আজকে আমরা মানবদেহের তরল পদার্থ সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর বেসিক হিউমান বায়োলোজি ও এর প্রয়োগ অংশের অন্তর্গত।

মানবদেহের তরল পদার্থ
মানব দেহের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর তরল পদার্থ (Body Fluids) রয়েছে। মানবদেহের তরল পদার্থ (Fluids) মূলত দুইটি ভাগে বিন্যাস করা হয়-
আন্তঃকোষ তরল পদার্থ (Intracellular Fluids) –
মানবদেহের বিভিন্ন কোষের মধ্যস্থিত তরলকে আন্তঃকোষ তরল পদার্থ (Intracellular Fluids) বলে যা পদার্থ শরীরের মোট ওজনের ৪০%।
বহিঃকোষ তরল পদার্থ (Extracellular Fluids)-
দেহের বিভিন্ন কোষের বাইরে এই তরল পদার্থ থাকে। যা শরীরের মোট তরল পদার্থের শতকরা ২০% ভাগ। বহিঃকোষ তরল পদার্থ তিনটি ভাগে বিভক্ত –
ক) কোষসমূহের মধ্যবর্তী তরল পদার্থ (Interstitial Fluids),
খ) রক্তের তরল পদার্থ (Blood Plasma),
গ) ট্রান্সসেলুলার তরল পদার্থ (Transcellular Fluid) |
কোষসমূহের মধ্যবর্তী তরল পদার্থের উদাহরণ- ক্যাপিলারি ফ্লুইড

ট্রালসেলুলার তরল পদার্থের উদাহরণ:
ক) সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (Cerebrospinal Fluid); খ) সাইনোভিয়াল ফ্লুইড (Synovial Fluid); গ) পেরিটোনিয়াল ফ্লুইড (Peritoneal Fluid); ঘ) পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড (Pericardial Fluid); ঙ) ইন্ট্রাঅকুলার ফ্লুইড (intraocular Fluid) প্রভৃতি।

রক্তের তরল পদার্থ বা (Blood Plasma)-
এর পরিমাণ শরীরের মোট ওজনের ৫% বা প্রায় ৩ লিটার। এর কাজ বহন করা। বহিঃকোষ তরল পদার্থের সঙ্গে রক্তের তরল পদার্থের যে আদান-প্রদান চলে তা প্রত্যক্ষভাবে হয় না। প্লাজমার চাপ বা Hydrostatic Pressure থাকে বেশি। তাই প্রস্বেদন প্রক্রিয়া (Osmosis) দ্বারা এই আদান-প্রদান (Fluid Exchange) হয়ে থাকে। প্লাজমাতে প্রোটিন আছে, যা বহিঃকোষ তরল পদার্থের মধ্যে তা নেই। এই সব তরল পদার্থের অভাব হলে তা পানি দ্বারা পূর্ণ হয়।
তরল পদার্থের অভাব প্রকট হলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যেমন: কলেরা জনিত ডাইরিয়া হলে অথবা অতিরিক্ত রক্তপাত হলে মানুষের শরীরে তরল পদার্থের অভাব প্রকট হয়ে পরে। এক বা একাধিক টিস্যু দিয়ে তৈরি এবং একটা নির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম প্রাণিদেহের অংশবিশেষকে অঙ্গ (Organ) বলে।
অবস্থানভেদে মানবদেহে দুধরনের অঙ্গ আছে। বাহ্যিক অঙ্গ-চোখ, কান, নাক, হাত, পা, মাথা ইত্যাদি। আর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ- জীবদেহের ভিতরের অঙ্গগুলো যেমন- পাকস্থলী, ডিওডেনাম, ইলিয়াম, মলাশয়, হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, অগ্ন্যাশয়, প্লীহা, ফুসফুস, বৃক্ক, শুক্রাশয়, ডিম্বাশয় ইত্যাদি। পরিপাক, শ্বসন, রেচন, প্রজনন ইত্যাদি শরীরবৃত্তীয় কাজ করার জন্য প্রাণিদেহে কতগুলো অঙ্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন তন্ত্র গঠিত হয়। নিচে মানবদেহের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তন্ত্রের ধারণা দেওয়া হলো।

পরিপাক:
মানবদেহের কোষ গুলোকে সজীব এবং কার্যকর রাখার জন্য খাদ্য প্রয়োজন। কিন্তু অধিকাংশ খাদ্য জটিল এবং জৈব যৌগ অবস্থায় গ্রহণ করা হয় যা দেহের কোষগুলো সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। খাদ্যকে শোষণযোগ্য ও কোষ উপযোগী করতে হলে তাকে ভেঙে সহজ, সরল এবং তরল অবস্থায় রুপান্তর করাকে পরিপাক বলে। দেহ দুভাবে খাদ্য পরিপাক করে- যান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং রাসায়নিক প্ৰক্ৰিয়া।
যান্ত্রিক প্রক্রিয়া:
খাদ্যদ্রব্য মুখগহবরে দাঁতের সাহায্যে চিবানো হয়। প্রথমত চিবানোর ফলে খাদ্য ছোট ছোট টুকরায় পরিণত হয়। পাকস্থলি এবং অন্ত্রের মধ্যে এই টুকরা খাদ্যবস্তুগুলো মন্ডে পরিণত হয়।
রাসয়নিক প্রক্রিয়া:
রাসায়নিক প্রক্রিয়া পরিপাকের দ্বিতীয় ধাপ। পরিপাক রসের এনজাইম খাদ্যের রাসায়নিক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে জটিল উপাদানগুলো ভেঙে দেহের গ্রহণযোগ্য সরল উপাদানে পরিণত হয়।
আরও দেখুনঃ
1 thought on “মানবদেহের তরল পদার্থ”