আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মশাবাহিত রোগ – যা জনস্বাস্থ্য এর প্রাথমিক ধারণা এর অন্তর্ভুক্ত।
মশাবাহিত রোগ

পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রজাতির মশা রয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ১০০ টির মত প্রজাতি রোগ ছড়ায়।এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে মশা থেকে ২০টির মত রোগ ছড়ায়।পুরো পৃথিবীতে কীটপতঙ্গের আক্রমণে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যান, তাদের মধ্যে মশাবাহিত রোগে মারা যান সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ (সূত্রঃ বিবিসি বাংলা, ঢাকা, ২০ অগাস্ট ২০২১)।
মশাবাহিত রোগ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ২০শে অগাস্ট পালিত হয় বিশ্ব মশা দিবস। মশার একটিমাত্র কামড় একজন মানুষের জন্য মরণঘাতি হয়ে উঠতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী বহন করায় মশার কামড়ে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে (সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর, ২৮ আগষ্ট, ২০২১)।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত পাঁচটি রোগের কথা জানা যায়। যথা- ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জাপানিজ এনসেফালাইটিস। নিন্মে এই পাঁচটি মশাবাহিত রোগ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :
ম্যালেরিয়া
মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে পুরোনো রোগ। ম্যালেরিয়া রোগটি স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়। এ রোগটির জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম গোত্রভুক্ত কিছু পরজীবী। বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
কাইলেরিয়া
কিউলেক্স মশার দুটি প্রজাতি এবং ম্যানসোনিয়া মশার একটি প্রজাতির মাধ্যমে বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোপ হুড়ায়। ফাইলেরিয়া রোগে মানুষের হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে। একে স্থানীয়ভাৰে গোদ রোগও বলা হয়।

ডেঙ্গু
এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টি এবং অ্যালবোপিকটাস, মুলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ার। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। বাংলাদেশে সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বেড়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যথা হয়ে থাকে। তীব্র পেটে ব্যথাও হতে পারে। শরীরে বিশেষ করে মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা হয়। ক্ষরের ৪/৫ দিন পার হলে শরীরজুড়ে র্যাশ বা ঘামাচির মত লালচে দানা দেখা দেয়। সাথে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে।
চিকুনগুনিয়া
‘এডিস অ্যাজিস্টাই’ মশার কামড়ের মাধ্যমে শরীরে রোগের জীবাণু প্রবেশের দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণ চোখে পড়া শুরু হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, ত্বকের র্যাশ, বমিভাব ও বমি ইত্যাদি ছাড়াও শরীর ব্যথা, বিশেষত, হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া এর বিশেষ লক্ষণ। রোগ সেরে যাওয়ার পরও এই জোড়ের ব্যথা সপ্তাহ, মাস কিংবা বছরব্যাপী ভোগাতে পারে।
জাপানিজ এনসেফালাইটিস
“কিউলেক্স” নামক মশার মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ। যার প্রকোপ সবচাইতে বেশি এশিয়া মহাদেশে, বিশেষত জাপানে। এর উপসর্গ হল জ্বর ও মামাব্যথা। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আড়াইশ জনের মধ্যে একজনের দেখা দেয় পিঁচুনি, মানসিক ভারসাম্যহীনতা এবং ‘প্যারালাইসিস’ বা অসাড়তা ।
আরও দেখুন: