সন্ধিস্থল থেকে হাড় স্থানচ্যুত হওয়া

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় সন্ধিস্থল থেকে হাড় স্থানচ্যুত হওয়া – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।

সন্ধিস্থল থেকে হাড় স্থানচ্যুত হওয়া

 

সন্ধিস্থল থেকে হাড় স্থানচ্যুত হওয়া

 

কখনো কখনো মারাত্মক আঘাত, পড়ে গিয়ে বা অস্বাভাবিক টানের ফলে জয়েন্ট থেকে হাড় সরে যেতে পারে। এ ধরনের সরে যাওয়া সাধারণত কাধের জয়েন্ট (সোল্ডার জয়েন্ট), হাঁটু, চোয়াল, আঙ্গুল এবং মেরুদন্ডের জয়েন্টে ঘটে থাকে।

এ অবস্থায় খুব ব্যথা থাকে এবং জয়েন্টের আশেপাশের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ অবশ বা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। হাড় সরে যাওয়ার সাথে কখনো কখনো হাড় ভেঙ্গেও যেতে পারে। হাড় সরে যাওয়া এবং ভাঙ্গা নির্ণয় করতে একজন প্রাথমিক চিকিৎসকের অসুবিধা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে হাড় ভেঙ্গে যাওয়া হিসেবে বিবেচনা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

লক্ষণ

  • প্রচন্ড ব্যথা
  • জয়েন্টটি নাড়াতে পারবে না
  • জয়েন্টেটি ফুলে যাবে এবং কালচে হয়ে যেতে পারে
  • স্থানটিকে অস্বাভাবিক দেখাবে।

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটির নড়াচড়া রোধ করা
  • যথাযথ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে প্রেরণ।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • ব্যক্তিকে স্থির থাকতে বল। ব্যক্তি যে অবস্থায় আরামবোধ করেন, সে অবস্থায় থাকতে বল।
  • হাতের জন্য ফিক্সিং এবং পায়ের জন্য ব্রড-ফোল্ড ব্যবহার করে অনড় কর। প্রয়োজনে প্যাড ব্যবহার করবে এবং হাতের ক্ষেত্রেও ব্রড-ফোল্ড ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা যাবে।
  • হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা কর। প্রয়োজনে শকের প্রাথমিক চিকিৎসা দাও।
  • ব্যান্ডেজের নিচে কোনো স্থানে প্রতি ১০ মিনিট পরপর রক্ত চলাচল পরীক্ষা কর। প্রয়োজনে ব্যান্ডেজ টিলা করে দিন।
  • মনিটর কর- শ্বাস-প্রশ্বাস, পাল্স সাড়া দেওয়ার পর্যায়।

সাবধানতা

  • সরে যাওয়া হাড় টিকে যথাস্থানে বসানোর চেষ্টা করবে না। আরো বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
  • সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্ন করার আগে স্থানান্তর করবে না ।
  • হাতের হাড় সরে গেলে আংটি, ঘড়ি, চুড়ি খুলে ফেলুন। তা না হলে অংশটি ফুলে গিয়ে অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।
  • ব্যক্তিকে কোনো প্রকার পানীয় বা খাবার দিবে না। হাসপাতালে ব্যক্তিকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হতে পারে।

মচকানো (Sprain)

কোনো সন্ধিস্থলের হাড়ের চারপাশের নরম গঠনের উপর যদি হঠাৎ সজোরে কোনো আঘাত, ধাক্কা বা চাপ লাগে তবে ঐ স্থানের লিগামেন্ট, টেন্ডন ও মাংসপেশির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে, এ অবস্থাকে মচকানো বলে। এ ধরনের আঘাত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলাধূলার সময় লক্ষ করা যায়। সহজে মনে রাখার জন্য Rice শব্দটি ব্যবহার করে মচকানোর প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়-

  • R = Rest the injured part, আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটিকে অনড় রাখা।
  • I = Apply Ice pack or cold pad, বরফ বা ঠাণ্ডা পানির সেঁক দেওয়া ।
  • C = Provide Comfortable support, আরামদায়ক ব্যবস্থা করা।
  • E = Elevate the injured part, আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটিকে উঁচুতে রাখা।

সাবধানতা

  • মুখে কোনো খাবার বা পানীয় না দেওয়া। কারণ ভাঙ্গা স্থানে অপারেশনের জন্য ব্যক্তিকে অজ্ঞান করা প্রয়োজন হতে পারে।
  • ভাঙ্গা স্থানটি যথাসম্ভব নড়াচড়া না করে ব্যান্ডেজ বাধা।
  • উন্মুক্ত হাড় ভাঙ্গায় রক্তক্ষরণ হলে, আগে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে তারপর ভাঙ্গা স্থানটি অনড় করা।
  • কোমর ও পায়ের হাড় ভাঙ্গার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে দাঁড়াতে না দেওয়া।
  • ব্যক্তি শকপ্রাপ্ত হলে, শকের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া। তবে কোমর ও পায়ের হাড় ভাঙ্গার ক্ষেত্রে পা উপরে উত্তোলন করা যাবে না।
  • ব্যক্তিকে ব্যান্ডেজ বাধা ও পরিবহনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে আরামদায়ক অবস্থায় থাকে।

মেরুদন্ডে আঘাত বা হাড় ভেঙ্গে যাওয়া (Spinal injury / Fracture )

মানব দেহের মেরুদন্ডে মোট ৩৩টি হাড় আছে। প্রতি দু’টি হাড়ের মাঝে আছে ডিস্ক নামক এক ধরনের টিস্যু। হাড়গুলো মাংসপেশি ও লিগামেন্ট দ্বারা সংযুক্ত ও সুরক্ষিত থাকে। হাড়ের মাঝের ছিদ্র দিয়ে মস্তিষ্ক থেকে নিতম্ব পর্যন্ত মেরুরজ্জু অবস্থান করে। মেরুরজ্জু থেকে স্নায়ু বেরিয়ে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করে।

মেরুদন্ডের হাড়ে আঘাত, হাড় ভেঙ্গে যাওয়া এবং মেরুরজ্জুতে আঘাত অত্যন্ত মারাত্মক। এ সকল ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মেরুদন্ডে আঘাত বা হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার কতিপয় কারণ

  • উচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া
  • পিঠে সজোরে আঘাত
  • মটোর সাইকেল দুর্ঘটনা।
  • লক্ষণ -ঘাড়ে বা পিঠে ব্যথা
  • মেরুদন্ডের স্বাভাবিক বক্রতা পরিবর্তিত হওয়া।
  • মেরুরজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে-হাত পায়ের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাবে, অনুভুতি কমে যাবে বা জ্বলে যাওয়ার মতো অনুভতি হতে পারে, হাত পা শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হতে পারে। মলমূত্র ত্যাগ করতে পারে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। মেরুদন্ডে আঘাত/হাড় ভেঙ্গে যাওয়া সজ্ঞান ব্যক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • আঘাতের সুরক্ষা করা
  • জরুরিভাবে হাসপাতালে প্রেরণ।

প্রাথমিক চিকিৎসা

  • ব্যক্তিকে আশ্বস্ত কর
  • হাসপাতালে প্রেরণের লক্ষ্যে যোগাযোগ সম্পন্ন কর
  • ব্যক্তির মাথার পেছনে হাঁটু গেড়ে কনুই মেঝেতে রেখে বসুন। দুই হাতের আঙ্গুল ফাঁক করে ব্যক্তির মাথার দুই পাশে ধর। লক্ষ রাখ ব্যক্তির কান যেন মুক্ত থাকে। ব্যক্তির মাথা, ঘাড় এবং মেরুদন্ড স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে থাকে সেভাবে রাখার চেষ্টা কর।
  • তুমি ব্যক্তির মাথা ধরে রাখা অবস্থায় একজন সহযোগীকে মাথার দুই পাশে কম্বল বা তোয়ালে দিয়ে বানানো রোল দিতে বল।
  • হাসপাতালে পৌঁছানো পর্যন্ত তুমি ব্যক্তির মাথা ধরে রাখ এবং তোমার সহযোগীকে মনিটর করতে বল|

সাবধানতা

  • ব্যক্তিকে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় যেখানে অবস্থান করছে, কোন প্রকার কারণ ছাড়া সেখান থেকে সরানোর প্রয়োজন নেই। তাতে আঘাতের পরিমাণ বাড়তে পারে।
  • একান্তই যদি সরাতে হয় তাহলে লগ-রোল কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

লগ-রোল কৌশল

মেরুদন্ডে আঘাত/হাড় ভেঙ্গে যাওয়া ব্যক্তিকে কাত করানোর জন্য এই কৌশলটি অবলম্বন করা হয়। প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসক ব্যক্তির মাথা ও ঘাড় সুরক্ষা করবে। সহযোগীরা ব্যক্তির পা সোজা করে দিবে। ব্যক্তিকে যে পাশে কাত করাতে হবে তিনজন সহযোগী ব্যক্তির সে পাশে এবং দু’জন অপর পাশে অবস্থান নিবে।

তিনজনের যে পায়ের দিকে আছে সে ব্যক্তির দূরের পায়ের নিচে হাত রাখবে, যে মাঝখানে আছে সে ব্যক্তির দূরের পায়ের নিচে ও কোমরে হাত রাখবে এবং যিনি মাথার পাশে আছেন তিনি ব্যক্তির কাঁধে ও পিঠে হাত রাখবে। এবার ব্যক্তিকে তিনজন তাদের পাশে কাত করানোর জন্য টানবেন।

 

সন্ধিস্থল থেকে হাড় স্থানচ্যুত হওয়া

 

অপর পাশের দু’জন এ কাজে সহায়তা করবেন। মাথার পেছনে থাকা প্রধান প্রাথমিক চিকিৎসক শরীরের সাথে সঙ্গতি রেখে মাথা ও ঘাড় ঘুরাতে সহায়তা করবে। কাত করার পর মেরুদন্ডের সাথে সঙ্গতি রাখার জন্য উপরের পাটিকে সামান্য উঁচু করে রাখা প্রয়োজন।

আরও দেখুন:

Leave a Comment