আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় রোগীকে সঠিক পজিশনে রাখা ও স্থানান্তর করার গুরুত্ব – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত |
রোগীকে সঠিক পজিশনে রাখা ও স্থানান্তর করার গুরুত্ব

কখন করতে হয়: যখন একজন রোগী-
- শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম হয়।
- শারীরিক কোনো সমস্যাগ্রস্ত কিংবা তীব্র ব্যথা থাকে যেক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়।
- প্রেসার আলসারে আক্রান্ত থাকেন কিংবা প্রেসার আলসারে আক্রান্ত হবার ঝুকিতে থাকেন।
- মস্তিস্কের সমস্যায় ভুগেন যেক্ষেত্রে তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যহত হচ্ছে।
- রেস্টলেস কিংবা অস্থীর প্রকৃতির।
- দাঁত মাজা, গোসল করা, খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি দৈনন্দিন কাজকর্ম বিছানাতেই সম্পন্ন করতে বাধ্য হচ্ছেন
- কিংবা নিজে নিজে করতে পারছেন না।
- কোন নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিংবা অপারেশন কিংবা অন্য কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবেন।
গুরুত্ব :
- সঠিক পজিশনিং ও স্থানান্তর রোগীকে শরীরবৃত্তীয়ভাবে স্বক্রিয় রাখে। রোগীর রক্ত ও স্নায়ুবিক চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে।
- প্রেসার সোর বা প্রেসার আলসার প্রতিরোধে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সঠিভাবে পজিশনিং ও স্থানান্তর করার মাধ্যমে রোগীকে আরাম ও স্থিরতা প্রদান করা সম্ভব, এতে রোগী নির্ভার অনুভব করে
- সঠিক পজিশনিং ডাক্তার, নার্সদের কিছু কিছু পদ্ধতি সম্পন্ন করতে সুবিধা প্রদান করে
রোগীর পড়ে যাওয়ার আশংকা কমায় এবং রোগীর নিরাপত্তা জোরদার করে। এতে রোগীর বিভিন্ন
ইনজুরির ঝুঁকি হ্রাস পায় । - সঠিভাবে পজিশনিং ও স্থানান্তর করা গেলে রোগী অনেক কাজ নিজে নিজেই সম্পন্ন করতে পারে। যেমন: দাঁত মাজা ও মুখ ধোয়া, খাবার খাওয়া প্রভৃতি। এতে রোগীর স্বনির্ভরতা ও আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধি পায়।
প্রেসার আনসার:
রোগী শারীরিকভাবে চলাচলে অক্ষম হলে একটি খুব জটিল সমস্যা তৈরি হতে পারে যার নাম প্রেসার আলসার। একে প্রেসার সোর বা বেস্ত সোর নামেও অভিহিত করা হয়। ইহা এক ধরনের ক্ষত যাহা রোগীর শরীরে বিছানা, ম্যাট্রেস বা অন্য কোনো শক্ত কিছুর সাথে দীর্ঘদিন চাপের ফলে সৃষ্টি হয়।
সাধারণত রোগীর দেহের হাড় সংশ্লিষ্ট অংশে (Bony Prominense; উচ্চারণ: বোনি প্রমিনেন্স) এটি বেশি হয়ে থাকে। এ ধরনের কিছু স্থানের উদাহরণ হচ্ছে: মাথার পিছনের অংশ, দুই কাঁধের শক্ত অংশ, কনুই, নিতম্ব, পুহুদেশীয় অংশ, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি ও ছিল প্রভৃতি।

এ ধরনের অংশ যখন দীর্ঘক্ষণ চাপ খেয়ে থাকে, তখন আস্তে আস্তে এ সময় অংশের টিস্যুতে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে টিস্যুগুলো মরে যেতে থাকে। সুস্থ স্বাভাবিক চামড়ায় এভাবে ফাটল ধরে যার থেকে উৎপন্ন হয়ে থাকে প্রেসার সোর বা চাপ ক্ষত |
প্রেসার আলসারের পর্যায়: প্রেসার আলসার সাধারণত ৪টি পর্যায়ে সংঘটিত হয়ে থাকে। যথা:
প্রথম পর্যায়: জায়গাটি লালচে, ফ্যাকাশে অথবা কালচে বর্ণ ধারন করে এবং চাপ বন্ধ করার ১ মিনিটের মধ্যে তার স্বাভাবিক রঙে ফিরে আসেনা। জায়গাটি আশেপাশের অংশগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে একটি বেশি শক্ত, নরম, উষ্ণ বা ঠাণ্ডা, অথবা বেশি ব্যথাদায়ক থাকতে পারে। ত্বকের রঙ কালো এরকম ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি শুরুর দিকে বুঝতে পান্না একটু কঠিন বটে।
দ্বিতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে জায়গাটিকে গোলাপি বা লালচে রঙের টিস্যুসহ একটি অগভীর খোলা ক্ষতের মত Sett দেখাবে। মাঝে মাঝে এটিকে ফোস্কার মতোও দেখাতে পারে।
তৃতীয় পর্যায়: এ পর্যায়ে আরো অধিক টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চামড়ার নিচে অবস্থিত চর্বি এ পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়।
চতুর্থ পর্যায়: একটি গভীর গর্ত তৈরী হয়। মাংশপেশি কিংবা হাড় দৃশ্যমান হতে পারে।
প্রেসার আলসারের ঝুঁকিসমূহ:
১। ইমোবিলিট বা অনড় অবস্থা
২। অধিক বয়স
৩। ভঙ্গুর ও শুকনো ত্বক
৪। আর্দ্র ত্বক; যখন একটি ত্বক অপর ত্বকের সাথে কিংবা কোনো আর্দ্র বিছানার চাদরের সাথে লাগানো থাকে।

৫। অপুষ্টি
৬। নিম্ন মানের হাইড্রেশন; যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান না করা
৭। নিম্ন মানের রক্ত সঞ্চালন
৮। নিম্ন মানের অক্সিজেন সরবরাহ প্রভৃতি।
আরও দেখুন: