রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ও ইনসুলিন প্রদান

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ও ইনসুলিন প্রদান – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত |

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ও ইনসুলিন প্রদান

 

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ ও ইনসুলিন প্রদান

 

আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি যে, রক্ত আমাদের শরীরের অভ্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি অভ্যন্তরীণ পরিবহন মাধ্যম। এটি বাহিত হয় শিরা বা ধমনীর মধ্য দিয়ে। রক্ত দেহের প্রতিটি টিস্যুতে পৌঁছে দেয় খাবার ও অক্সিজেন। টিস্যুর বৃদ্ধি ও ক্ষয়রোধের জন্য এ খাবার ও অক্সিজেন অপরিহার্য।

এছাড়া দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত হরমোন রক্তের মাধ্যমেই পৌঁছে যায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, নিশ্চিত করে ওই অরে কর্মক্ষমতাকে। এমনই একটি হরমোনের নাম হচ্ছে ইনসুলিন। ইনসুলিন একটি প্রোটিনধর্মী হরমোন।

এটি দেহের অপ্রয়োজনীয় গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে দেহকে সঠিক পরিমাণের গ্লুকোজ সরবরাহে সাহায্য করে। গুরুত্বপূর্ণ এই হরমোনটি তৈরি হয় দেহের প্যানক্রিয়াস নামের অঙ্গে। বাংলায় প্যানক্রিয়াসকে বলে অগ্ন্যাশয়।

এই শিখনফলে আমরা রক্তের গ্লুকোজের নরমাল ভ্যাল্যু, এর তাৎপর্য, বহুমূত্র রোগ এবং এর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে পারবো। ইনসুলিন পরিমাপ করার পাশাপাশি ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী বহুমুত্র রোগীকে ইনসুলিন ইনফেকশন প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী ও আমরা এই শিখন ফলে অনুশীলন করৰ

রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ

 

রক্তের গ্লুকোজ ও এর স্বাভাবিক মাত্র

শর্করা মানবদেহের শক্তির মূল জোগানদাতা। শর্করা ভেঙে তৈরি হয় গ্লুকোজ বা চিনি। আমরা যখন শর্করা জাতীয় খাবার খাই, সেটি যে খাবারই হোক, যে পরিমাণই হোক, শরীরে সেই খাবার গ্লুকোজ হিসেবেই জমা হয়।

শরীরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার জন্য এই গ্লুকোজের নিয়মিত ভাঙ্গন বা নিয়ন্ত্রন অতীব জরুরি, যে কাজটি করে থাকে ইনসুলিন নামক হরমোন যেটি নিঃসৃত হয় অগ্নাশয়ের আইলেটস অব লেগারহেনate V স থেকে। রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ না করলে হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো জটিলতার ঝুঁকি রয়েছে। মানবদেহে গ্লুকোজের স্বাভাবিক পরিমাণ নিম্নরুপ:

খাওয়ার আগে প্রতি লিটার রক্তে ৩.৯-৫.৬ মিলিমোন এবং খাওয়ার ২ ঘন্টা পর ৭.৮ মিলিমোলের নিচে গ্লুকোজের মাত্রা থাকলে তাকে স্বাভাবিক বলা যায়। এর বেশি হলেই কোনো ব্যক্তির ডায়াবেটিস আছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

তবে বয়স, অন্যান্য অসুখ, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা, গর্ভাবস্থা এবং আরও অনেক ক্ষেত্রে রক্তে গ্লুকোজের লক্ষ্যমাত্রা ভিন্নতর হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে নিতে হবে। কোনো কোনো গ্লুকোমিটার মিলিগ্রাম এককে গ্লুকোজের ফলাফল দেয়, এ ক্ষেত্রে এই মাত্রাকে ১৮ দিয়ে ভাগ করলে মিলিমোল এককে ফলাফল পাওয়া যাবে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা

সুস্থ্য বা অসুস্থ্য যেকোনো বয়সের মানুষের জন্যই নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে অন্তত একদিন অবশ্যই রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা উচিত।

আর ডায়াবেটিক বা বহুমূত্র রোগীর জন্য ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্তের এ পরীক্ষা দিনের বিভিন্ন সময়ে করতে হতে পারে যেমন: সকালে খালি পেটে, নাশতার দুই ঘণ্টা পরে, দুপুরে খাওয়ার আগে ও পরে, রাতে খাওয়ার আগে ও পরে প্রভৃতি।

