আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় মানসিক স্বাস্থ্য কি? – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।
মানসিক স্বাস্থ্য কি?

স্বাস্থ্য হলো শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে সামগ্রিক ও পূর্ণাঙ্গ সুস্থতা, কেবল কোনো রোগের অনুপস্থিতি নয়। মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের আবেগীয় ও আত্মিক সহনক্ষমতা, যা দুঃখ, কষ্ট ও হতাশার মধ্যে টিকে থেকে জীবনকে উপভোগ করতে সাহায্য করে।
এটি একটি সুস্থতার অনুভূতি, যার মূলে রয়েছে নিজের ও অন্যের প্রতি সম্মান ও সক্ষমতা সম্পর্কিত বিশ্বাস। মানসিক স্বাস্থ্য হচ্ছে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ই একটি অংশ।
মনস্তাত্বিক আঘাত
ব্যক্তি পরিবার বা সামাজিক যে কোনো পর্যায়েই যখন প্রাথমিক চিকিৎসার বিষয়টি উত্থাপিত হয় আমরা সাধারণত শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতা বুঝে থাকি। যে কোনো ধরনের শারীরিক আঘাত বা অসুস্থতার পাশাপাশি একজন ব্যক্তির মনের মধ্যে নেতিবাচক কিছু পরিবর্তন আসে যেমন- অনিশ্চয়তা, অনিরাপত্তা।
তাই আঘাত বা অসুস্থতার প্রাথমিক চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যক্তির মনোবল উজ্জীবিত রাখাও একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের নৈতিক দায়িত্ব। আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটে যাতে শারীরিক কোনো আঘাত বা অসুস্থতা থাকে না কিন্তু ব্যক্তি মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এ অধ্যায়ে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ঝুঁকিমূলক উপাদান
- ব্যক্তি পর্যায়ে: মদ, মাদক, ধূমপান, নিপীড়ন, চাপ, জীবনে তীব্র মানসিক আঘাত পাওয়া, তিক্ত শৈশব, কারাবাস, সহায়তার অভাব, অসুস্থতা, প্রতিবন্ধতা ও জিন।
- সামাজিক পর্যায়ে: দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অপর্যাপ্ত শিক্ষাব্যবস্থা, নিন্মমানের আবাসন, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, অসাম্য, কুসংস্কার ও বৈষম্য।
প্রতিরক্ষামূলক উপাদান
- জীবনদক্ষতাসমূহ: স্বাভাবিক শৈশব, আত্মবিশ্বাস, নিজের ওপর আস্থা, সমস্যা সমাধানেরদক্ষতা, যোগাযোগদক্ষতা, খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতা, বিরোধ নিষ্পত্তিরদক্ষতা, সম্মানজনক সম্পর্ক, মূল্যবোধ ও বিশ্বাস
- সামাজিক মেলামেশা/শারীরিক স্বাস্থ্য: সহনশীল সমাজ, অর্থপূর্ণ কাজ, সামাজিক পরিধি, কৃষ্টি ও সভ্যতা, স্থিতিশীল গৃহপরিবেশ, বাবা-মার স্নেহ, শরীর চর্চা, পুষ্টি ও বিশ্রাম
মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের কারণ
- মারাত্মকভাবে শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত বা অসুস্থ হওয়া
- দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় সম্পদহানী
- কোনো কারণে ভয় পাওয়া
- প্রিয়জনের মৃত্যু বা অসুস্থতা
- মানুষের ক্ষতি, লাশ ও পশুপাখির মৃত দেহ প্রত্যক্ষ করা
- নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া
- আর্থিক সংকট অথবা ব্যক্তিগত/পারিবারিক সমস্যা
- নিরাপত্তাহীনতা
- খাদ্য-পানীয়, বিশেষ করে শিশু খাদ্যের অভাব
- পেশাগত (বেকারত্ব, চাকুরিকালীন পদোন্নতি/ন্যায্য সুবিধা বঞ্জিত) হতাশা
- দুর্যোগ/দুর্ঘটনা পরবর্তীতে সেবা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও তার নেতিবাচক স্মৃতি মনে হওয়া
মনস্তাত্ত্বিক আঘাতের উপসর্গ ও লক্ষণ
- কোনো ব্যক্তি কথা বন্ধ করে দিতে পারে অথবা তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে যেতে পারে
- অমনোযোগী হতে পারে
- শীত, তাপ, অনুভূত না হতে পারে
- শূন্য দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে পারে এবং এক ধরনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেতে পারে
- অতি মাত্রার সতর্ক ও সংবেদনশীল হতে পারে
- কখনো কখনো ক্ষিপ্ত ও মারমুখী হয়ে উঠতে পারে
- ভয় অথবা অস্থিরতার ভাব প্রকাশ করতে পারে
- নির্ঘুম দিন/সময় কাটতে পারে
- আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের করণীয়
- লক্ষণ ও চিহ্ন অনুযায়ী মানসিক আঘাতের ব্যক্তি সনাক্ত করা
- ব্যক্তি এবং নিকটজনকে আশ্বস্ত করা
- ধৈর্য সহকারে ব্যক্তির পুরো কথা শোনা
- প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এবং প্রয়োজনে মানসিক সহায়তার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ
- মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক স্থাপন কর যাতে তিনি তোমাকে প্রকৃত শুভাকাঙ্খী ভাবতে পারে।
- অজ্ঞতা নয়, ব্যক্তিকে সম্মান কর।
- ধৈর্য সহকারে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির পুরো কথা শোনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে একজন প্রাথমিক চিকিৎসককে ভালো শ্রোতার ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে কোনো নির্জন জায়গায় যাওয়া যেতে পারে যেখানে তিন খোলামেলাভাবে নিজের সমস্যার কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে। একই ধরনের কোনো অভিজ্ঞতা জানা থাকলে তা শেয়ার কর।
- নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে ঐ ব্যক্তি মনের দিক থেকে আঘাতপ্রাপ্ত, “পাগল” নয়। শরীরে আঘাতের মতো সময়ের প্রেক্ষিতে মনের আঘাতেরও উপশম হবে।
শারীরিক আঘাত থাকলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে।
ব্যক্তি কাঁদতে চাইলে তার কান্না থামানোর প্রয়োজন নেই। সে যত কাঁদবে তত হালকা বোধ করবে। - ব্যক্তির মনে সাহস জোগাতে হবে (Motivationa and Counseling) এবং স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
- তিনি যেখানে থাকতে পছন্দ করেন সেখানে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- একই ধরনের সমস্যাপীড়িত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেলে তাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাত করার ব্যবস্থা করা।
- নিজের কথা বলতে পারলে তারা হালাক বোধ করবেন এবং উপলব্ধি করতে পারবেন যে তারা একা নয়।
- লক্ষ রাখতে হবে কেউ যেন ঐ ব্যক্তির সাথে দুর্ব্যবহার না করে।
- সান্তনা দিন, তবে মিথ্যা সান্তনা দেওয়া ঠিক হবে না, পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে দেওয়া ভালো।
- ব্যক্তিকে কখনো একাকী রাখা যাবে না ।
- সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি না ঘটলে অথবা যদি চরম বিষণ্ণতা, আত্মহত্যা বা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠার প্রবণতা দেখা দেয় তাহলে হাসপাতালে অথবা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে হবে ( তবে এর সংখ্যা খুবই কম)।
- দুর্যোগ/দুর্ঘটনা পরবর্তী সেবা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাকে নেতিবাচক দিকগুলোর পরিবর্তে ইতিবাচক দিকগুলো মনে করতে সহায়তা কর।
- মনস্তাত্বিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা পাগল নন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ আঘাত সাময়িক। যথাযথ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োগ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
- মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মধ্যে যদি আত্মহত্যা বা ক্ষিপ্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় তাহলে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বেঁধে রাখা বা বন্দি অবস্থায় রাখা যাবে না। তাতে মানসিক আঘাত আরো বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে মানসিক চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক পরিচর্যার লক্ষ্য হচ্ছে:

আরও দেখুন: