সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।

Table of Contents

সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা

 

সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা

 

ক. জ্বর (Fever)

আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেড়ে যাওয়া অবস্থাকে জ্বর বলে। জ্বর নিজে কোনো রোগ নয়, জ্বর হচ্ছে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। মানুষের শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি হলে সে অবস্থাকে জ্বর বলে।

জ্বরের কারণ

বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ ও সংক্রমণ থেকে জ্বর হতে পারে।

  • প্রদাহ- যে কোনো ধরনের আঘাত, ক্ষত, হাড় ভাঙ্গা, পোড়া
  • সংক্রমণ-ডেঙ্গু, টাইফয়েড়, ম্যালেরিয়া, হাম, মেনাওজাইটিস, নিমোনিয়া, ভাইরাল ইত্যাদি।

জ্বর যদিও একটি  সাধারণ অসুস্থতা তথাপি কখনো কখনো কোনো কোনো জ্বরে শরীরের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে গিয়ে জরুরি অবস্থার সৃষ্টি করে। কয়েকটি প্রধান জ্বর সম্পর্কে এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা করা
  • জ্বরের কারণ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা
  • জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া
  • প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • জ্বরের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় বিধায় অতিরিক্ত কাপড় চোপড় সরিয়ে ফেলে খালি গায় অথবা হালকা কাপড়ে থাকা। মনে রাখতে হবে কিছু কিছু জ্বরের ক্ষেত্রে যেমন ম্যালেরিয়ায় কাঁপুনি হয়। সে ক্ষেত্রে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে রেখে ব্যক্তি আরামবোধ করে। এ ক্ষেত্রে কাঁথা কম্বল সরানোর প্রয়োজন নেই।
  • ব্যক্তি যেখানে অবস্থান করছেন তা খোলামেলা হতে হবে। রুমে অবস্থান করলে রুমের দরজা জানালা খুলে রাখতে হবে। ব্যক্তিকে বাতাস করতে হবে। খোলামেলা পরিবেশ এবং বাতাস তার জ্বর কমাতে সহায়ক হবে।
  • স্বাভাবিক তাপমাত্রার চাইতে বেশি হলে বিশেষ করে ১০২-১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে ব্যক্তির সারা শরীর ভিজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। শরীর মুছে দেওয়ার জন্য খুব বেশি ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, সাধারণ তাপমাত্রার পানি ব্যবহারই ভালো। মাথায় পানি দেওয়া এবং কপালে পানি পট্টি দেওয়া যাবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর মুছে দেওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রিতে নেমে এলে আর শরীর মুছে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে পুনরায় তাপমাত্রা বেড়ে গেলে একই প্রক্রিয়ায় শরীর মুছে দিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি কমে না যায়।
  • জ্বরের সাথে শিশুদের খিঁচুনি দেখা দিলে শরীর চেপে খিঁচুনি রোধ করা ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্ৰা কমানোর প্রাথমিক চিকিৎসার সাথে সাথে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যে সকল শিশু বুকের দুধ পান করে তা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। অন্য সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানি, শরবত ফলের রস, পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বর কি?

ডেঙ্গু এক ধরনের ভাইরাস জাতীয় জ্বর। শহর এলাকায় সীমিত। ‘এডিস’ প্রজাতির মমার কামড়ে এই ভাইরাস ছড়ায়।

উপসর্গ ও লক্ষণ

  • আক্রান্ত ব্যক্তির তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • মাথা, শরীর, হাড় ও চোখে ব্যথা থাকে
  • বিশেষ এক ধরনের ডেঙ্গু জ্বরের (হেমোরেজিক) ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে, দাঁতে, চোখে, নাক দিয়ে, প্রস্রাব ও
  • পায়খানার সাথে রক্তপাত হতে পারে
  • শরীরে ছোট ছোট দানা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • অধিকাংশ ডেঙ্গু জ্বরই মারাত্মক নয় এবং অন্যান্য ভাইরাস জ্বরের মতো সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়।
  • জ্বরের প্রাথমিক চিকিৎসা বিশেষ স্পঞ্জিং দিতে হবে।
  • ব্যক্তিকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও অন্যান্য খাবার খেতে উৎসাহিত করতে হবে
  • তবে শরীরে তাপমাত্রা যদি ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠে যায়, রক্তপাতের লক্ষণ থাকে তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ম্যালেরিয়া জ্বর কি?

এই জ্বর বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সীমিত। এটি ম্যালেরিয়া, প্লাসমোডিয়াম নামক পরজীবী দ্বারা
সংঘটিত একটি রোগ। স্ত্রী এনোফিলিস নামক মশার কামড় ছাড়াও রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমেও ম্যালেরিয়া
রোগ হতে পারে।

উপসর্গ ও লক্ষণ

  • আক্রান্ত ব্যক্তির দুই এক দিন পরপর জ্বর আসে।
  • তাপমাত্রা ১০৪-১০৫ ডিগ্রির ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • শীত অনুভব ও কাঁপুনি থাকে।
  • ৩-৪ ঘন্টা জ্বর থাকার পর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়।

প্রাথমিক চিকিৎসা:

  • জ্বরের সাধারণ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অবশ্যই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে হবে।

টাইফয়েড জ্বর কি

বাংলাদেশে টাইফয়েড রোগের ব্যাপকতা খুব বেশি। টাইফয়েড রোগের জীবাণু রোগীর মলের সাথে বেরিয়ে দূষিত পানির মাধ্যমে অপর সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করে। এই রোগের কারণে সালমনেলা টাইফি। ইহা পানি বাহিত রোগ।

উপসর্গ ও লক্ষণ

  • আক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে সাথে কোষ্টকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকতে পারে।
  • দ্বিতীয় সপ্তাহে রোগীর শরীরে লালচে দাগ দেখা দিতে পারে, পেট ফুলে যেতে পারে এবং ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • তাছাড়া টাইফয়েড জ্বরে হাড়, মস্তিষ্ক, পিত্ত, হৃৎপিণ্ড ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি রোগী মারাও যেতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • টাইফয়েড রোগ সন্দেহ হলে জ্বরের সাধারণ পরিচর্যার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

খ. হিট স্ট্রোক কি

উত্তপ্ত আবহওয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে হিট স্ট্রোক বলে ।

হিট স্ট্রোকের কারণ:

দীর্ঘ সময় ধরে যদি প্রকৃতির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে অথবা কোনো ব্যক্তি যদি অধিক সময় ধরে উত্তপ্ত পরিবেশে কাজ করেন তাহলে আমাদের মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লোপ পায়। ফলশ্রুতিতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। কোনো কোনো ওষুধ সেবনের ফলেও এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ

  • মাথা ধরা, অস্থিরতা, প্রলাপ বকা
  • চামড়া গরম ও লালচে হয়ে যাওয়া
  • তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইট বা তার উপরে হয়ে যাওয়া

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা কমানো
  • হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করা।

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে আপক্ষোকৃত ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে এবং হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • শরীরের কাপড়-চোপড় যতটা পারা যায় সরিয়ে ফেলে উন্মুক্ত রাখতে হবে। ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বা হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে।
  • একটি চাদর ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে জড়িয়ে দাও। ঠাণ্ডা পানি না পাওয়া গেলে স্বাভাবিক তাপতাত্রার পানি হলেও চলবে। কিছুক্ষণ পরপর জড়ানো চাদরে পানি ঢেলে দাও। শরীরের তাপমাত্রা ১০০০ ফারেনহাইটে না আসা পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে।
  • ব্যক্তি যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে শ্বাসনালি খুলে দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস পর্যবেক্ষণ কর এবং প্রয়োজনে সিপিআর প্রয়োগ করা।
  • তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আসার পর ভিজা চাদরটি সরিয়ে নাও ।
  • ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ রাখ- সাড়া দেওয়া, শ্বাস নাড়ি বা পাল্স ও তাপমাত্রা দেখ।
  • তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পুনরায় একই প্রক্রিয়ায় শরীর ঠাণ্ডা কর।

হাইপোথারমিয়া (Hypothermia):

কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা ৯৫° ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর নিচে নেমে গেলে সে অবস্থাকে হাইপোথারমিয়া বলে।

হাইপোথারমিয়ার কারণ

  • ঠাণ্ডা আবহাওয়া (তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়া), শৈত্যপ্রবাহ (ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও প্রবহমান ঠাণ্ডা বাতাস)
  • ঠাণ্ডা পানিতে পড়ে যাওয়া
  • জ্বরের পরিচর্যার অতিরিক্ত স্পঞ্জিং বা জ্বর কমানোর ওষুধ সেবন

