পানিতে ডোবা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পানিতে ডোবা – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।

পানিতে ডোবা

 

পানিতে ডোবা

 

বাংলাদেশে প্রতি বছর অনেক মানুষের মৃত্যু হয় পানিতে ডোবার কারণে। বিশেষ করে বন্যা প্রবণ এলকায় বন্যাকালীন সময়ে কোনো কোনো স্থানের শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডোবা।

আমাদের দেশে পানিতে ডোবার প্রচলিত প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে ব্যক্তিকে মাথায় তুলে বা হাত ধরে ঘুরানো যাতে করে পেটের পানি বেরিয়ে আসে। এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করার পর জীবনরক্ষাকারী জরুরি প্রথম কাজটি হচ্ছে মুখের ভেতর পরীক্ষা করে, শ্বাসনালি খুলে দিয়ে প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রাথমিক চিকিৎসক পারেন ডুবন্ত মানুষের জীবন বাচাতে।

পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ

পানিতে ডোবা ব্যক্তি যখন শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা চালায় তখন নাক মুখ দিয়ে পানি ঢুকে পাকস্থলি ও ফুসফুস পানিতে ভরে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা কিছুক্ষণ চললে বিপদাপন্ন ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা থাকে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

পানি থেকে উদ্ধার

কোনো ব্যক্তি পুকুর, জলাশয়, সমুদ্র বা নদীতে ডুবে গেলে তাকে উদ্ধারের জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে-

  • দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো
  • নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে লম্বা লাঠি, বাশ, গাছের ডাল, দড়ি, প্যাঁচানো শাড়ি, জামা কাপড় ইত্যাদির যে কোনোটির এক প্রান্ত শক্ত করে ধরে অপর প্রান্ত ডুবন্ত ব্যক্তির কাছে ছুঁড়ে দাও এবং তাকে ধরতে বল
  • অল্প পানিতে ডুবে গেল বা ডুবন্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে ভাসতে থাকলে, যদি তোমার সাঁতার জানা থাকে তাহলে দ্রুত বিপদাপন্ন ব্যক্তির কাছে যান। অল্প পানিতে ডুবলে তার কোমর ধরে তুল এবং বেশি পানিতে ভাসতে থাকলে তাকে চিৎ করে ধরে সাঁতার দিয়ে তীরে নিয়ে আস।

মনে রাখবে- ডুবন্ত ব্যক্তি যেন কখনোই তোমাকে জাপটে ধরতে না পারে। সে ক্ষেত্রে তুমি ও ডুবন্ত ব্যক্তি দু’জনেই ডুবে যেতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • নিজের নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করা
  • উদ্ধারের পর শ্বাসনালি পরিষ্কার করা ও শ্বাসনালি খুলে দেওয়া শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করা, প্রয়োজনে কৃত্রিম
  • শ্বাস ও সিপিআর দেওয়া
  • হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা।

প্রাথমিক চিকিৎসা

১। ব্যক্তিকে মাটিতে শুইয়ে দাও। সাড়া দেওয়ার পর্যায় পরীক্ষা কর। শ্বাসনালি খুলে দাও। শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা কর। তোমার সঙ্গী কাউকে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে বল।

২। যদি শ্বাস চালু না থাকে তাহলে জীবন রক্ষাকারী ৫টি প্রাথমিক ফুঁ দিন ।

৩। এরপর ৩০ বার বক্ষ চাপ ও ২ বার ফুঁ দাও। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না হলে ৩০:২ হারে সিপিআর প্রয়োগ করতে হবে। ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হলে কাশি দিবে অথবা চোখ খুলে তাকাবে বা নড়াচড়া করবে ও শ্বাস নিবে।

৪। ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাঁর ভিজা কাপড় চোপড় খুলে তাঁকে চাদর বা কম্বল দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য এ ব্যবস্থা জরুরি। ব্যক্তিকে রিকভারি পজিশনে রাখ। মনিটর কর-সাড়া দেওয়ার পর্যায়, পাল্স, শ্বাস চলাচল।

 

পানিতে ডোবা

 

সাবধানতা

আমাদের দেশে পানিতে ডুবে যাওয়া ব্যক্তিদের প্রচলিত ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞানসম্মত নয়। মাথায় তুলে ঘুরানো বা পা ধরে ঘুরোনোর ফলে পেট থেকে পানি বের হয়ে আসে ঠিকই কিন্তু তার চেয়ে বেশি জরুরি প্রচলিত
ব্যবস্থাপনায় শ্বাস-প্রশ্বাস চালু করা।

  • ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধারের সময় নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • ডুবন্ত ব্যক্তি যদি কোন তরল রাসায়নিক বা বর্জ্যের মধ্যে ডুবে থাকে তাহলে বিষাক্ত ধোঁয়া বের হতে
    পারে।
  • উদ্ধারের পরপরই জীবন রক্ষাকারী ফুঁ দাও।
  • জোর করে পেটের পানি বের করার প্রয়োজন নেই।
  • ব্যক্তি প্রাথমিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠলেও তাকে ডাক্তারের পরার্শ নিতে হবে। কারণ ফুসফুসে ঢুকে যাওয়া পানি থেকে ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment