আজকে আমরা সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা জব সম্পর্কে আলোচনা করবো । যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অংশের অন্তর্গত।

সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা জব
স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরের ঝুঁকি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সম্পর্কে জানা যায়। পাশাপাশি, কোন প্রকার সুপ্ত অসুস্থতা কিংবা রোগ থাকলে তা চিকিৎসা করার সুযোগ তৈরি হয়। এটা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ যে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভবিষ্যতে কিংবা এই মহামারীকালে কোন প্রকার কঠিন সমস্যা থেকে আপনাকে সুরক্ষা দিতে পারে।
জব: ভাইটাল সাইন বা অত্যাবশ্যকীয় লক্ষণসমূহ পরিমাপ করা
পারদর্শিতার মানদন্ড
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (পিপিই) ও পোশাক পরিধান করা;
- প্রয়োজন অনুযায়ী কাজের স্থান প্রস্তুত করা;
- জব অনুযায়ী টুলস, ইকুইপমেন্ট, মেটেরিয়্যাল সিলেক্ট ও কালেক্ট করা;
- কাজ শেষে নিয়ম অনুযায়ী কাজের স্থান পরিষ্কার করা ;
- অব্যবহৃত মালামাল নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষণ করা:
- নষ্ট মালামাল (Wastage) এবং স্ক্র্যাপগুলো (Scrap) নির্ধারিত স্থানে ফেলা;
- কাজ শেষে চেক লিস্ট অনুযায়ী টুলস ও মালামাল জমা দেওয়া ইত্যাদি ।
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (PPE):
প্রয়োজন অনুযায়ী।

প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুল্স, ইকুইপমেন্ট ও মেশিন):
স্টেথোস্কোপ, ব্লাড প্রেসার মেশিন (এ্যানালগ এবং ডিজিটাল), ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার (এ্যানালগ এবং ডিজিটাল), স্টপ ওয়াচ, ওজন পরিমাপক যন্ত্র, মেজারিং টেপ বা উচ্চতা মাপক যন্ত্র, ময়লা ফেলার বিন, জার উইথ স্যাভলন অথবা এ্যালকোহল, কিডনী ট্রে ইত্যাদি।
জব ১ (ক): ওজন পরিমাপ করা
ধাপ-১। পরিমাপ করার আগে ওজন মেশিনটি কাজ করে কিনা বা ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিতে
হবে।
ধাপ-২। রোগী মেশিনে ওঠার আগে ওজন স্কেল জিরো বা নিউট্রাল করে নিতে হবে।
ধাপ-৩।পকেটে কোনো ভারী বস্তু যেমন চাবি, মোবাইল, ওয়ালেট থাকলে তা বের করে রাখুন।
ধাপ-৪। পায়ের জুতা, ভারী জ্যাকেট বা সোয়েটার থাকলে তা খুলে রাখুন।
ধাপ-৫। ওজন মাপার সময় রোগীকে শরীর সোজাসুজি রেখে সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলুন।
ধাপ-৬। মেজারিং স্কেল অথবা ডিজিটাল স্ক্রিন স্থির হলে ওজনটি দেখুন ও তা চার্টে রেকর্ড কর।

জব ১ (খ): উচ্চতা পরিমাপ করার পদ্ধতি
ধাপ-১। উচ্চতা মাপার আগে উচ্চতা মাপক স্কেল অথবা মেশিনটি ঠিক আছে কিনা তা চেক কেলিব্রেটেড করে নিন
ধাপ-২। তারপর রোগীকে তার জুতা খুলতে বলুন।
ধাপ-৩।রোগীকে পিছন দিকে ফিরিয়ে ওয়ালের সাথে তার পিঠ ঠেকিয়ে নিন।
ধাপ-৪। রোগীর সন্মুখভাগ সামনা সামনি বরারর রেখে সোজা হয়ে দাড়াতে বলুন।
ধাপ-৫। এবার ভালো করে খেয়াল করে দেখুন যেন তার পায়ের গোড়ালি, পিঠ, মাথার পিছন সাইট হাইট স্কেলের ওয়ালে লেগে থাকে।
ধাপ-৬। এবার আস্তে আস্তে উচ্চতা মেশিনের সাথে লাগানো মেজারিং ডিভাইসটি একদম মাথার উপরের অংশে এডজাষ্ট করে নিন এবং আপনার আই লেভেল সোজাসুজি রেখে উচ্চতা পরিমাপ করে রেকর্ড কর।

জব ১ (গ): ওরাল মেথডে তাপমাত্রা মাপার পদ্ধতি
ধাপ-১। প্রথমেই সাবান ও পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধৌত কর।
ধাপ-২। গ্লাভস পরিধান কর।
ধাপ-৩। তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি একটি ট্রেতে সাজাও।
ধাপ-৪। ডিজিটাল অথবা গ্লাস থার্মোমিটারটি জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।
ধাপ-৫। রোগী যদি বসতে পারে তাহলে সোজা করে বসিয়ে নাও
ধাপ-৬। রোগীকে তার মুখ খুলতে এবং জিহ্বা তুলতে বল।
ধাপ-৭। গ্লাস বা মারকারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে সাবধানে ঝাঁকিয়ে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নামিয়ে নিয়ে রোগীর জিহ্বার নীচে অর্থাৎ জিভের গোড়ায় ডান বা বাম দিকে আস্তে আস্তে রাখ।
ধাপ-৮। রোগীকে তার ঠোঁট বন্ধ করতে বল এবং খেয়াল রাখো যেন থার্মোমিটারটি দাঁত দিয়ে কামড়ে না দেয়। যদি ডিজিটাল থার্মোমিটার হয় তাহলে স্টার্ট বাটন পুশ কর।‘ কর। তবে গ্লাস বা মারকারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা কর।
ধাপ-৯। রিডিং কাউন্ট সম্পন্ন হলে ডিজিটাল থার্মোমিটারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপ দেওয়ার সাথে সাথে বের
ধাপ-১০। তারপর থার্মোমিটারটি বের করে তাপমাত্রা দেখ ধাপ-১১।থার্মোমিটারটি হালকা গরম সাবান পানিতে ধৌত কর (কখনই অধিক গরম পানিতে নয়) জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে শুকনো করে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ কর।
ধাপ-১২। গ্লাভস খুলে ফেলে তা নির্ধারিতে বর্জ্য ধারকে রেখে হ্যান্ড ওয়াশ কর।
ধাপ-১৩। টেমপারেচার চার্টে তাপমাত্রা রেকর্ড কর।

জব ১ (ঘ): এক্সিলারী তাপমাত্রা নেওয়া।
ধাপ-১। প্রথমেই সাবান ও পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত ধৌত করা।
ধাপ-২। গ্লাভস পরিধান কর।
ধাপ-৩। তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি একটি ট্রেতে সাজাও।
ধাপ-৪। ডিজিটাল অথবা গ্লাস থার্মোমিটারটি জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিতে হবে।
ধাপ-৫। গ্লাস বা মারকারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে সাবধানে ঝাঁকিয়ে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নীচে নামিয়ে নিয়ে বগলের নীচে থার্মোমিটারটি স্থাপন কর।
ধাপ-৬। রোগীকে বুকের সাথে হাত শক্ত করে চেপে রাখতে বলে ডিজিটাল থার্মোমিটারটি বিপ দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এবং গ্লাস অথবা মারকারি থার্মোমিটারের ক্ষেত্রে তিন থেকে চার মিনিট রেখে দাও ।
ধাপ-৭। নির্ধারিত সময় অপেক্ষা করার পর থার্মোমিটারটি বের কর এবং সঠিক তাপমাত্রাটি দেখে নাও।
ধাপ-৮। থার্মোমিটারটি হালকা গরম সাবান পানিতে ধুয়ে (কখনই অধিক গরম পানিতে নাও)। জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে শুকনো করে নির্দিষ্ট জায়গায় সংরক্ষণ কর।
ধাপ-৯। গ্লাভস খুলে ফেলে তা নির্ধারিত বর্জ্য ধারকে রেখে হ্যান্ড ওয়াশ করা
ধাপ-১০। টেমপারেচার চার্টে তাপমাত্রা রেকর্ড কর।

জব ১ (ঙ): হার্টবিট বা পালস পরিমাপ করার পদ্ধতি
ধাপ-১। প্রথমেই হ্যান্ড ওয়াশিং কর।
ধাপ-২। গ্লাভস পড়ার প্রয়োজন হলে তা পড়ে নাও ।
ধাপ-৩। যে হাত দিয়ে হার্ট বিট ফিল করবে তার অন্য হাতে হাতঘড়ি পরে নিতে হবে।
ধাপ-৪। রোগীর পজিশনিং করে নাও। রোগীর হাতটি একটি টেবিলের উপরে রেষ্টিং অবস্থায় রাখ
ধাপ-৫। ইন্ডেক্স ফিঙ্গার বা মাঝখানের তিন আংগুলের মাঝের আংগুলোটি ব্যবহার কর ও রোগীর কব্জিতে বুড়ো আংগুলের ২ ইঞ্চি নীচে নাড়ি অনুভব না করা অবধি মাঝারি চাপ প্রয়োগ কর।
ধাপ-৬। পুরো এক মিনিট ধরে পালস কাউন্ট কর অথবা ৩০ সেকেন্ড কাউন্ট করে ২ দিয়ে গুণ কর।
ধাপ-৭। পালস রেট রেকর্ড কর।

জব ১ (চ): রক্তচাপ পরিমাপ করা
ধাপ-১। হ্যান্ড ওয়াশ কর।
ধাপ-২। স্টেথোস্কোপের এয়ার পিচ ও ডায়াফ্রাম জীবানুমুক্ত করে নাও।
ধাপ-৩। ব্লাড প্রেসার মনিটর ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা কর।
ধাপ-৪। রোগীকে বসিয়ে অথবা শুইয়ে নাও।
ধাপ-৫। রক্তচাপ মাপার জন্য চাপবিহীন অবস্থায় রক্তচাপ মাপার যন্ত্রের কাফ-এর নিচের প্রান্ত কনুইয়ের সামনের ভাঁজের ২.৫ সে. মি. উপরে ভালোভাবে আটকাও।
ধাপ-৬। কনুইয়ের সামনে হাত দিয়ে ব্রাকিয়াল ধমনীর অবস্থান স্থির করে তার উপর স্টেথোস্কোপের ডায়াফ্রাম বসিয়ে নাও।
ধাপ -৭। ডায়াফ্রাম এমনভাবে চাপ দাও যেন ডায়াফ্রাম এবং ত্বকের মাঝখানে কোনো ফাঁক না থাকে
ধাপ-৮। চাপ মাপার সময় স্টেথোস্কোপের কাপড় কিংবা কাফের ওপরে হাত না রেখে পরবর্তী কাজ কর।
ধাপ-৯। রক্ত চাপমান যন্ত্রের ঘড়ি হৃদপিণ্ডের একই তলে অবস্থান করে নাও ।
ধাপ-১০। এরপর রেডিয়াল ধমনী অনুভব করে ধীরে ধীরে চাপমান যন্ত্রের চাপ বাড়াতে হবে।
ধাপ-১১। রেডিয়াল পালস বন্ধ হওয়ার পর চাপ ৩০ মি. মি. উপরে নাও।
ধাপ-১২। তারপর আস্তে আস্তে চাপ কমাও। প্রতি বিটে সাধারণত ২ মি. মি. চাপ কমানো যেতে পারে।
ধাপ-১৩। এবার চাপ কমানোর সময় স্টেথোস্কোপ দিয়ে ব্রাকিয়াল ধমনীতে সৃষ্ট শব্দ মনোযোগের সঙ্গে শুনো। জেনে রাখ, চাপ কমতে শুরু করলে রক্ত চলাচলের ফলে এক ধরনের শব্দ সৃষ্টি হয়। একে করটকফ শব্দ (Korotkoff sound) বলা হয়। করটকফ শব্দ ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়।
ধাপ-১৪। প্রথমে এক ধরনের যে তীক্ষ্ণ শব্দ পাওয়া যায় এটাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ হিসেবে কাউন্ট কর।
ধাপ-১৫। করটকফ শব্দের তীক্ষ্ণতা ধীরে ধীরে কমে আসতে আসতে এক পর্যায়ে প্রথম পর্যায়ে করটকফ শব্দ থেমে যায়। এই শব্দ বন্ধ হওয়ার আগে যে শব্দ শোনা যায় সেটাকেই ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ হিসেবে কাউন্ট কর।
ধাপ-১৬। বিপি মেশিন খুলে ফেলে পরিমাপ করা ব্লাড প্রেসার রেকর্ড চার্টে লিপিবদ্ধ কর। ধাপ-১৭। কাজ শেষে বিপি ইন্সট্রুমেন্ট নির্ধারিত জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখ।
আরও দেখুনঃ