আজকে আমরা আলোচনা করবো হাসপাতালে রোগীকে সেবাদান। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর পেশেন্ট কেয়ার টেকনিকের প্রাথমিক ধারণা অংশের অন্তর্গত।

হাসপাতালে রোগীকে সেবাদান
যেকোনো হাসপাতালেই রোগীকে সেবাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-নীতি আছে যেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে যেকোনো ব্যক্তি বা রোগী বাংলাদেশের যেকোনো হাসপাতালে সেবা নেয়ার অধিকার রাখা। কোনো রোগী হাসপাতালে আসলে আনুসঙ্গিক কাজ-কর্ম সারার পর ডাক্তার যখন রোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখনি মূলত চিকিৎসা সম্পর্কিত মুল কাজটি আরম্ভ হয়। চিকিৎসা প্রথমেই রোগীর সমস্যা শুনেন, কিছু প্রশ্ন ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন এবং একটা সাময়িক বা প্রভিশনাল ভায়াগনোসিস করে থাকেন। এর উপর ভিত্তি করে ডাক্তার প্রয়োজন ভেদে বিভিন্ন উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। পরিপূর্ণভাবে রোগ নির্ণয়ের পরই ডাক্তার নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা দিয়ে থাকেন যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হয়।

রোগীর ইতিহাস গ্রহণ, রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনা
একজন পেশেন্ট কেয়ার টেকনিশিয়ান কর্মস্থলে অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্যাকেজের অন্যান্য উপাদান সমুহের পাশাপাশি রোগীর নিরাময় মূলক সেবাসমূহ প্রদান করে থাকেন। তিনি কর্মস্থল-এ অবস্থান করে সাধারণ রোগসমূহ নির্ণয় ও ইহার ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনে রেফার করতে সক্ষম হবেন। সেবা গ্রহীতার অসুবিধা সমূহের জন্য প্রথমে তাকে রোগ নির্ণয় করতে হয়। এই জন্য রোগীর পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। সবকিছুই ধারাবাহিকভাবে করা হলে রোগ নির্ণয় করা সহজতর হবে। পদক্ষেপ সমূহ উল্লেখ করা হল:
১. রোগীর ইতিহাস গ্রহণ
২. রোগীর শারীরিক পরীক্ষা
(ক) রোগীর সাধারণ পরীক্ষা ও
(খ) রোগীর সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা

৩. ল্যাবরেটরি পরীক্ষা:
যখনই রোগ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন তখন সেবা প্রদানকারী রোগের ব্যবস্থাপনা দিবেন। ব্যবস্থাপনা দিতে সমর্থ না হলে তিনি উপযুক্ত কোনো হাসপাতাল/ ক্লিনিক বা চিকিৎসকের নিকট প্রেরণ করবেন এবং পরবর্তীতে রোগীর চিকিৎসার জন্য ফলোআপ করতে হবে। রোগীর সীমিত নিরাময়মূলক সেবা প্রদান পদ্ধতি:
১) রোগীর ইতিহাস গ্রহণ:
হাসপাতালে প্রথম যখন একজন রোগী আসেন তখন চিকিৎসক প্রথমেই রোগীর পূর্ণ ইতিহাস নেন। তার অসুখটি কীভাবে হলো, কখন থেকে হলো, কতদিন ধরে আছে- সম্পূর্ণ ইতিহাসটি তার কাছ থেকে নেওয়া হয়। এগুলোকে বলা হয় রোগীর চীফ কমপ্লেইন বা মূল সমস্যা নেওয়ার পর পারিবারিক ইতিহাস নেওয়া হয়। জানা হয়, তার পরিবারে এ সমস্ত রোগ আছে কি না। এরপর তার অতীত ইতিহাস নেওয়া হয়।
এই রোগটি তার আগে কখনো ছিল কি না, সেটি জানা হয়। তার মেডিক্যাল, সার্জিকেল দুটো ইতিহাসই নেওয়া হয়। নারী হলে তার নারীস্বাস্থ্যের ইতিহাসটিও নেওয়া হয়। তার পেশাগত ইতিহাসও নেওয়া হয়। সে ধূমপান করে কি না, মদ্যপান করে কি না, সেগুলোও জানা হয়। অথবা মাদকাসক্ত কি না সেগুলোও জানা হয়। এগুলো নেওয়ার পর জিজ্ঞেস করা হয়, আরো কোনো অসুবিধা আছে কি না।
- বর্তমান প্রধান অসুবিধা সমুহ: কি কি অসুবিধা; কতদিন যাবৎ অসুবিধা; অসুবিধা সমূহের ইতিহাস যেমন- অসুবিধার ধরন, কিসে অসুবিধা বাড়ে বা কিসে কমে।
- বিস্তারিত ইতিহাস; অতীত ইতিহাস; পারিবারিক ইতিহাস (পরিবারের অন্যান্যদের এই অসুবিধা আছে কি না); ব্যক্তিগত ইতিহাস (ধুমপান, তামাক, পান, জর্দা বা অন্যান্য; পেশাগত ইতিহাস, খাদ্যাভ্যাস (পানির উৎস, ক্সদনন্দিন খাবার দাবার ইত্যাদি); মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের ইতিহাস।
২) শারীরিক পরীক্ষা:
এরপরের পর্যায় হলো, রিভিউ অব সিস্টেম। প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অবস্থা দেখা হয়। যদি রোগী কাশি নিয়ে আসে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয় অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস বা অ্যালার্জি ছিল কি না। রিভিউ অব সিস্টেমের (পদ্ধতির পর্যবেক্ষণ) ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে যাওয়া হয়। শুরু হয় চোখ দিয়ে। তার চোখে কোনা অসুবিধা আছে কি না। দৃষ্টি ঝাপসা হওয়ার সমস্যা আছে কি না। তার মাথাব্যথা রয়েছে কি না। তার প্রতিটি সিস্টেম (পদ্ধতি) অনুযায়ী অবস্থা জিজ্ঞেস করা হয়।
- দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ: রক্তস্বল্পতা পরীক্ষাবা জন্ডিস, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার নির্ণয়, ইডিমা পরীক্ষা, ওজন মাপ (শিশুদের ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে), সায়ানোসিস, স্ফীত লসিকা গ্রন্থি পরীক্ষা

রোগীর সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা:
রোগীর প্রধান অসুবিধা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পরীক্ষাসমূহ।
উদাহরণ-১:
পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে – পেট পরীক্ষা করতে হবে; পেটের কোথায় ব্যথা- নাভীর চারদিকে কিংবা তলপেটে; পেট ফুলে আছে কি না, টেন্ডার কিনা ইত্যাদি।
উদাহরণ-২:
শ্বাসকষ্টের ক্ষেত্রে – বুক পরীক্ষা (ফুসফুস ও হৃৎপিন্ড) করতে হবে।
উদাহরণ-৩:
কোনো ক্ষত থাকলে (ক্ষতের পরীক্ষা করা, ক্ষত হতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না, ক্ষত পরিষ্কার আছে কি না, ক্ষতে কোনো ইনফেকশন সংক্রমণ চিহ্ন আছে কি না, ক্ষতে কোনো বাহ্যিক বস্তু বা Foreign Body আছে কিনা)।
ব্যবস্থাপনা: ব্যবস্থাপনার ৪টি পর্যায়, যথা:
১। সাধারণ ব্যবস্থাপনা যেমন- রোগীর বিশ্রাম ও রোগের কারণ অনুযায়ী খাদ্য নির্ণয়
২। লক্ষণ ও উপসর্গের ব্যবস্থাপনা। যেমন- ব্যথার জন্য ব্যথানাশক বড়ি
৩। নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা- রোগের কারণ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসা প্রদান। যেমন- কৃমিনাশক বড়ি।
৪। জটিলতার ব্যবস্থাপনা। যেমন- কৃমির জন্য যদি ইন্টেসটিনাল অবস্ট্রাকশন বা অস্ত্র বাধাগ্রস্ত হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে উন্নতর চিকিৎসা প্রদান ।

চিকিৎসকগণ এভাবে রোগের ইতিহাস গ্রহণ করার মাধ্যমে উপসর্গসমূহ এবং পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলসমূহ বিশ্লেষণ পূর্বক সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করে বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসা বা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান দিয়ে থাকেন। এই সামগ্রিক কাজটি এক জনের নেতৃত্বে হলেও কাজটি কখনোই একা করা সম্ভব হয়না।
নার্স, প্যাথোলোজিষ্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সবাই মিলে একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম হিসেবে এই কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে হয়। ডাক্তার, নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পেশাজীবিদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করে এবং নিজেদের কার্যপরিধিতে উল্লেখিত সেবাসমূহ রোগীদেরকে সুচারুরূপে প্রদান করার মাধ্যমে কেয়ারগিভার এই স্বাস্থ্যসেবা দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
আরও দেখুনঃ