রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা – যা প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এর অন্তর্ভুক্ত।

রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুসের শরীরে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্তের বিবিধ কাজের মধ্যে একটি অন্যতম কাজ হচ্ছে শরীরের সর্বত্র অক্সিজের পৌঁছে দেওয়া। কোন কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মস্তিষ্ক অক্সিজেন থেকে বঞ্চিত হবে, ব্যক্তি শক অবস্থা থেকে অবশেষে মারা যেতে পারে। তাই প্রাথমিক চিকিৎসায় রক্তক্ষরণের ব্যবস্থাপনা একটি জরুরি বিষয়।

রক্তক্ষরণের প্রকারভেদ

১. বাহ্যিক রক্তক্ষরণ

২. অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ

দৃষ্টমান: চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, নাক-কান-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ, মল-মুত্র বমির সাথে রক্তক্ষরণ, যোনীপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

অদৃষ্টমান: মস্তিষ্কের ভিতর রক্তপাত, গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

প্রাথমিক চিকিৎসকের লক্ষ্য

  • রক্তক্ষরণ বন্ধ করা
  • শকের আশঙ্কা প্রতিরোধ করা
  • সংক্রমণ প্রতিরোধ করা
  • দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

বাহ্যিক রক্তক্ষণের প্রাথমিক চিকিৎসা

১। প্রয়োজনে পরিহিত কাপড় কেটে সরিয়ে ফেলে ক্ষতস্থানটি ভালোভাবে দৃষ্টির মধ্যে আনুন।

২। ব্যক্তিকে একটি কম্বল বা তোষকের উপর শোয়াতে হবে, তাতে করে ব্যক্তির শরীরে মেঝের ঠাণ্ডা প্রতিরোধ করা যাবে। শক প্রতিরোধের জন্য ব্যক্তির পা মাথার তুলনায় উঁচুতে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩। হাসপাতালে প্রেরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত কর।

৪। রক্তক্ষরণের স্থানটিকে উপরের দিকে রাখার জন্য প্রয়োজনে স্লিং ব্যবহার কর। পরবর্তীতে ব্যান্ডেজের স্থানে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক আছে কিনা তা প্রতি ১০ মিনিট পরপর পরীক্ষা কর। (এ ক্ষেত্রে ব্যান্ডেজের স্থানে নাড়ি বা পাল্স পরীক্ষা করতে হবে) ব্যান্ডেজটি সামান্য ঢিলা করে দাও। রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকবে।

৫। রক্তক্ষরণের স্থানটি সরাসরি চেপে ধর। রক্তক্ষরণের স্থানটির উপর একটি জীবাণুমুক্ত গজ বা প্যাড ব্যবহার করে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধর। যদি জীবাণুমুক্ত গজ বা প্যাড পাওয়া যায় তাহলে ব্যক্তিকেই বল নিজের রক্তক্ষরণের স্থানটি চেপে ধরতে। রক্তক্ষরণের স্থানে যদি কোনো কিছু ঢুকে গিয়ে থাকে তাহলে বস্তুটিকে যথাস্থানে রেখে তার উভয় পাশে চাপ দিতে হবে।

৬। কাটা স্থানটি হৃদপিণ্ডের তুলনায় উপরে উত্তোলন (হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে) করতে হবে।

৭। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে, প্রথম ব্যান্ডেজের উপর দ্বিতীয় আর একটি চাপ ব্যান্ডেজ প্রয়োগ কর। প্রয়োজনে তারপরও যদি রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তাহলে পূর্বের ব্যান্ডেজ না সরিয়ে পুনরায় চাপ ব্যান্ডেজ প্রয়োগ কর। লক্ষ্য রাখবে রক্তক্ষরণের সঠিক স্থানে যেন ব্যান্ডেজটি করা হয়।

৮। উপরোক্ত ব্যবস্থার পরও যদি রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয় তাহলে চাপ বিন্দুতে (Pressure point) চাপ প্রয়োগ করতে হবে (হাত ও পায়ের ক্ষেত্রে)।

প্রেসার পয়েন্ট বা চাপ বিন্দুতে চেপে ধরে হাত ও পায়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা যেতে পারে। রক্তক্ষরণের প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি রক্তক্ষরণ বন্ধ না হয় তখন চাপ বিন্দুতে চেপে ধরা যায়। হাতের চাপ বিন্দু হাতের উপরের অংশের ভেতর দিকের মাঝামাঝি।

এখানে ব্রেকিয়াল আর্টারি বলে একটি ধমনি আছে পায়ের চাপ বিন্দু কুঁচকিতে। এখানে ফিমোরাল আর্টারি বলে একটি ধমনি আছে। মনে রাখতে হবে, চাপ বিন্দুতে অধিক সময় চাপ দিয়ে রাখা যাবে না। কারণ তাতে হাত বা পায়ের নিম্নাংশে রক্ত তথা অক্সিজেনের অভাব দেখা দিবে।

অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ:

কখনো কখনো বাহ্যিক কোনো ক্ষত ছাড়াই হাড় ভাঙ্গা বা আঘাতের কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। আবার কোনো কোনো রোগে যেমন পাকস্থলির বা আলসার থেকে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ  হতে পারে। যদি ব্যক্তি বাহ্যিক কোনো আঘাত ছাড়াই শকে গিয়ে থাকে তাহলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ সন্দেহ  করা যেত পারে। সে ক্ষেতে ব্যক্তির মুখ, নাক, কান, প্রস্রাবের রাস্তা, যোনিপথ ও পায়ুপথে করতে হবে।

রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা

রক্তক্ষরণ এর চিকিৎসা

আরও দেখুন:

Leave a Comment