হাইপোথারমিয়ার লক্ষণ

  • কাঁপুনি, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাবে
  • চামড়া শুকনো ও ফ্যাকাশে দেখাবে
  • ব্যক্তি প্রলাপ বকতে পারে
  • শ্বাস-প্রশ্বাস ধীর গতিতে চলবে
  • নাড়ির (পান্স) গতি স্বাভাবিকের চাইতে কম হবে
  • দীর্ঘ সময় যাবৎ হাইপোথারমিয়া হলে ব্যক্তি মারা যেতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • ব্যক্তি যেন শরীরের তাপমাত্রা আর না হারায় তার ব্যবস্থা করা
  • ধীরে ধীরে ব্যক্তির শরীর উত্তপ্ত করা
  • প্রয়োজনে হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করা।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ঘরের বাইরে উন্মুক্ত আবহাওয়ায় থাকলে তাকে যথাশীঘ্র একটি ঘরে স্থানান্তর করতে হবে।
  • ব্যক্তির পরনের কাপড় ভিজা হলে তা বদলে দিয়ে গরম কাপড় দিয়ে সারা শরীর ও মাথা জড়িয়ে দিতে হবে।
  • প্রাথমিক চিকিৎসক ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে তার শরীরের তাপমাত্রা দিয়ে ব্যক্তিকে গরম করতে পারেন।
  • ব্যক্তিকে মাটি বা মেঝের উপর রাখতে হলে অবশ্যই পুরু কম্বল বা তোষকের উপর রাখতে হবে।
  • ব্যক্তি সচেতন থাকলে চা, দুধ, যে কোনো গরম পানীয়, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন চকলেট, ক্রিম যুক্ত বিস্কিট খেতে দিতে হবে।
  • ব্যক্তির সাড়া দেওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস, নাড়ি বা পাল্স তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • প্রয়োজনে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সাবধানতা

  • ঠাণ্ডা অবস্থা থেকে উদ্ধারের পর হাইপোথারমিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে খুব দ্রুত গরম করার প্রয়োজন নেই।
  • কারণ ঠাণ্ডা অবস্থায় ব্যক্তিকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা স্বরূপ শরীরের রক্ত প্রবাহ জরুরি অঙ্গ – প্রতঙ্গে (মস্তিষ্কে, হৃদপিন্ড) সীমিত থাকে। ব্যক্তিকে উদ্ধারের পর যদি দ্রুত গরম পানির বোতল, আগুনের উৎস, ইলেকট্রিক হিটার দিয়ে গরম করা হয় তাহলে শরীরের ত্বকে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে জরুরি অঙ্গ-প্রতঙ্গে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিবে। তাতে করে মস্তিষ্ক ও হৃদপিন্ড অকেজো হয়ে যেতে পারে।
  • উপরে উল্লেখিত একই কারণে শরীর গরম করার জন্য পানীয় হিসেবে কখনোই এলকোহল (মদ) দেওয়া যাবে না।
  • প্রাথমিক চিকিৎসক নিজেকে গরম রাখার প্রতি যথেষ্ট লক্ষ রাখতে হবে।

গ. নিউমোনিয়া কি

বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। এই রোগে শিশুর ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া কখনো কখনো বৃদ্ধ ব্যক্তিদেরও হয়ে থাকে।

উপসর্গ ও লক্ষণ

  • নিউমোনিয়ার একটি প্রধান লক্ষণ দ্রুত শ্বাস। ফুসফুসের সংক্রমণের ফলে কোনো শিশু বা ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে না। চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন না পাওয়ায় শ্বাসের গতি বেড়ে যায়।
  • দ্রুত শ্বাসের কারণে বুকের পাঁজরের হাড়ের নিন্মাংশ ও পেটের সংযোগস্থল শ্বাসের সাথে সাথে বসে
    যাবে।
  • তাছাড়া শিশু/ব্যক্তির জ্বর ও অস্থিরতা থাকবে।
  • শিশু খেতে চাইবে না, এমনকি বুকের দুধও খেতে চাইবে না।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের জন্য রোগটি সনাক্তকরণ জরুরি।
  • জ্বর বেশি না হলে মাথায় পানি ঢালার প্রয়োজন নেই।
  • নিউমোনিয়া সনাক্তকরণের সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ বা হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • নিউমোনিয়া একটি জীবানু ঘটিত রোগ। বর্তমানে নিউমোনিয়া উন্নত চিকিৎসা আছে।
  • সময়মতো চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে পৌঁছাতে পারলে শিশু/ব্যক্তি বেঁচে যেতে পারে।

ঘ. ডায়রিয়া

ডায়রিয়া মূলত একটি পানিবাহিত রোগ। তাছাড়া অপরিচ্ছন্ন হাত, বাসি পচা খাবার, মাছি ইত্যাদির মাধ্যমেও ডায়রিয়া ছড়াতে পারে। ডায়রিয়ার মূল কারণ কিছু ভাইরাস ও জীবাণু। আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মধ্যে ডায়রিয়ার ভাইরাস বা জীবাণু উপস্থিতি থাকে, তা দূষিত পানি বা অন্য কোনো মাধ্যমে সুস্থ ব্যক্তির মুখ দিয়ে প্রবেশ করে তাঁকে সংক্রমিত করে। সকল বয়সের মানুষই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে, তবে সাধারণত শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ডায়রিয়ার উপসর্গ ও লক্ষণ:

  • পাতলা পায়খানা ও বমিই প্রধান উপসর্গ।
  • সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পানি স্বল্পতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • পানিস্বল্পতা দেখা দিলে প্যাকেট স্যালাইন বা সরবত খাওয়াতে হবে। স্যালাইন খাওয়ানোর সাধারণ হিসাব- যতবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি পায়খানা ও বমি করবে ততবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
  • সেই সাথে শিশুর ক্ষেত্র অবশ্যই বুকের দুধ দিতে হবে।।
  • অন্যান্য ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণ পানি, ডাবের পানি, ভাতের মাড়, কলা, সহজে হজম হয় এমন খাবার দেওয়া হবে।
  • বেশির ভাগ ডায়রিয়া ২-৩ দিনের মধ্যেই বাড়ির যত্নেই ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ডায়রিয়া বিশেষ পরিচর্যার প্রয়োজন আছে।

কখন হাসপাতালে প্রেরণ করবে?

  • ডায়রিয়ার সাথে জ্বর থাকা
  • মলের সাথে রক্ত যাওয়া
  • স্যালাইন খাওয়ানো সত্ত্বেও পানিস্বল্পতা কমছে না।
  • ৬ ঘন্টা যাবৎ প্রসাব হচ্ছে না।
  • হাতে পায়ে টান ধরা
  • শিশু বা ব্যক্তি অচেতন হয়ে যাওয়া

প্রতিরোধের উপায়: ডায়রিয়া একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। উন্নত স্যানিটেশন ও ব্যক্তি স্বাস্থ্য অভ্যাস বজায় রাখার মাধ্যমে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব ও সহজ।

ঙ. পানির স্বল্পতা (Dehydration)

আমাদের শরীরের পানি স্বাভাবিক পরিমাণের চাইতে কমে গিয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে পানি স্বলপ্তা
বলে। আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ প্রতি ২৪ ঘন্টায় সাধারণত ২.৫-৩ লিটার পানি পান করে থাকেন। শরীরের অভ্যন্তরের পরিচ্ছন্নতার কাজ সম্পন্ন করে ১.৫ লিটার পানি প্রসাবের মাধ্যমে এবং বাকি ১.৫ লিটার ঘাম, মল, নিশ্বাসের মাধ্যমে নির্গত হয়।

পানি স্বল্পতার কারণ

  • গরম আবহাওয়ায় প্রচুর ঘাম নির্গত হয় গরম আবহাওয়ায় অধিক পরিশ্রম করা
  • জ্বর (শরীরের ত্বক দিয়ে বাষ্পাকারে পানি উড়ে যায়)
  • ডায়রিয়া
  • অত্যধিক বমি
  • প্রচুর রক্তপাত।

পানি স্বল্পতার লক্ষণ

  • চোখ মুখ শুকনো দেখাবে। গুরুতর পানি স্বল্পতায় চোখ ভেতরে বসে যাবে।
  • ঠোঁট শুকিয়ে যাবে এবং ফেটে যাবে
  • মাথা ধরা
  • দ্বিধাগ্ৰস্ত ভাব
  • প্রসাব অল্প ও গাঢ় রঙ ধারণ করা
  • পায়ের পেছনের দিকের মাংসপেশিতে খিঁচুনি হওয়া
  • ৬ মাসের কম বয়স্ক শিশুদের ক্ষেত্রে মাথার চাঁদি বসে যাওয়া।

 

সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা

 

প্রাথমিক চিকিৎসা

কোনো কারণে আমাদের শরীর থেকে পানি বা জলীয় অংশ বেরিয়ে গেলে তার সাথে কিছু প্রয়োজনীয় লবণও বেরিয়ে যায়। তাই পানিস্বল্পতার প্রাথমিক চিকিৎসায় পানি পূরণের সাথে সাথে লবণের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

  • পানিস্বল্পতার ব্যক্তিকে আশ্বস্ত কর।
  • ব্যক্তিকে পানি পান করতে দাও। মুখে খাওয়ার স্যালাইন পাওয়া গেলে তা যথাযথভাবে বানিয়ে পান করতে দিলে বেশি উপকার হবে।
  • ব্যক্তি যদি কোন মাংসপেশিতে টান ধরা বা ব্যথার কথা বলে তবে তা হালকাভাবে ম্যাসেজ করে দাও (মনে রাখবে- সাধারণত লবণ কমে যাওয়ার কারণে এ অসুবিধা হয়ে থাকে)। স্যালাইন খাওয়ানোর ফলে অবস্থার উন্নতি হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment