হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতি

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতি – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।

হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতি

 

হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতি

 

সিপিআর কি?

হঠাৎ কোনো কারণে যদি একজন মানুষের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাইরে থেকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস ও হৃৎপিন্ড চালু করার পদ্ধতিকে সিপিআর বলে।

শ্বাস বন্ধ হওয়ার কারণ

  • যদি নাক ও মুখ কোনো কিছু দ্বারা বন্ধ থাকে
  • যদি কোনো ব্যক্তি পানিতে ডুবে যায়
  • যদি কোনো ব্যক্তি ধোঁয়াপূর্ণ ঘরে আটকে পড়ে
  • যদি কোনো ব্যক্তির শ্বাস নেওয়ার মত পর্যাপ্ত শক্তি না থাকে
  • যদি কোনো ব্যক্তির বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়
  • কোনো স্থানে অক্সিজেনের স্বল্পতা/শূন্যতা দেখা দিলে
  • কোনো ব্যক্তির জিভ উল্টে শ্বাসনালি বন্ধ হলে

শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার গুরুত্ব

যদি কারো স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে জরুরিভিত্তিতে কৃত্রিম উপায়ে তার শ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হবে। অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হলে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যক্তি সম্প,র্ণভাবে জ্ঞান হারাবে এবং হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎপিন্ড বন্ধ হওয়া অবস্থায় ৪-৫ মিনিট অতিক্রম হলে, তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যার ফলে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে বাচিয়ে রাখার জন্য কৃত্রিমভাবে তার ফুসফুস ও হৃৎপিন্ড চালু রাখা খুবই জরুরি।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

শ্বাসনালি খুলে দেওয়া

একজন আহত বা অসুস্থ ব্যক্তি, বিশেষ করে তিনি যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকেন তাহলে তার মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে আসে। ফলে মুখের ভেতরে জিভ পেছন দিকে ঝুঁকে পড়ে। শ্বাসনালির পথ আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

এ অবস্থায় ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় এবং শব্দ হতে থাকে। এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তখন ঐ ব্যক্তির মাথা (ছবির ন্যায়) পেছন দিকে টেনে, থুতনি উপরের দিকে তুলে ধরলে জিভ দ্বারা বন্ধ হওয়া শ্বাসনালি খুলে যায়।

শ্বাসনালি খুলে দেওয়া কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার ৩টি পদ্ধতি

কৃত্রিম শ্বাস দেওয়ার মৌলিক বিষয়টি হলো একজন প্রাথমিক চিকিৎসক শ্বাস গ্রহণ করার পর নির্গত শ্বাস আহত/অসুস্থ ব্যক্তির ফুসফুসে ঢুকিয়ে দেওয়া। আমরা যখন বাতাস থেকে শ্বাস গ্রহণ করি তাতে প্রায় ২১% অক্সিজেন থাকে। যখন শ্বাস নির্গত করি তাতে ১৬% অক্সিজেন থাকে, যা একজন আহত/অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার জন্য যথেষ্ট। তিনটি পদ্ধতিতে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া হয়ে থাকে।

 

  • মুখ থেকে মুখে (Mouth to Mouth)
  • মুখ থেকে নাকে (Mouth to Nose)
  • মুখ থেকে নাকে ও মুখে একসাথে (Mouth to Nose and Mouth) ০-১২ মাসের শিশুদের জন্য

হৃৎপিন্ড ও শ্বাস চালু করার পদ্ধতি

অজ্ঞান কিনা তা নিশ্চিত হওয়া:

প্রাথমিক জ্ঞান প্রয়োগ করে কোনো ব্যক্তির অজ্ঞান অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। যখনই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ঐ ব্যক্তি অজ্ঞান, সাথে সাথে শ্বাস প্রয়োগ করতে হবে এবং তার শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে ও কিছু আটকে থাকলে তা বের করে আনার চেষ্টা করতে হবে।

 

হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস পুনঃসঞ্চালন পদ্ধতি

 

শ্বাসনালি ভালো রাখার প্রয়োজনীয়তা:

একজন অজ্ঞান ব্যক্তির শ্বাসনালি সবসময়ই বিপদাপন্ন। শব্দ যুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাস হতে পারে, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধও হয়ে যেতে পারে। তখন থুতনি উঁচু করে, মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিলে শ্বাসনালি থেকে জিভ সরে এসে শ্বাসনালিকে উন্মুক্ত করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সহজতর হয়।

শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা:

শ্বাসনালি খোলা রেখে ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে অর্থাৎ দেখতে হবে ঐ ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা। দেখা শোনা ও অনুভবের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা করতে হবে। ১০ সেকেন্ড ধরে এই শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে।

শ্বাস পরীক্ষা পদ্ধতি:

সহজে মনে রাখার জন্য নিচের শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

  • Look (দেখা)- বুক ওঠানামা করছে কিনা
  • Listen (শোনা)- নাক থেকে আসা বাতাসের শব্দ শোনা যায় কিনা।
  • Feel (অনুভব করা)- নাক থেকে আসা কিছুটা উষ্ণ বাতাস গাল দিয়ে অনুভব করা যায় কিনা। যদি ব্যক্তির শ্বাস চালু থাকে তাহলে তাকে রিকভারি পজিশনে শুইয়ে দিতে হবে এবং ব্যক্তিকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, তার অন্য কোনো বড় ধরনের আঘাত আছে কিনা। আর যদি ব্যক্তির শ্বাস বন্ধ থাকে তাহলে তার রক্ত সঞ্চালনও বন্ধ হয়ে যায়, এমতাবস্থায় দ্রুত বুকে চাপ দিতে হবে অর্থাৎ সিপিআর শুরু করতে হবে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের ধারণ ক্ষমতা কম বিধায় শিশুদের শ্বাস বন্ধ থাকলে প্রথমে ৫টি ফুঁ দিয়ে বুকে চাপ শুরু করতে হবে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment