আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বাংলাদেশে মৃত্যুহার – যা জনস্বাস্থ্য এর প্রাথমিক ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত।
বাংলাদেশে মৃত্যুহার

অসংক্রামক রোগে মৃত্যুঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)-২০২১ জরিপ মতে ২০২০ সালের চেয়ে দেশে ব্রেন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ব্রেন স্ট্রোকের পাশাপাশি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুও। ২০২০ সালে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন মারা গেছে।
২০১৯ সালে এ রোগে মারা যান ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন।মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর পাশাপাশি ২০২০ সালে ৮ হাজার ২৪৮ জন মারা গেছেন করোনাভাইরাসের কারণে। লিভার ক্যানসারেও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। ২০২০ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৯ হাজার ৮৫০ জন।
২০১৯ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ২১ হাজার ৩৭৪ জনের।“শুধু ধুমপানজনিত কারণে দেশে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে তিন শ মানুষের। এসব রোগের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও ব্যবস্থা না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়াবে।
৬ বৎসরের নীচের শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ শিশু প্রতি বছর রাতকানায় ভোগে এবং প্রায় ৩০,০০০ শিশু প্রতি বছর পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যায়, যাদের প্রায় অর্ধেকই আবার আমিষ শক্তি অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম বছরই মারা যায়।

মশাবাহিত রোগে মৃত্যু হার:
পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা যান ১৫৪ জন। (সূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ২০ আগষ্ট, ২০২১)।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু-আক্রন্ত হয়ে মৃত্যুর হার দশমিক ২ শতাংশেরও কম। মৃত্যুহারের দিক দিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু হার মোট মৃত্যুর প্রায় ৫ শতাংশ। যা সাধারণ মানুষের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুসংখ্যা শতকরা দশমিক ৫ শতাংশ। (সূত্রঃ বাসস রিপোর্ট, ২৫ আগষ্ট, ২০১৯)

অন্যান্য কারণে মৃত্যু সূচক
১। বাংলাদেশের স্থূল মৃত্যুহার হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে নবজাতক/শিশু মৃত্যুহার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এখনো আশঙ্কাজনক। প্রতি হাজারে মাতৃ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
২। বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৫০ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি মারা যাচ্ছেন। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে
আঘাতজনিত মৃত্যুর মধ্যে এটাই প্রধান কারণ।
৩। আর ১৮ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে প্রতিদিন ১৪ জন সড়কে প্রাণ হারাচ্ছে
৪। শিশুদের মধ্যে পানিতে ডুবে মরার হার সবচেয়ে বেশি (প্রতিদিন ৪০ জন)
৫। নয় বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। তবে ১০-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে আঘাতজনিত মৃত্যুর দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আত্মহত্যা।
৬। মাতৃ মৃত্যুর মাত্রা ১০০ জন্মের প্রায় ১ জন হয়েছে। (সূত্রঃ বাংলানিউজটোইয়েন্টিফোর.কম, 2012 )
আরও দেখুন: