হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

আজকে আমরা হাউজকিপিং এর কার্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর হাউজকিপিং এর ধারণা অংশের অন্তর্গত।

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

হাউজকিপিং এর প্রাথমিক কার্যাবলির ক্ষেত্রে কেয়ারগিভারকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হয়।

  • নিয়মিত রোগীর রুম, আসবাবপত্র পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার ময়লা হলে বদলে দেওয়া
  • টয়লেটে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম (যেমন, সাবান, তোয়ালে ও টয়লেট পেপার) সরবরাহ করা
  • রুম থেকে আবর্জনার বিন সংগ্রহ করে নির্ধারিত জায়গায় রেখে আসা
  • রোগীর রুমের কিংবা কোনো সরঞ্জামের কোনো ক্ষতি হলে সে সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো
  • রোগী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিশ্চিত করা
  • পরিষ্কার করার সরঞ্জামের (যেমন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার) রক্ষণাবেক্ষণ করা

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

কেয়ারগিভারকে হাসপাতাল ও বাসা দুই জায়গাতেই হাউজকিপিং-এর কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়। যেখানেই হউকনা কেনো কেয়ারভিরের জন্য প্রযোজ্য হাউজকিপিং এর মৌলিক কাজগুলো একই রকম। স্বাস্থ্য খাতে কাজ করতে গেলে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও সংক্রামক রোগ থেকে নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করে যেতে হয়। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও জীবানুমুক্তকরণ একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। এ সম্পর্কে আমরা প্রথম অধ্যায়ে বিস্তারিত জেনেছি। দেখা গেছে কর্মস্থল ও বাসাবাড়িতে কিছু কিছু স্থানে জীবানুর ব্যাপকতর উপস্থিতি বিদ্যমান। যেমন:

১। রোগীর বিছানা ও বালিশ

২। বিছানার পাশের লকার

৩। ব্লাড প্রেসার ও স্টেথোস্কোপ মেশিন

৪। টয়লেট কমোড

৫। দরজার হাতল বা নব

৬। টেলিভিশন রিমোট, টেলিফোন, বেসিন প্রভৃতি।

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

পরিষ্কার করার সাধারণ নিতিমালা:

পরিষ্কারের আগে:

  • অতিরিক্ত সতর্কতা নেয়ার জন্য পরিবেশ পরীক্ষা করতে হবে।
  • নির্দেশিত সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে।
  • পরিষ্কার করার আগে ছড়ানো ছিটানো জিনিষপত্র থাকলে সেগুলো আগেই সরিয়ে বা গুছিয়ে রাখতে হবে।
  • পরিষ্কারক পদার্থ পাতলা করার জন্য প্রস্তুতকারকের নির্দেশাবলি অনুসরণ করতে হবে।
  • ঘরে প্রবেশ করার আগে পরিষ্কারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে।
  • ঘরে ঢোকার আগে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

পরিস্কারের সময়:

  • সর্বনিম্ন নোংরা এলাকা (নিম্ন স্পর্শ) থেকে সর্বাধিক নোংরা এলাকায় (উচ্চ স্পর্শ) এবং উচ্চ পৃষ্ঠ থেকে নিম্ন পৃষ্ঠে পরিষ্কার করতে হবে।
  • পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করার আগে খালি চোখে দেখা যায় এমন বর্জ্য আগে অপসারণ করতে হবে।
  • অণুজীব ছড়ানো রোধ করতে বা কমাতে কোনো কিছু ঝাড়া যাবে না।
  • কখনই মপস ও ডাস্টার ঝাঁকানো যাবে না।
  • ভেজা/স্যাঁতসেঁতে মপ ব্যবহারের আগে শুকনো ডাস্টার দিয়ে মুছে নিতে হবে।
  • ভেজা মোপিং করার আগে পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
  • মপের কাপড় ‘ডাবল-ডিপ’ করা উচিৎ নয় (পরিষ্কার দ্রবণে শুধুমাত্র একবার মপটি ডুবিয়ে নিতে হবে, কারণ এটি একাধিকবার ডুবিয়ে দিলে এটি পুনরায় দূষিত হতে পারে)
  • দ্রবণে মপ পুনরায় ডুবানোর আগে ১২০ বর্গফুট এলাকা মুছতে হবে।
  • ১২০ বর্গফুট এলাকা পরিষ্কার করার পরে পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত তরল পরিবর্তন করতে হবে
  • মপ পরিবর্তন করতে হয় নিম্নোক্ত ঝুঁকির তালিকা অনুযায়ী:
    • উচ্চ ঝুকিপূর্ণ স্থান: প্রত্যেক শিফটে
    • মধ্যম ঝুকিপূর্ণ স্থান: প্রতিদিন
    • নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থান: সপ্তাহে অন্তত একদিন
  •  প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুযায়ী পরিষ্কার সমাধান বা পরিবর্তন করতে হয়। ভারী দুষিত এলাকায় ঘন ঘন, যখন দৃশ্যত নোংরা হয় এবং রক্ত ও শরীরের তরল ছিটকে পরিষ্কার করার পরপরই পরিবর্তন করতে হয়।
  • সূঁচ এবং অন্যান্য ধারালো বস্তুর জন্য সতর্ক থাকতে হবে। পাংচার প্রুফ পাত্রে শাপগুলো নিরাপদে হ্যান্ডেল এবং ডিসপোজ করতে হবে। সুপারভাইজারকে প্রয়োজনে রিপোর্ট করতে হবে।
  • বর্জ্য সংগ্রহ করে নির্দেশিত প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখতে হবে, হাত দিয়ে ময়লাপূর্ণ ব্যাগে সংকুচিত করা
    যাবে না।
  • রোগীর কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

 

পরিস্কারের পর:

  • রুম জিনিসপত্র দিয়ে অতিরিক্ত বোঝাই করা যাবে না।
  • পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো ব্যবহারের পর অবশ্যই পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • মপের মাথা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • পুনঃব্যবহারের আগে সমস্ত ধোয়া মপ হেড অবশ্যই ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

রোগীর থাকার জায়গা পরিষ্কার করা:

বাসা হউক কিংবা হাসপাতালে হউক, রোগীর থাকা ও বিচরন যায়গা পরিষ্কার রাখা কেয়ারগিভারের দায়িত্ব। এ পরিষ্কার করাটা পরিকল্পনা ও নির্দেশনা অনুযায়ী করতে হয়। যেমন :

১। মুল্যায়ন:

  •  অতিরিক্ত সতর্কতা লক্ষণ পরীক্ষা কর এবং নির্দেশিত সতর্কতা অনুসরণ কর।
  • কি প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন (যেমন, টয়লেট পেপার, কাগজের তোয়ালে, সাবান, অ্যালকোহল- ভিত্তিক হ্যান্ড রাব (গ্লাভস, ধারালো পাত্র) এবং কোনো বিশেষ উপকরণ প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করতে রোগীর বা স্বজনদের সাথে কথা বলতে হবে এবং নিজে পর্যালোচনা করতে হবে।

২। সরবরাহ সংগ্রহ:

  • পরিষ্কার কাপড়ের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  • প্রস্তুতকারকের নির্দেশ অনুসারে নতুন জীবাণুনাশক দ্রবন প্রস্তুত করতে হবে।

৩। গ্লাভস:

  • হাত ধুয়ে গ্লাভস পরে নিতে হবে।

 

হাউজকিপিং এর কার্যাবলি

 

৪। পরিষ্কার ঘর, পরিষ্কার থেকে নোংরা এবং ঘরের উঁচু থেকে নিচু যায়গায় কাজ করা:

  •  প্রতিটি রোগীর বিছানার জায়গা পরিষ্কার করার জন্য ভালো কাপড় ব্যবহার করতে হবে
  • দরজা, দরজার হাতল, পুশ প্লেট এবং ফ্রেমের স্পর্শ করা জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে হয় আগে।
  • দৃশ্যমান ময়লা আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
  • বৈদ্যুতিক সুইচ পরিষ্কার করতে হবে।
  • চেয়ার, জানালার সিল, টেলিভিশন, টেলিফোন, কম্পিউটার কীপ্যাড, ওভার বেড টেবিল ইত্যাদি সহ রুমের সমস্ত আসবাব এবং অনুভূমিক পৃষ্ঠগুলো পরিষ্কার করতে হবে।
  • সাকশন বোতলের উপরিভাগ, ইন্টারকম এবং রক্তচাপ ম্যানোমিটারের পাশাপাশি স্যালাইনের স্টান্ড
    থাকলে সেগুলো মুছতে হবে।
  • বেডরেইল এবং কলিং বেল পরিষ্কার করতে হবে।
  •  বাথরুম ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
  • ঘরের মেঝে ভালোভাবে পরিষ্কার ও জীবানুমক্ত করতে হবে।

 

৫। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:

  • ময়লা কাপড় ধোয়ার জন্য নির্ধারিত পাত্রে করতে হবে।
  • ধারালো বর্জ্য রাখার পাত্র দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হলেই সেগুলো যথাস্থানে ফেলে পাত্রটি খালি করতে হবে।
  • নির্ধারিত কালার কোডের বিনে বর্জ্য ফেলতে হবে।
  • নিয়মিতভাবে বর্জ্য অপসারণ করতে হবে।

 

৬। পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত:

  • সবশেষে নিজেকে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

 

৭। পরিষ্কারক জিনিসপত্র সরবরাহ:

  • প্রয়োজন অনুযায়ী পরিষ্কারক জিনিসপত্র সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেমন: টিস্যু, সাবান, ডিটারজেন্ট, গ্লাস ক্লিনার, টাওয়েল, মপ, ডাস্টার প্রভৃতি।

 

 

 

 

আরও দেখুনঃ