আজকে আমরা তাপমাত্রা পরিমাপের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অংশের অন্তর্গত।

তাপমাত্রা পরিমাপের উপায়
ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার ব্যবহার করে তাপমাত্রা পরিমাপের সাধারণত চারটি উপায় রয়েছে। যথা :
১. এক্সিলারি মেথড (বগলের নিচে)
২. ওরাল মেথড (মুখে)
৩. টিস্প্যানিক মেথড (কানে) ও
৪. রেকটাল মেথড (মলদ্বারে বা পায়ুপথে)।

ক্লিনিক্যাল ও ডিজিটাল থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি :
- প্রথমেই সাবান ও পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং গ্লাভস পরিধান করতে হবে।
- তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি একটি ট্রেতে সাজিয়ে নিতে হবে।
- ডিজিটাল অথবা গ্লাস থার্মোমিটারটি জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।
- রোগী যদি বসতে পারে তাহলে সোজা করে বসিয়ে নিতে হবে অথবা সুবিধাজনকভাবে অন্য কোনো
অবস্থানে রাখতে হবে। - রোগীকে তার মুখ খুলতে এবং জিহ্বা উঁচু করার জন্য বলতে হবে। রোগী যদি যোগাযোগ বা কোনো সহযোগীতা করতে না পারে তাহলে বিকল্প পন্থায় তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে যেমন: এক্সিলারি বাঁ রেকটাল তাপমাত্ৰা ।
- গ্লাস বা মার্কারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে সাবধানে ঝাঁকিয়ে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নামিয়ে নিয়ে রোগীর জিহ্বার নীচে অর্থাৎ জিভের গোড়ায় ডান বা বাম দিকে আস্তে করে রাখতে হবে। রোগীকে ঠোঁট বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে রোগী যেন থার্মোমিটারটি দাঁত দিয়ে কামড় না দেয়। যদি ডিজিটাল থার্মোমিটার হয় তাহলে স্টার্ট বাটন পুশ করতে হবে। এক্সিলারি তাপমাত্রা দেখার ক্ষেত্রে এক্সিলাতে এবং রেকটাল তাপমাত্রা দেখার ক্ষেত্রে রেকটাল থার্মোমিটার মলধারে প্রবেশ করাতে হবে। পায়ুপথে তাপমাত্রা পরিমাপের সময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ ইঞ্চি এবং বড়দের ক্ষেত্রে ১.৫ ইঞ্চি থার্মোমিটার পায়ুপথে প্রবেশ করাতে হবে। এক্ষেত্রে থার্মোমিটার প্রবেশ করানোর সময় কখনোই জোরে ধাক্কা দেওয়া যাবে না। পায়ুপথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি বেশি এবং এক্সিলারি তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কম থাকে।
- রিডিং কাউন্ট সম্পন্ন হলে ডিজিটাল থার্মোমিটারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপ দেওয়ার সাথে সাথে বের করে নিয়ে আসতে হবে। তবে গ্লাস বা মারকারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর থার্মোমিটারে তাপমাত্রা দেখে নিতে হবে।
- থার্মোমিটারটি হালকা পরম সাবান পানিতে ধুয়ে (কখনই অধিক গরম পানিতে নয়) জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে শুকনো করে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে।
- গ্লাভস খুলে ফেলে তা নির্ধারিতে বর্জ্য ধারকে রেখে হ্যান্ড ওয়াশ করে নিতে হবে।
- টেমপারেচার চার্টে তাপমাত্রা রেকর্ড করতে হবে।
আবার ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে রোগীর শরীরে ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্যে তাপমাত্রা মেপে নেয়া যায় খুব সহজেই।

টেম্পারেচার বা তাপমাত্রা চার্ট:
টেম্পারেচার বা তাপমাত্রা চার্ট হল এমন একটি চার্ট যা দেহের তাপমাত্রা নথিভুক্ত ও রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হয়। হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কাজ করতে গেলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত চার্টে তাপমাত্রা রেকর্ড করতে হয়। আবার হোম কেয়ার সেটিংসে প্রায়শই কেয়ারগিভার নিজেই এটি হুক করে বানিয়ে নিয়ে রেকর্ড করে।
টেম্পারেচার চার্ট প্রনয়ন:
টেম্পারেচার চার্ট প্রনয়নে কিছু বিষয়ের প্রতি নজর রাখা অবশ্যই বাঞ্জনীয়। টেম্পারেচার চার্টের সাধারণত দুই ধরনের তথ্য সম্বলিত অংশ থাকে। যথা: প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশ।

প্রথম অংশঃ
চার্টের প্রথম অংশের উপরিভাগে রোগীর সাধারণ তথ্য অর্থাৎ নাম, বয়স, লিঙ্গ, মাসের নাম, বেড নম্বর এবং চার্ট নম্বর থাকে। এটি খুব সহজেই রোগীকে সনাক্ত করতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয় অংশ:
দ্বিতীয় অংশে কিছু সারি ও কলাম এঁকে নিতে হয়। এখানে তারিখ, দিন, সময়, তাপমাত্রা ও মন্তব্যের ঘর থাকে। এখান থেকে কাঙ্ক্ষিত ফাইন্ডিংসটি মনিটর করা যায়।
নিম্নে একটি টেমপারেচার চার্টের নমুনা দেওয়া হল:

দিনে যদি ২ এর অধিক বার তাপমাত্রা দেখা হয় তাহলে প্রয়োজন মত সময় ও তাপমাত্রার কলাম বাড়িয়ে নিতে হবে। উল্লেখযোগ্য যদি কোনো বিশেষ মন্তব্য থাকে তাহলে তা নির্দিষ্ট ঘরে নোট করতে হবে।
থার্মোমিটার রক্ষণাবেক্ষণ
অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামাদির মতই থার্মোমিটার রক্ষণাবেক্ষণ একটি অবশ্য করণীয় কাজ। ব্যবহারের পর থার্মোমিটার সাবান মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে অবথা ৭০% আইসোপ্রোপ্রাইল এলকোহল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। থার্মোমিটারকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর বেশি তাপমাত্রায় রাখা যাবে না। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে এমন স্থানেও রাখা যাবে না। মার্কারী বাল্বটি সবসময় নিচের দিকে রাখতে হবে এবং থার্মোমিটারের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে নামিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও কাজ করার পূর্বে থার্মোমিটারটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি আছে কিনা তা চেক করে নিতে হবে এবং কাজ করার পর নির্দিষ্ট জায়গায় পরবর্তীতে ব্যবহার উপযোগী করে সংরক্ষণ করতে হবে। বাসাবাড়িতে থার্মোমিটার অবশ্যই ছোট বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
আরও দেখুনঃ