আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় শকের ধারনা – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।
শকের ধারনা

কোন কারণে শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে মস্তিষ্ক ও শরীরে প্রধান অঙ্গসমূহ অক্সিজেনের ঘাটতি হলে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় তা-ই শক (Shock) |
শকের কারণ
- মস্তিষ্ক রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া
- প্রচুর রক্তক্ষরণ
- শরীরে জলীয় পদার্থের ঘাটতি (যেমন- রক্তক্ষরণ, ডায়রিয়া, প্রচুর ঘাম, অত্যাধিক পুড়ে যাওয়া, প্রচুর বমি)।
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা
- মারাত্মক এলার্জি। এ ধরনের শককে এনাফাইলেকটিক শক বলে।
- মানসিক কারণ (ভয়, দুঃসংবাদ বা সুসংবাদ, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি)।
- অতিরিক্ত বা ভুল ওষুধ সেবন।
শকের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে
- শারীরিক দুর্বলতা, প্রচুর ঘাম, দ্রুত ও দুর্বল পাল্স, শরীর ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে হওয়া।
- শকে আক্রান্ত হবার পর
- ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
- শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত ও দুর্বল
- শরীর ধূসর- নীল বর্ণ ধারণ
- বমি বমি ভাব অথবা বমি
- তৃষ্ণা বোধ করা
- চোখে ঝাপসা দেখা
- অস্থির হয়ে উঠা
- অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
- শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য
- শকের কারণ চিহ্নিত করে তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া।
- মস্তিষ্কসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহে রক্ত সরবরাহের উন্নয়ন ঘটানো। এতে অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ হবে।
- ব্যক্তি যাতে পুনরায় শকে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখা।
- হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করা
প্রাথমিক চিকিৎসা
১) শকের কারণ সনাক্ত করে (যেমন- রক্তপাত বা পোড়া) সে অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা দাও ।
২) ব্যক্তিকে কষল, কাঁথা বা তোষকের উপর সমান্তরালভাবে পুঁইয়ে পা দু’টি উঁচু করে দিতে হবে। এতে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহের উন্নতি ঘটবে
৩) প্রয়োজনে ব্যক্তিকে উষ্ণ রাখার জন্য কম্বল বা গরম কাপড় পায়ে দিতে হবে।
8) ব্যক্তিকে নিরবিচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ি (পালস), সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি।
৫) পরিধেয় আঁটসাট কাপড় চোপড় ঢিলা করে দিতে হবে, যেমন- বেল্ট, জুতা, মোজা, কোট, টাই,
শার্ট, ব্লাউজ ইত্যাদি। এতে রক্ত সঞ্চালনে সুবিধা হবে।
৬) খোলামেলা ও মুক্ত বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) ব্যক্তির অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮) ব্যক্তির অবস্থার উন্নতি হলে রিকভারি পক্ষিশনে (আরামদায়ক অবস্থা) শুইয়ে দিতে হবে।

সাবধানতা
- ব্যক্তিকে একা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না।
- ব্যক্তিকে উষ্ণ রাখার জন্য সরাসরি ভাগ প্রয়োগ করা যাবে না, যেমন গরম পানির বোতল ব্যবহার করা যাবে না।
- ব্যক্তিকে মুখে কোনো খাবার বা পানি দেওয়া যাবে না। কারণ চোকিং অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া পরবর্তীতে হাসপাতালে তাঁকে অজ্ঞান করে অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যদি তিনি পানি পান করতে চান তাহলে কেবল ঠোঁট ভিজিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাঁর অবস্থা যদি পানি পান করার মত স্বাভাবিক থাকে তাহলে অগ্ন জন্ন করে পানি দেওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তির মাথা একটু উঁচুতে রাখতে হবে।
- ব্যক্তি যদি পূর্ণ সময়ের গর্ভবর্তী হন তাহলে তাঁকে বা দিকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, তাতে তাঁর জরায়ু ও হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকতে সহায়ক হবে।
- যদি ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে শ্বাসনালি খুলে দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। প্রয়োজনে সিপিজার দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও দেখুন: