আজকে আমরা নাড়ির গতি বা পালস রেট বা হার্টবিট সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অংশের অন্তর্গত।

নাড়ির গতি বা পালস রেট বা হার্টবিট
মানবদেহের হৃৎপিণ্ড একটি স্বয়ংক্রিয় পাম্পের মতো দেহাভ্যন্তরে সারাক্ষণ সংকোচন-প্রসারনের মাধ্যমে স্পন্দিত হয়। হৃৎপিণ্ডের এই স্পন্দনকে হৃদস্পন্দন বা হার্ট-বিট বলা হয়। এই হৃৎস্পন্দনের মাধ্যমেই হৃৎপিন্ড আমাদের শরীরে রক্ত প্রবাহিত করে। একজন সুস্থ মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রতি মিনিটে ৬০-৯০ বা ৬০-১০০ বার হয়। এটিকে হার্ট-বিটও বলা হয়।
বুকের বাম পার্শ্বে হৃৎপিণ্ডের এপেক্সের উপর স্টেথোস্কোপ নামক যন্ত্রের সাহায্যে এই শব্দ শোনা যায়। আবার হাতের কব্জির রেডিয়াল আর্টারি বা রেডিয়াল ধমনিতে হৃৎস্পন্দন অনুভব করা যায়। এটিকে তখন পাল্ল্স নামেও অভিহিত করা হয়। স্টেথোস্কোপের সাহায্যে হৃৎস্পন্দনের যে শব্দ শোনা যায় তাকে হার্টসাউন্ড বলে। হৃৎস্পন্দন বা হার্ট-বিটকে যখন প্রতি মিনিটে হাতের কব্জির রেডিয়াল আর্টারিতে আঙ্গুলের মাধ্যমে পালপেশন করে গণনা করা যায় তখন তাকে পালস রেট বলা হয়।
হৃদপিণ্ডের নিলয় সংকোচনের ফলে রক্তচাপের দরুন রক্ত সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ার সময় ধমনীর গায়ে যে চাপ দেয় তাকে হার্টবিট বা নাড়ির গতি বলে। পালস রেট হল হৃদপিণ্ড এক মিনিটে যে পরিমাণ বিট দেয় তার সংখ্যা। এই হৃদস্পন্দন আর্টারি বা ধমনীতে পাওয়া যায়। পুরুষদের তুলনায় নারীদের পালস রেট বেশী থাকে। আবার বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের হার্টবিট আরো বেশী হয়।

নরমাল পালস রেট:
একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের মিনিটে সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ বা ১০০ বার বিট দেয়। পালস দেখার সাইট: যেসব সাইটগুলোতে পালস দেখা হয় সেগুলো হল-
মানবদেহে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট স্থানে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে সহজেই পাল্স রেট মাপা যায়। স্থানানুযায়ী ঐ পাসের নামকরণ করা হয়। যেমন :
১। রেডিয়াল পাল্স:
বেইজ অফ থাম্ব (base of thumb) বা বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় এটি পাওয়া যায়।
২। টেম্পোরাল পাল্স:
সাইড অফ ফোরহেড (side of forehead) বা কপালের দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
৩। ক্যারোটিড পাল্স:
সাইড অফ নেক (side of neck) বা ঘাড়ের দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
৪। ব্র্যাকিয়াল পাল্স:
ইনার আস্পেক্ট অফ এলবো ( Inner aspect of elbow) অর্থাৎ, দুই কনুইয়ের ভিতরের দুই পাশে এটি পাওয়া যায়।
৫। ফিমোরাল পাল্স:
ইনার আস্পেক্ট অফ আপার থাই (Inner aspect of upper thigh) অর্থাৎ, থাইয়ের উপরে উরুর দুই সন্ধিস্থলে এটি পাওয়া যায়।
চিত্রে আরো কিছু স্থানের কথা উল্লেখ করা আছে যেখান থেকে আমরা পালপেশনের মাধ্যমে খুব সহজেই নাড়ির গতি পরিমাপ করতে পারি।

পাল্স রেট পরিমাপ করার পদ্ধতি:
উপরের চিত্রে প্রদর্শিত স্থানসমূহের যেকোনোটিতে পালপেশনের সাহায্যে পাল্স রেট পরিমাপ করা যায়। হাতের কব্জির (রিষ্ট) উপরে যে আর্টারি থাকে তাকে রেডিয়াল আর্টারি বলে। এই আর্টারি থেকেই সাধারণত পাল্স রেট পরিমাপ করা হয়। রেডিয়াল আর্টারি থেকে প্রাপ্ত পাল্স কে রেডিয়াল পাল্স বলা হয়ে থাকে। নিচে রেডিয়াল পাল্স পরিমাপ করার ধারাবাহিক পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো :
- রোগীকে আরামদায়ক অবস্থানে রাখতে হবে, অন্যথায় ভুল পরিমাপ আসতে পারে।
- রোগীর কব্জির হাড় এবং কব্জির বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় টেন্ডনের মধ্যে রেডীয়াল পাল্স অনুভব করতে হাতের দুইটি বা তিনটি আঙ্গুলের সাহায্যে আলতো চাপ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে তর্জনী, মধ্যমা এবং তৃতীয় আঙ্গুলের ডগা ব্যবহার করতে হবে। রেডিয়াল পালস উভয় কব্জিতে নেওয়া যেতে পারে।
- এমনভাবে পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগ করতে হবে যাতে করে প্রতিটি বীট অনুভব করা যায়। খুব জোরে চাপ দিলে রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে পাল্ল্স ঠিকমত নাও অনুভব হতে পারে।
- এভাবে নিয়ন্ত্রিত চাপ প্রয়োগ করে ঘড়ির দিকে লক্ষ রেখে এক মিনিট পর্যন্ত নাড়ির স্পন্দন গণনা করতে হবে। এই এক মিনিটে প্রাপ্ত ফলাফলটই হচ্ছে নাড়ির গতি।
- এবার পালস রেট রেকর্ড করতে হবে।

আবার পাল্স অক্সিমিটার যন্ত্রের সাহায্যে খুব সহজেই পাল্স রেটের পাশাপাশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন, ডিজিটাল মেশিনে মাপা যায়। রক্তে অক্সিজেনের শতকরা মাত্রাকেই মেডিকেলের ভাষায় বলা হয় অক্সিজেন স্যাচুরেশন। একজন সুস্থ ব্যক্তির রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা থাকা উচিৎ ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ। অক্সিজেন ৯০ এর নিচে নেমে গেলেই সমস্যা শুরু হয়। মাত্রা বেশি কমে গেলে রোগীকে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। পাস অক্সিমিটারের সাহায্যে পাস ও অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপার জন্য রোগীর আঙ্গুলে চিত্রের ন্যায় ডিজিটাল মেশিনটি লাগিয়ে দিতে হয়। তারপর সুইচ টিপে সেটি চালু করলে ১ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিসপ্লেতে পালস রেট ও অক্সিজেনের মাত্রা চলে আসে।
আরও দেখুনঃ