আজকে আমরা হাসপাতালে প্রদত্ত সেবাসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করবো। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর পেশেন্ট কেয়ার টেকনিকের প্রাথমিক ধারণা অংশের অন্তর্গত।

হাসপাতালে প্রদত্ত সেবাসমূহ
একটি হাসপাতাল বা ক্লিনিক রোগীর প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালসমুহে সাধারণত সব ধরনের রোগিকেই চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। একইভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গুলোতেও সব ধরনের রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিভাগীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত বা স্পেশালাইজ্ড হাসপাতালসমূহে নির্দিষ্ট ধরনের রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হয় যেমন: জাতীয় মানসিক হাসপাতালে শুধু মানসিকভাবে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
আবার একইভাবে, জাতীয় কিডনি হাসপাতালে শুধুমাত্র কিডনী রোগী, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে শুধুমাত্র হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদেরকে সেবা দেওয়া হয়। একইভাবে নাক-কান-গলা, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক প্রভৃতি নির্দিষ্ট অরগান বা অঙ্গ সংশ্লিষ্ট রোগের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।
আবার মেডিকেল কলেজ বা জেনারেল হাসপাতালসমূহে বিশেষায়িত রোগীর পাশাপাশি সাধারণ সকল ধরনের রোগীর জন্য চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল প্রভৃতি।

নিম্নে একটি বৃহৎ হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে তার একটি তালিকা প্রদান করা হলো:
ইমার্জেন্সি বা জরুরি বিভাগ
যেকোনো সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতালেই জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যায় আগত রোগীদের তাতক্ষনিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি বা জরুরি বিভাগ চালু থাকে। এখানে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংক্ষক ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্স, আন্না, ওয়ার্ডবয় ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী সবসময়ই থাকতে হয়। যেকোনো হাসপাতালের সবচে’ ব্যস্ততম বিভাগ হলো এই জরুরি বিভাগ। এখানে বিভিন্ন জরুরি সমস্যা নিয়ে রোগী আসলেও সড়ক বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার আহত ব্যক্তিরাই বেশি আসেন। এছাড়াও হার্ট এটাক, ব্রেইন স্ট্রোক এধরনের রোগীও এসে থাকেন।

বহির্বিভাগ
বহির্বিভাগ সেবা একটি হাসপাতালের নিয়মিত সেবাদান পদ্ধতি। এখানে রোগীরা তাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে এসে টিকেট কাটার পর নির্দিষ্ট ডাক্তারের সাথে কথা বলার জন্য লাইনে অপেক্ষা করে।
সাধারণত যে সকল সমস্যা আপাতত তেমন ইমার্জেন্সি নয় সেগুলোই বহির্বিভাগে দেখানোর উপযোগী। বহির্বিভাগে রোগীর জন্য কোনো শয্যা বা রাত্রিযাপনের ব্যবস্থার প্রয়োজন পরেনা। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী যদি কোনো রোগীর ভর্তির প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে অন্তঃবিভাগ বা ইনডোর সেবার জন্য ব্যবস্থা নিতে হয়। কিংবা কিছু নির্দেশনা গ্রহণ করে রোগী বাসায় চলে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার ফলো আপ ডিজিটে আসেন।
অন্তঃবিভাগ বা ইনডোর
হাসপাতাল অন্তঃবিভাগ:
ভর্তিকৃত রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয় এখানে। রোগীর সমস্যা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ইনডোর বা অন্তঃবিভাগ রয়েছে। যেমন:
- মেডিসিন বিভাগ- যেখানে শুধু ঔষধ বা ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা পাবে এরকম রোগীকে ভর্তি রাখা হয়।
- সার্জারি ইউনিটে অপারেশনের রোগীদেরকে রাখা হয়।
- শিশু বিভাগ অসুস্থ শিশুদেরকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
- গাইনি ওয়ার্ডে প্রসুতি এবং গাইনি সমস্যা নিয়ে আলা মায়েদের রাখা হয়।

প্যালিয়েটিভ কেয়ার:
এখানে গুরুত্বর অসুস্থ রোগী যেমন ক্যান্সারে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ এরকম ব্যক্তিকে রেখে উপশমকারী সেবা বা প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়।
অপারেশন থিয়েটার:
ছোট বড় বিভিন্ন স্পেশালিটির অপারেশনের সুবিধাগুলো বড় বড় হাসপাতালে থাকে। বিশেষজ্ঞ সার্জনের নেতৃত্বে তার দল এই কাজগুলো করে থাকে।
এছাড়াও থাকে প্যাথোলজি বিভাগ যেখানে রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন নমুনা পাঠানো হয়। ফার্মেসি ডিপার্টমেন্ট থাকে যেখানে রোগীদের জন্য ওষধ-পত্র পাওয়া যায়। রোগীদের পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার জন্য থাকে ফুড এন্ড ডায়েট ডিপার্টমেন্ট। বড় বড় সরকারি হাসপাতাল গুলোতে অসহায় ও দুঃস্থ রোগীর আর্থিক সহায়তার জন্য থাকে সমাজ কল্যাণ বিভাগ যেগুলো সাধারণত বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন পরিচালিত।
আরও দেখুনঃ
1 thought on “হাসপাতালে প্রদত্ত সেবাসমূহ”