রোগী যদি নিজে নিজে করতে সক্ষম না হয়, গ্লুকোমিটার নামক একটি যন্ত্রের সাহায্যে পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান বা কেয়ারগিভার খুব সহজেই এই পরীক্ষাটি করতে পারে প্রাপ্ত ফলাফল ভালোভাবে রেকর্ড করে ডাক্তার বা নার্সকে রিপোর্ট করতে হয়।

রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের পদ্ধতি:

রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য জরুরি। এই জরুরি কাজটিই কেবলমাত্র এক ফোঁটা রক্ত ব্যবহার করে তাতক্ষনিকভাবেই সম্পাদন করা যায়। সে জন্য প্রয়োজন হয় গ্লুকোমিটার নামক একটি যন্ত্র।

গ্লুকোমিটার থাকলে সহজে ঘরে বসে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেই কাজটি করতে পারেন। যন্ত্রটি হাতের কাছে রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও জটিলতা প্রতিরোধে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাজারে বিভিন্ন নামে গ্লুকোমিটার পাওয়া যায়। সকল গ্লুকোমিটারের ক্ষেত্রেই রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ করার পদ্ধতি একই রকম। নিচে একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ানের জন্য রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:

১। প্রথমেই কেয়ারগিভারকে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। রোগীকে শুভেচ্ছা বিনিময় করে সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করবে এবং তার অনুমতি গ্রহণ করবে।

২। গ্লুকোমিটারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে কার্যকারিতা যাচাই করে নিতে হবে। সুঁই বা নীডল লেনসেট পেনে ঠিকভাবে লাগিয়ে নিতে হবে।

৩। রোগীর যে আঙুল থেকে রক্ত নেয়া হবে সেটি নির্বাচন করতে হবে। অ্যালকোহল প্যাড বা জীবাণুনাশক দিয়ে আঙুলের মাথা পরিষ্কার করে নিয়ে পুরোপুরি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

৪। গ্লুকোমিটারে একটি পরীক্ষার স্ট্রিপ প্রবেশ করাতে হবে। গ্লুকোমিটারের মডেলভেদে স্ট্রিপ আলাদা হয়, তাই শুধু তোমার মিটারের জন্য নির্দিষ্ট স্ট্রিপ ব্যবহার কর।

নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ স্ট্রিপ ব্যবহার করা যাবেনা, এতে ভুল ফলাফল আসতে পারে। স্ট্রিপের কৌটা খোলার পর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়, এ বিষয়ে নির্দেশিকায় লেখা তথ্য অনুসরণ করতে হবে। আধুনিক গ্লুকোমিটারে স্ট্রিপ প্রবেশ করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা চালু হয়ে যায়

৫। সুই বা ল্যানসেট (যা একটি কলমের মধ্যে থাকে) দিয়ে রোগীর হাতের আঙুলের অগ্রভাগ ফুটো করতে হবে। প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন আঙুল ব্যবহার করা উচিৎ। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বের হয়ে আসা বড় এক ফোঁটা রক্তই যথেষ্ট।

৬। রক্তের ফোঁটা পরীক্ষার স্ট্রিপের নির্দিষ্ট জায়গায় স্পর্শ ধরে রাখতে হবে। প্রয়োজনীয় রক্তের পরিমাণ গ্লুকোমিটারভেদে ভিন্ন (০.৩ থেকে ১ মাইক্রো লিটার) হতে পারে। খুব কম বা ছোট রক্ত হলে মিটারে কোনো

ফলাফল নাও আসতে পারে। রক্ত নির্দিষ্ট সেনসরে লাগলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শোষিত হয় এবং মিটারটি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পর্দায় প্রদর্শন করবে।

৭। তারিখ ও সময় দিয়ে প্রাপ্ত ফলাফল রেকর্ড করে রাখতে হবে এবং ব্যবহৃত সুই এবং স্ট্রিপ নির্দিষ্ট ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে। অন্যান্য যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে এবং কর্মক্ষেত্র গুছিয়ে রাখতে হবে।

চিকিৎসককে রিপোর্ট করার সময় গ্লুকোজের রেকর্ড চার্ট সরবরাহ করতে হবে, যাতে রেকর্ড করা গ্লুকোজের মাত্রা দেখে ডাক্তার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আরও দেখুন:

Leave a Comment