আজকের আলোচনার বিষয়ঃ ফ্যামিলি বা পরিবার কাউন্সেলিং। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর কমিউনিকেশন এন্ড কাউন্সেলিং অংশের অন্তর্গত।

ফ্যামিলি বা পরিবার কাউন্সেলিং
সমস্যা সমাধানের জন্য বয়স্ক ব্যক্তিটির তার পরিবারের সহায়তা লাগাটা খুবই স্বাভাবিক। কেয়ারপিতার একজন ব্যক্তি অথবা পুরো পরিবার, যেই সেটিংসেই কাজ করুক না কেনো, কাউন্সেলিং দক্ষতা খুবই কার্যকরী। ফ্যামিলি কাউন্সেলিং হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন কেয়ারগিভার একটি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্যদকে একজন ব্যক্তির নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

ফ্যামিলি কাউন্সেলিং
ফ্যামিলি কাউন্সেলিং-এর ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রাথমিকভাবে মাথায় রাখতে হয়ঃ
- কনসার্ন ক্যারিলি নেবার সম্পর্কে সম্মক ধারণা রাখা, এক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তি ও তার বিভিন্ন সমস্যাকে বুঝানো হয়েছে।
- বয়স্ক ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে সমগ্র পরিবারের ভারসম্য ও সামর্থ্য
- পরিবারের আকার ও সদস্য সংখ্যা
- প্রতিটি মেম্বারের ভূমিকা রাখার যায়গা
- পারিবারিক বন্ধন ও দায়িত্ববোধ

ফ্যামিলি কাউন্সেলিং-এর প্রকারভেদঃ
ফ্যামিলি কাউন্সেলিংকে নিম্নোক্ত কয়েকটি প্রকারে আলোচনা করা যেতে পারেঃ
ক। সম্মিলিত ফ্যামিলি কাউন্সেলিং:
এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের লক্ষে কেয়ারগিভার পরিবারের সকল সদস্যদেরকে নিয়ে একসাথে সেশন পরিচালনা করেন, যার মূল লক্ষ হচ্ছে বয়স্ক ব্যক্তির বিষয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উৎকণ্ঠা চিহ্নিত করা ও তা সমাধানের পথ খুঁজে বের করা।
খ। কনকারেন্ট বা সমসাময়িক ফ্যামিলি কাউন্সেলিং:
এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারকে সংশ্লিষ্ট সকল সদস্যদের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে বসতে হয় ।
গ। সহযোগিতামূলক কাউন্সেলিং:
এক্ষেত্রে পরিবারের ভিন্ন ভিন্ন সদস্য ভিন্ন ভিন্ন কেয়ারগিভারের সাথে কথা বলেন ও কেয়ারগিভাররা পরবর্তীতে একসাথে আলোচনা করেন। এ পদ্ধতিটি ছোট বা মাঝারী আকারের পরিবারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

ফ্যামিলি কাউন্সেলিং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
- পরিবারের সকল সদস্য ও বয়স্ক ব্যক্তির মধ্যে উন্নত যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপন করা।
- প্রতিটি সদস্যের স্বাধীনভাবে কিন্তু সমন্বয়ের সাথে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করা
- বয়স্ক ব্যক্তির জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো ভাগাভাগি করে নেয়া
- বয়স্ক ব্যক্তির বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মনমালিন্য দূর করা
- বয়স্ক ব্যক্তির বেদনা ও উদ্বীগ্নতা হ্রাস করে উন্নত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
বয়স্ক ব্যক্তি ও তার পরিবারকে কাউন্সেলিংয়ের নিয়মঃ
নিচে একটি সিনারিও উল্লেখ করা হলো যেখানে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় রোগীকে এবং তার পরিবারকে উপদেশ এবং বল প্রয়োগ করার ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর প্রতি আলোকপাত করা হয়েছেঃ
সকালের শিফটে হোম ভিজিটের সময় কেয়ারগিভার রাহেলা দেখলো যে, তার রোগী জনাব জলিল সাহেব রাতের ঔষুধ সেবন করেন নি এবং উনি মাঝে মাঝেই এমনটি করে থাকেন। যে কারণে রাহেলা একটু রুক্ষভাবে রোগীকে তার ছেলের বউয়ের সামনেই গজ গজ করে বলতে লাগলো, “আপনি রাতের ঔষুধ খান নি কেনো? বাসার লোকেরাও কি একটু খেয়াল করতে পারলোনা বিষয়টা?”
ছেলের বউ ‘আসলে খেয়াল করিনি’ এই কথা বলাতে রাহেলা বলেই ফেললো যে, “এই জন্যেই আপনাদেরকে বলেছি উনাকে আমাদের নার্সিং হোমে রাখতে। আমাদের ওখানে রাখলে এই সমস্যা আর হতোনা। প্রায়ই উনার রাতের ঔষধ খাওয়া হয়না”।
রাহেলা এই ভাবে ব্যাখ্যা করাতে রোগীর ছেলের বউ একটু বিব্রত বোধ করলো। তিনি অনেকটা বিরক্ত হয়েই বললেন যে, “দেখুন উনাকে নার্সিং হোমে না দেওয়ার পিছনে আমাদের অনেক পারিবারিক কারণ আছে। আর আমরা চেষ্টা করি উনাকে বাসাতেই দেখভাল করতে”। উপরের সিনারিও থেকে এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, আমাদের উল্লেখিত কেয়ারগিভার কাউন্সেলিং-এর কৌশলগুলো সম্পর্কে মূলত কিছুই জানেনা। যদি জানতো তাহলে সে অবশ্যই নিচের সহজ নিয়মগুলো অনুসরণ করতোঃ

