্ষ্ম সন্নিবেশক ক্রু (Micromere screw) ঘুড়িয়ে অভিলক্ষকে উঠা নামা করে স্লাইডে রক্ষিত নমুনা যাতে স্পষ্টভাবে দেখা যায় সে জন্য সঠিক অবস্থানে অভিলক্ষকে সেট করা;

৬) ফোকাস করা সঠিক হলে স্লাইডের মধ্যে কৃমির বাচ্চা অথবা কৃমির ডিম স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়;

৭) নমুনাটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আর যা কিছু দেখা যায় তার ফলাফল একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করা;

৮) পরিশেষে পর্যবেক্ষণের ফলাফল ও নমুনাসহ স্লাইডটিতে একটি কোড নং দিয়ে এমনভাবে সংরক্ষণ কর যাতে সহজেই বোঝা যায় যে স্লাইডটি কোনো রোগীর নমুনা দিয়ে তৈরি হয়েছিল;

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

৯) নির্ভুলভাবে পর্যবেক্ষণটি সম্পন্ন করার জন্য উপরের নিয়মে আরও কয়েকটি পর্যবেক্ষণ স্লাইড ও কাগজ তৈরির কাজ সম্পন্ন করা;

এভাবেই অনুবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে অণুজীব ও পরজীবীর উপস্থিতি নিরূপণ করা হয়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment