আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ইনটেক ও আউটপুট চার্ট – যা ক্লিনিক্যাল কেয়ার সাপোর্ট এর অন্তর্ভুক্ত |
ইনটেক ও আউটপুট চার্ট
কোনো রোগী গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের (মুখের) অথবা শিরাপথ (প্যারেন্টালি) -এর মাধ্যমে যেসব তরল/খাবার আকারে গ্রহণ করে (ইনটেক) এবং যা কিছু নিষ্কাশিত বা অপসারণ (আউটপুট) করে তা যে চার্টে বা টুলসে রেকর্ড করা হয় তাকে ইনটেক এবং আউটপুট চার্ট বলে।
কখনও কখনও এটি ফ্লুয়েড-ব্যালেন্স চার্ট হিসাবেও পরিচিত। সাধারণত মিলিলিটার (ml) হিসেবে ইনটেক ও আউটপুট চার্টে পরিমাণ লিখা হয়।
ইনটেক ও আউটপুট মনিটরিং-এর গুরুত্ব
ইনটেক ও আউটপুট মনিটরিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লিনিকাল কেয়ার প্রক্রিয়া যা রোগের –
ক) অগ্রগতি এবং উপকারের পাশাপাশি চিকিৎসার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলো নির্ধারণে সহায়তাকরে।
খ)ইনটেক ও আউটপুট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কেয়ারগিভারগণ স্বাস্থ্যসেবার সাথে সাথে রোগীর তরল ও পুষ্টির সঠিক চাহিদা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
গ) আউটপুট পরিমাপ পর্যবেক্ষণ করে প্রস্রাবের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্বাভাবিক মলত্যাগ করছে কিনা তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করে।মোটকথা ইনটেক ও আউটপুট মনিটরিং চিকিৎসা- প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।
ইনটেক হিসেবে যা পরিমাপ করা হয়
ইনটেক হিসেবে যেসব জিনিস পরিমাপ করা হয় তা হল
ক) ওরাল ইনটেক,
খ) টিউব ফিডিংস,
গ) ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড,
ঘ) মেডিকেশন,
ঙ) টোটাল প্যারেন্টেরাল নিউট্রিশন,
চ) ব্লাড প্রোডাক্টস,
ছ) ডায়লাইসিস ফ্লুইডস ইত্যাদি।
আউটপুট হিসেবে যা পরিমাপ করা হয়
আউটপুট হিসেবে যেসব জিনিস পরিমাপ করা হয় তা হল-
ক) ইউরিন,
খ) তরল পায়খানা
গ) বমি,
ঘ) চেষ্ট ড্রেইনেজ ইত্যাদি।
ইউরিন পরিমাপ ও স্যাম্পল গ্রহণ
বিভিন্ন প্রকার রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ইউরিন খুবই উল্লেখযোগ্য একটি স্যাম্পল বা নমুনা। ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাই কেয়ারগিভারকে প্রায়শই ইউরিন বা প্রস্রাবের স্যাম্পল নিতে হয়। আবার নির্দেশনা অনুযায়ী পরিমাপ করতে হয় শরীর থেকে কতটুকু তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে গেছে সেটিও।
এক্ষেত্রে যে রোগী সজাগ, সতর্ক এবং নিজে নিজেই প্রস্রাব করতে পারেন, তিনি প্রতিবার প্রস্রাব করার সময় একটি ইউরিনাল বা বোতলে প্রস্রাব সংগ্রহ করতে পারেন।
কেয়ারগিভারও এ কাজে সহযোগীতা করতে পারেন। আবার, যে সমস্ত রোগীর প্রস্রাবে সমস্যা হয়, তাদেরকে অনেক সময় ডাক্তার-নার্সরা কেথেটার পরিয়ে দেন। অনেক সময় আবার অপারেশনের আগে ব্লাডার বা মূত্রথলি খালি করতেও এটি ব্যবহৃত হয়।
ইউরিনারি কেথেটার হচ্ছে রাবার বা সিলিকোনের তৈরি বিশেষ এক ধরনের নল যেটি মূত্রনালী দিয়ে প্রবেশ করানো হয় যেখান দিয়ে প্রস্রাব এশে এর সাথে সংযুক্ত একটি ব্যাগে জমা হয়। এই ব্যাগটিকে বলা হয় ইউরোব্যাগ |

ইউরোব্যাগে মিশিশিটার এককে দাগ কাটা থাকে যেটা দেখে ঘন্টায় ইউরিন আউটপুট কত হলো তা দেখা যায় এবং প্রয়োজনমত ইউরিন স্যাম্পলও নেয়া যায়। সাধারণত ১০০০ মিলি. বা ১ মিটার পর্যন্ত প্রথা এখানে জা হতে পারে।
তাই ইউরোব্যাপটি পূর্ণ হয়ে গেলে এটি পরিষ্কার করে আবার লাগিয়ে দেওয়া কেয়ারপিভারের দায়িত্ব। সেই সাথে কখনো কখনো নতুন ইউরোব্যাগ সংযুক্ত করতে হয়। নিচে একটি কেথেটারাইজড রোগীর ইউরোব্যাগ থেকে আউটপুট দেখা ও ইউরিন স্যাম্পল সংগ্রহের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:
১. প্রথমেই সঠিক উপায়ে হ্যান্ড ওয়াশ করে পিপিই পরে নিতে হবে।
২. স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় কৌটা বা পাত্র এবং অন্যান্য উপকরণ সঙ্গে নিতে হবে।
৩. রোগীর কাছে গিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে অনুমতি নিতে হবে এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটি রোগীকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
৪. রোগীর আরামদায়ক অবস্থানে রেখে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে ।

৫. কতক্ষণ আগে ইউরিন ব্যাগ সংযুক্ত করা হয়েছিলো সেটি জেনে নিতে হবে এবং সর্বেশেষ ইউরিনের পরিমাণ দেখে ইউরিন আউটপুট কত হলো তা দেখে নিতে হবে।
৬. স্যাম্পল কালেকশনের নির্দেশনা থাকলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্যাম্পল কালেকশন করে নিতে হবে। এজন্য ইউরোব্যাগের চাবি সাবধানতার সাথে খুলতে হবে যাতে করে প্রস্রাব রোগীর শরীরে বা আশেপাশে
ছড়িয়ে না যায়।
৭. ইউরিন দ্বারা ইউরোব্যাগ পরিপূর্ণ হয়ে যাবার মত মনে হলে ব্যাগটি সাবধানে খুলে নিয়ে প্রস্রাবটুকু
টয়লেটে ফেলে দিয়ে পরিষ্কার ব্যাগ বা নতুন ইউরোব্যাগ আবার লাগিয়ে দিতে হবে।
৮. ক্যাথেটারের টিউব ধরে টানাটানি করা যাবেনা এবং রোগীর কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে
নিশ্চিত হতে হবে।
৯. সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে ইনটেক-আউটপুট চার্টে ইউরিন আউটপুটের পরিমাণ ও সময় লিখে রাখতে হবে।
১০. গৃহীত স্যাম্পল কৌটায় সঠিকভাবে ল্যাবেল করে ল্যাবে পাঠাতে হবে।
কোলোস্টোনি ব্যাগ:
কোলোস্টোমি ব্যাগ হচ্ছে ঘাটিকের তৈরি বিশেষ এক ধরনের ব্যাগ যেটিকে রোগীর পেটের উপর দিয়ে অন্ত্রের সাথে সংযুক্ত করে মল পদার্থ সংগ্রহ করা হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার একটি ছোট অপারেশনের মাধ্যমে এই কাজটি করে থাকেন। সাধারণত নিম্নোক্ত সমস্যা আছে এরকম রোগীদের ক্ষেত্রে কোলোক্টোমি ব্যাগ প্রয়োজন হয়।
- অস্ত্রের গুরুতর ইনফেকশন যেমন: ডাইভার্টিকুলাস
- ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিস
- কোলন বা অস্ত্রের আঘাত
- মলদ্বার বা কোলনের কোনো অংশে অবস্ট্রাকশন (ৰামা) বা ইনফেকশন এবং এনাল ফিস্টুলা ।

কোলোস্টোমি ব্যাগের যত্ন নেয়া:
১. প্রথমেই সঠিক উপায়ে হ্যান্ড ওয়াশ করে পিপিই পরে নিতে হবে।
২. স্যাম্পল সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় কৌটা বা পাত্র এবং অন্যান্য উপকরন সঙ্গে নিতে হবে।
৩. রোগীর কাছে গিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে অনুমতি নিতে হবে এবং সমগ্র প্রক্রিয়াটি রোগীকে
বুঝিয়ে বলতে হবে।
৪. রোগীর আরামদায়ক অবস্থানে রেখে প্রাইভেসি বা গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. কবে কোলোক্টোমি ব্যাগ সংযুক্ত করা হয়েছিলো সেটি জেনে নিতে হবে এবং সর্বেশেষ পরিমাপ দেখে আউটপুট কত হলো তা দেখে নিতে হবে।
৬. স্যাম্পল কালেকশনের নির্দেশনা থাকলে প্রয়োজনীয় পরিমাণ স্যাম্পল কালেকশন করে নিতে হবে।
৭. সাবধানতার সাথে কোলোক্টোমি ব্যাগের পাউচ সরিয়ে ব্যাগটি খুলে নিয়ে আসতে হবে। স্টোমা ও চামড়ার চারপাশ পরিষ্কার পানিতে জীবাণুমুক্ত পক্ষের টুকরা দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৮. পুরানো ব্যাগটি সঠিক উপায়ে ডিজপোস করে নতুন ব্যাগটি সংযুক্ত করে দিতে হবে।
৯. যংযুক্ত ব্যাগ ধরে টানাটানি করা যাবেনা এবং রোগীর কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।
৯. সমস্ত প্রক্রিয়া শেষে ইনটেক-আউটপুট চার্টে স্টুল আউটপুটের পরিমাণ ও সময় লিখে রাখতে হবে।
১০. গৃহীত স্যাম্পল কৌটায় সঠিকভাবে ল্যাবেল করে ল্যাবে পাঠাতে হবে।
আরও দেখুনঃ