আজকের আলোচনার বিষয়ঃ কংকাল / অস্থি তন্ত্র (Skeletal system)। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর বেসিক হিউমান বায়োলোজি ও এর প্রয়োগ অংশের অন্তর্গত।

কংকাল / অস্থি তন্ত্র (Skeletal system)
অস্থি তন্ত্র (Skeletal system)-
বিশেষ ধরনের যোজক কলা নির্মিত অস্থি (Bone) ও তরুণাস্থি (Cartilage) -এর সমন্বয়ে গঠিত যে তন্ত্র দেহের কাঠামো নির্মাণ, অঙ্গ রক্ষণ এবং ভার বহন করে তাকে অস্থি তন্ত্র বলে।
অস্থি তন্ত্রের কাজ-
১। দৈহিক কাঠামো গঠন ও আকৃতি প্রদান
২। চলাচল-
সংযুক্ত পেশির সংকোচনের মাধ্যমে চলন ঘটায়।
৩। রক্ষণাবেক্ষণ-
মস্তিষ্ক, সুষুম্না কাণ্ড, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি নরম ও সংবেদনশীল অঙ্গসমূহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে।
8 । সঞ্চয় –
অস্থি ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সঞ্চয় করে।
৫। লোহিত কণিকা উৎপাদন-
অস্থি মজ্জা থেকে উৎপন্ন হয়।

অস্থি তন্ত্রের শ্রেণিবিন্যাস
মানবদেহের মোট ২০৬টি অস্থি আছে যা প্রধান ২ টি ভাগে ভাগ করা হয়-
১) অক্ষীয় অস্থিতন্ত্র (Axial skeletal system),
২) উপাঙ্গীয় অস্থিতন্ত্র (Appendiculer skeletal
system)|
অক্ষীয় অস্থিতন্ত্র-
যে অস্থিসমূহ দেহের অক্ষরেখা বরাবর অবস্থান করে মস্তিষ্কের এবং দেহ গহ্বরের নরম অঙ্গগুলোকে ধারণ করে ও রক্ষা করে, তাদের অক্ষীয় অস্থিতন্ত্র বলে। এই তন্ত্রে যেসব জন্মি আছে সেগুলো হল-
১) মাথার খুলি বা করোটির অস্থি (Skull bones)
২) গলার অস্থি (Hyoid bone)
৩) মেরুদণ্ডের অস্থি (Vertebral column )
৪) বুকের অস্থি ও পাঁজরের অস্থিসমূহ (Sternum and rib )


করোটি (Skul)
২৮টি অস্থি নিয়ে করোটি গঠিত। এগুলো দুভাগে বিভক্ত- করোটিকা (Cranium) বা (Cranial bone) ও মুখমণ্ডলীয় অস্থি (Facial bone)।
ক) করোটিকা (Cranium)-
করোটিকা ৮টি চ্যাপ্টা ও শক্ত অস্থি নিয়ে গঠিত। অস্থিগুলো খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত হওয়ায় একত্রে ঘন সন্নিবেশিত ও দৃঢ়সংলগ্ন থাকে।
১) সম্মুখস্থ অস্থি (Frontal bone
২) প্যারাইটাল অস্থি (Parietal bone)
৩) টেমপোরাল অস্থি (Temporal bone)
এ অস্থিতে শ্রবণাঙ্গ, শ্রমতি নালী, ক্যারোটিড নালী ও মুখমণ্ডলীয় স্নায়ুর নালী অবস্থান করে।
৪) অক্সিপিটাল অস্থি (Occipital bone)
৫) স্কেনয়েড অস্থি (Sphenoid bone)-
এর দুই পাশে টেমপওরাল অস্থি, সামনে এথময়েড ও পিছে অক্সিপিটাল অস্থি থাকে ।
৬) এথময়েড অস্থি (Ethmoid bone)
করোটিকার কাজ
- মস্তিষ্ককে আবৃত রাখা,
- মস্তিষ্ককে ধারণ করে এবং
- আঘাত হতে রক্ষা করে।

খ) মুখমণ্ডলীর অস্থি (Facial bone)
করোটিকার সামনের ও নিচের দিকের অংশ মুখমন্ডল অস্থি নিয়ে গঠিত। (প্রত্যেক কানে ৩টি করে মোট ৬ টি অস্থি, জিহবার পেছন দিকে গোড়ায় হাইওয়েড নামে অস্থি থাকে। এসব অস্থি অস্থিগণনার বাইরে থাকে)।
১) উধর্ব চোয়াল বা (Maxilla)
২) নিম্ন চোয়াল বা (Mandible) – ম্যান্ডিলই করোটির একমাত্র নড়নক্ষম অস্থি।
৩) হাইপোম্যাটিক অস্থি (Zygomatic bone)
৪) নসিকা অস্থি (Nasal bone)
৫) ম্যাক্রিমাল অস্থি (Lacrimal bone
৬) (Interior Nasal Concha )
৭) ভোমার (Vomar)
৮) প্যালেস্টাইন অস্থি (Palatine Bone)
হাইওয়েড অস্থি (Hyold Bone) চোয়াল ও ল্যারিংক্সের মাঝখানে অবস্থিত। ঘাড়ের অনেক পেশি এ অস্থির সাথে লাগানো থাকে।
- চোখ, কান, নাক ও মুখ এসব গহবরের আকৃতি দেয়,
- চোখ, কান, নাক ও মুখের অঙ্গ ধারণ ও রক্ষণ করে।

দেহকাণ্ড
দেহকান্ত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত- ১) মেরুদন্ড ও ২) বক্ষপিঞ্জর।
মেরুদন্ড (Vertebral Column )-
মেরুদণ্ডকে শিরদাঁরা বা স্পাইনাল কলাম নামেও অভিহিত করা হয়। ৩৩টি কশেরুকা বা (Vertebra) নিয়ে মেরুদন্ত গঠিত। একটি আদর্শ কশেরুকা অনিয়মিত আকৃতির অস্থি যার গঠন বিভিন্ন কশেরুকায় বিভিন্ন রকম।
আদর্শ কশেরুকা বৈশিষ্ট –
১) দেহ (Body)- সামনের স্কুলো অংশ যা স্পঞ্জি অস্থিতে পঠিত।
২) আর্চ (Arch)- পিছন দিকে পাতলা অস্থি নিয়ে গঠিত।
৩) ইন্টারভার্টিব্রাল ফোরামেন (Intervertebral Foramen)- এই ছিদ্রের ভেতর দিয়ে সুষুম্না স্নায়ু (Spinal nerve) ও রক্তবাহিকা অতিক্রান্ত হয়।
৪) কশেরুকীর ছিদ্র (Vertebral Foramen)- সকল কশেরুকীর ছিদ্র সম্মিলিতভাবে ভার্টিব্রাল ক্যানেল (Vertebral canal) নির্মাণ করেন। এর ভেতরে আবরণীসহ সুষুম্না কাণ্ড (Spinal cord) ও রক্তবাহিকা সুরক্ষিত থাকে।
কশেরুকার প্রকারভেদ
অবস্থান অনুযায়ী ৫ অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
১। সারভাইকাল (গ্রীবাদেশীয়) কশেরুকা (Cervical vertebrae) ……………………………৭টি
২। থোরাসিক (বক্ষদেশীয়) কশেরুকা (Thoracic vertebrae ………………………………… ১২টি
৩। লাম্বার (কটিদেশীয়) কশেরুকা (Lumbar vertebrae) ………………………………………….৫টি
৪। স্যাক্রাল (প্রোনিদেশীয়) কশেরুকা (Sacral vertebra) …………………………………………৫টি (একীভূত)
৫। কক্সিজিয়াল (পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা (Coccygeal vertebrae)………………………………৪টি (একীভূত)

পরিণত বয়সে শ্রোণিদেশীয় কশেরুকা একীভূত হয়ে স্যাক্রাম (Sacrum) এবং পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা কক্সিস (Coccyx) গঠন করে, ফলে পৃথক অস্থি আকারে কশেরুকার সংখ্যা ২৬টিতে দাঁড়ায়।
১। গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা- সংখ্যা ৭টি
এর মধ্যে তিনটি ভিন্ন গড়নের কশেরুকা-
১। এ্যাটলাস (Atlas / ১ম কশেরুকা),
২। এ্যাক্সিস (Axis / ২য় কশেরুকা) ও
৩। (Vertebra Prominans / ৭ম কশেরুকা)
বক্ষপিঞ্জর
দেহের পশুকা, বক্ষদেশীয় কশেরুকা ও স্টার্নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে খাঁচার আকৃতি বক্ষপিঞ্জর তৈরি করে।
বক্ষপিঞ্জরের গঠন-
- একটি স্টার্নাম (Sternum),
- ১২ জোড়া পর্শুকা (Ribs) ও
- ১২টি কশেরুকা নিয়ে গঠিত হয়।
স্টার্ণাম বৈশিষ্ট্য-
১। বুকের কেন্দ্রীয় সম্মুখ অংশে অবস্থিত চাপা অস্থি
২। ৩টি অংশে বিভক্ত –
ক) উপরের ত্রিকোণাকার ম্যানুব্রিয়াম,
খ) মাঝের লম্বা দেহ, এবং
গ) নিচের ক্ষুদ্র জিফয়েড প্রসেস।
৩। পার্শ্ব কিনারায় ক্ল্যাভিলের এবং ৭ জোড়া পর্শকার খাঁজ থাকে।
পর্শুকা বৈশিষ্ট্য-
১। লম্বা, সুরু, চাপা ও বাঁকা অস্থি
২। দেহে ১২ জোড়া পর্শুকা থাকে।
৩। একটি আদর্শ পর্শুকার বৈশিষ্ট্য
ক) পশ্চাৎপ্রান্তে ফ্যাসেটবাহী মস্তক বা ক্যাপিচুলাম, ক্রেস্টবাহী গ্রীবা, সংযোগী তলসহ টিউবার্কল থাকে
খ) দেহ কোণ করে বাঁকানো থাকে।
গ) পর্শকার সম্মুখ প্রান্ত তরুণাস্থিময়।
ঘ) প্রথম ৭ জোড়া পর্শকা তরুণাস্থি দিয়ে স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে, এদের প্রকৃত পর্শকা বলে।
৪। বাকি ৫ জোড়া (৮ম-১২তম) স্টার্নামের সাথে যুক্ত নয় বলে নকল পশুকা বলে।
৫। ৮ম, ৯ম ও ১০ম পর্শকা তরুণাস্থির সাথে একীভূত হয়ে কোস্টাল আর্ট (Costal arch) তৈরি করে।
৬। ১১ ও ১২তম পর্শকা সামনে অংশ উন্মুক্ত থাকে, তাই এদের ‘ভাসমান পৰ্শকা’ বলে।
৭। পর্শকার অন্তর্তলের নিচের কিনারায় কোস্টাল খাদে স্নায়ু ও রক্তবাহিকা অবস্থান করে।
৮। প্রথম পর্শকার উপরতলে সংস্পর্শে সাবক্লাভিয়ান ধমনী ও শিরা থাকে।
৯। উপরে ও নিচে দুই কোস্টাল তরুণাস্থির মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে ইন্টারকোস্টাল স্পেস বলে।
বক্ষ পিঞ্জরের কাজ-
হৃদপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বক্ষপিঞ্জরের ভেতরে সুরক্ষিত থাকে।

২। উপাঙ্গীয় কঙ্কাল:
উর্ধাঙ্গ (দুইবাহ ও বক্ষ-অস্থিচক্র) ও নিম্নাঙ্গ (দুইপা ও শ্রোণি-অস্থিচক্র) এর অস্থিগুলোকে একত্রে উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলে।
উর্ধাঙ্গের অস্থিসমূহ:
বক্ষ-অস্থিচক্র ও দুইবাহু নিয়ে উর্ধাঙ্গর গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩২ টি করে মোট ৬৪ টি অস্থি উর্ধাঙ্গের অন্তর্গত।
বক্ষ অস্থি ও হাতের অস্থি
১) পিঠের ত্রিকোণাস্থি (Scapula),
২) কণ্ঠার অস্থি (Clavicle),
৩) ঊর্ধ্ব বাহুর অস্থি (Homarus),
৪) সম্মুখ বাহুর অস্থি (Radius & Ulna),
৫) কারপাল অস্থি (Carpal Bones),
৬) মেটা কারপাল অস্থি (Meta carpal Bones) এবং
৭) হাতের আঙুলের অস্থি (Phalanges)।
নিম্নাঙ্গের অস্থিসমূহ:
শ্রোণি-অস্থিচক্র ও দুইপা নিয়ে নিম্নাঙ্গ গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩১টি করে মোট ৬২টি অস্থি নিম্নাঙ্গে রয়েছে।
শ্রোণি অস্থি ও পায়ের অস্থি –
১) বস্তিদেশের হাড় (Pelvis),
২) উরুর অস্থি (Femur),
৩) নিম্ন পায়ের অস্থি (Tibia & fibula),
৪) গড়ালি সংলগ্ন অস্থি (Tarsal bones),
৫) চরণ অস্থি (Metatarsal bones) এবং
৬) পায়ের আঙ্গুলের অস্থি (Phalanges)।
২) নিম্ন পায়ের অস্থি-
নিম্ন পা এ দুটি অস্থি থাকে- টিবিয়া ও ফিবুলা।
টিবিয়া-
বেশি মোটা এর উর্ধ প্রান্ত দুটি কন্ডাইল থাকে। টিবিয়ার দেহ ত্রিধারবিশিষ্ট। এর সম্মুখ কিনারা ঝুঁটি (Shin) নামে পরিচিত। টিবিয়ার নিম্ন প্রান্তে ম্যালিওলাস নামে দুটি উঁচু অংশ থাকে। এতে ট্যালাসের (টার্সাল অস্থি) সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সংযোগী তলও রয়েছে।
ফিবুলা-
দেখতে দীর্ঘ ষষ্টির মতো। এর মস্তক চোখা ধরনের ও নিচের দিকে থাকে
৩) চরণ-
গোড়লি, পদতল ও আঙ্গুল নিয়ে চরণ গঠিত।
- গোড়ালি ও পদতলের পৃষ্ঠভাগ গঠিত হয় ৭টি বিভিন্ন আকৃতির টার্সাল অস্থি দিয়ে
- ১টি করে ক্যালকেনিয়াস, ট্যালাস, কিউবয়েড, নেভিকুলার ও ৩টি কিউনিফর্ম।
- মেটাটার্সালের সংখ্যা ৫। এগুলো নলাকার ও সামান্য লম্বা এবং পদতল গঠন করে।
- পায়ের আঙ্গুলের অস্থিগুলো ফ্যালাঞ্জেসে গঠিত। পা এর অস্থিগুলো পরস্পরের সাথে সন্ধির মাধ্যমে যুক্ত। নিতম্ব সন্ধি, হাটুর সন্ধি ও গোড়ালি সন্ধি সবচেয়ে বড়।
পায়ের কাজ:
ভারবহন করে ও চলাচলের সাহায্য করে।
আরও দেখুনঃ