কাউন্সেলিং-এর সময় যে সব বিষয় মনে রাখতে হবে (বিবেচ্য বিষয়)
ব্যক্তির সামর্থ্য এবং সীমাবদ্ধতা মেনে নেয়াঃ
কাউন্সেলরের উচিত সেবাগ্রহীতাদের সম্মান দেখানো এবং তার বোঝার সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে তাকে গুরুত্ব দেওয়া।
ব্যক্তির পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়াঃ
প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে গুরুত্ব দিতে হবে। সে যে অবস্থানেরই হোক না কেন ব্যক্তি হিসাবে তার যে সম্মান আছে সে সম্মান তাকে দিতে হবে।
গোপনীয়তা রক্ষা করা:
কাউন্সেলরকে গোপনীয়তা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। একজনের সমস্যা অন্যের কাছে কখনই প্রকাশ করা যাবে না।
ব্যক্তিগত পছন্দঃ
কাউন্সেলরের নিজস্ব মতামত, পছন্দ, অপছন্দ কখনও সেবাগ্রহীতার উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত না। সেবাগ্রহীতাদের সমস্ত তথ্য ভালোভাবে জানিয়ে তার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দকে যথাসম্ভব মূল্য দিতে হবে ।
ব্যক্তির অনুভূতির প্রতি সহমর্মী হোয়াঃ
কাউন্সেলরের এমন কিছু বলা বা করা উচিত হবে না যা সেবাগ্রহীতার মনে আঘাত করে। সেবাগ্রহীতাদের অনুভূতির প্রতি (বাচনিক ও অবাচনিকভাবে) সহানুভূতি প্রদর্শন করার চেষ্টা করতে হবে।
ব্যক্তিগত পক্ষপাত না করা:
সেবাগ্রহীতার ক্ষেত্রে কাউন্সেলরের কোনো রকম পক্ষপাতিত্ব করা উচিত নয়।

অনুশীলনঃ
এখন যেহেতু কাউন্সেলিং-এর বেসিক বা মৌলিক নিয়ম বা উপায়গুলোকে সম্পর্কে তুমি জেনেছো, জলিল সাহেবের চিত্রটা আরেকবার কল্পনা কর এবং নিচের প্রশ্নগুলো আলোকপাত কর:
- কেয়ারগিভার রাহেলা কিভাবে তার হোম ভিজিটের উক্ত ঘটনাটির আরো ভালো সূচনা করতে পারতো?
- জলিল সাহেবের সমস্যা সঠিকভাবে বুঝার জন্য কি ধরনের মন্তব্য বা প্রশ্ন করা যেতে পারতো?
- বাড়ির অন্য সদস্যদেরকে কিভাবে আরো ভালোভাবে সংযুক্ত করা যেতে পারতো?
- দৃশ্যপটে উদীত সমস্যাটির সম্ভাব্য বিকল্প সমাধান আর কি হতে পারতো?
আরও দেখুনঃ