আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পরিবেশ দূষণজনিত রোগ – যা জনস্বাস্থ্য এর প্রাথমিক ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত।
পরিবেশ দূষণজনিত রোগ

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ।বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখ বিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্রা ১৬ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেছে, শহরাঞ্চলে এই দূষণের মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে তারা বলছে, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে (সুত্রঃবিবিসি নিউজ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
পরিবেশ দূষনের প্রকারভেদঃ পরিবেশ দূষণের বেশ কয়েকটি ভাগ রয়েছে। যেমন বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, খাদ্য দূষণ ইত্যাদি। এর সবগুলোর ফলেই কোন না কোনভাবে মানুষবিভিন্ন রোগের শিকার হচ্ছে। এসব দূষনের ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি বা সমস্যাগুলো হয় তা নিন্মরুপঃ
১. শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত এবং স্নায়ুর ক্ষতি:
আমাদের দেশে সাধারণত দূষণের শিকার হয় দরিদ্র নারী এবং শিশুরা।কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করে, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে।
২. গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ক্ষতি:
দূষিত এলাকায় বসবাসের ফলে গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এসব এলাকার দূষিত বায়ু এবং পানির কারণে তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হয়।
৩. বায়ু দূষণে চোখ, শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি:
রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকার কারণে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ হয়। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়।

৪. ক্যান্সার ও হৃদরোগ:
দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে বা এরকম পরিবেশে কাজ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগের দেখা দিতে পারে। এমনকি সেটা মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে।
৫. পানি দূষনের ফলে সৃষ্ট রোগ:
পানিবাহিত রোগ সংক্রমণের মূল কারণ হলো দূষিত পানি, শিল্প কলকারখানার বর্জ্য দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা । এ দুষিত পানি মানব শরীরে প্রবেশ করে পানিবাহিত রোগ ছড়ায়। যেমন— ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগ, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস এবং হেপাটাইটিস ।কলেরাও একটি মারাত্মক রোগ। দূষিত জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে এ রোগ হয়।
পাতলা পায়খানার সঙ্গে প্রচুর বমি হয়। সলমনেলা টাইফি এবং প্যারাটাইফি নামক পানিবাহিত জীবাণুর কারণে যে রোগটি হয় তাকে টাইফয়েড বলে। জন্ডিস একটি পানিবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। এটি লিভারকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। জন্ডিসের ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৬. শব্দ দূষণে সৃষ্ট রোগ:
গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত শব্দ দূষনের কারণে হাইপার টেনশন, আলসার, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশে থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটির তৈরি হতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে ব্লাড প্রেশার, শ্বাসের সমস্যা এমনকি হজমের সমস্যার তৈরি হতে পারে।

৭. খাদ্য দূষণে সৃষ্ট রোগঃ
খাদ্য দূষণের কারণে অস্ত্রের নানা রোগ, লিভার, কিডনি বা পাকস্থলী কার্যকারিতা হারায়। গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ নানা সমস্যার তৈরি হয়। কখনো কখনো এসব কারণে ক্যান্সারেরও তৈরি হচ্ছে। শিশুরা ছোটবেলা থেকে এ ধরনের দুষিত খাবার খেলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় বা বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আরও দেখুন: