পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

আজকের আলোচনার বিষয়ঃ পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর বেসিক হিউমান বায়োলোজি ও এর প্রয়োগ অংশের অন্তর্গত।

 

পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

 

পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

পৌষ্টিকনালি এবং কয়েকটি গ্রন্থি নিয়ে গঠিত। পৌষ্টিকনালি মুখ থেকে শুরু হয়ে পায়ুতে শেষ হয়। বিস্তৃত এই নালিপথ কোথাও সরু আবার কোথাও প্রশস্ত। এর প্রধান অংশগুলো নিম্নরূপ :

(ক) মুখ (Mouth):

মুখ থেকে পৌষ্টিকনালি শুরু। এটি নাকের নিচে আড়াআড়ি একটি বড় ছিদ্র, যেটি উপরে এবং নিচে ঠোঁট দিয়ে বেষ্টিত থাকে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

(খ) মুখগহবর (Buccal cavity):

মুখের অভ্যন্তরে দাঁত, জিহবা ও লালাগ্রন্থি থাকে। এগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। দাঁত খাদ্যকে চিবিয়ে ছোট ছোট অংশে পরিণত করে। জিহবা খাদ্যকে নেড়েচেড়ে চিৰাতে সাহায্য করে এবং তার স্বাদ গ্রহণ করে। কানের নিচে চোয়ালের পাশে জিহবার নিচে অবস্থিত লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত লালারসের মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে গলধ:করণে সাহায্য করে। লালারসের টায়ালিন ও মলটেজ নামক এনজাইম শর্করা পরিপাকে অংশ নেয়।

(গ) দাঁত (Tooth):

মানবদেহে সবচেয়ে শক্ত অংশ দাঁত। প্রাপ্ত বয়সে মুখগহ্বরে উপরে ও নিচের চোয়ালে সাধারণত ১৬ টি করে মোট ৩২ টি দাঁত থাকে। মানবদেহে দাঁত দুবার গজায়। প্রথমবার শিশুকালে দুধ দাঁত, দুধদাঁত পড়ে গিয়ে ১৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার স্থায়ী দাঁত গজায়। স্থায়ী দাঁত চার ধরনের। সেগুলো হচ্ছে-

কর্তন দাঁত (Incisor):

এই দাঁত দিয়ে খাবার কেটে টুকরা করা হয়।

ছেদন দাঁত (Canine):

এই দাঁত দিয়ে খাবার ছেড়া হয়।

অগ্রপেষণ দাঁত (Premolar):

এই দাঁত দিয়ে চর্বণ, পেষণ উভয় কাজ কৰা হয়।

পেষণ দাঁত (Molar):

এই দাঁত চর্বণ ও পেষণে ব্যবহৃত হয়।

 

পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

 

(ঘ) গলবিল (Pharynx) :

মুখগহ্বরের পরে পৌষ্টিকনালির অংশ হল গলবিল। মুখগহ্বর থেকে খাদ্যবস্তু গলবিলের মধ্য দিয়ে অন্ননালিতে পৌঁছে।

(ঙ) অন্ননালি (oesophagus):

গলবিল থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত বিস্তৃত নালিটির নাম অন্ননালি। খাদ্যবস্তু এই নালির মধ্যে দিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে।

(চ) পাকস্থলী (Stomach):

অন্ননালি এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের মাঝখানে একটি থলির মতো অঙ্গ। এর প্রাচীর পুরু ও পেশি বহুল। পাকস্থলীর প্রাচীরে অসংখ্য গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থাকে। পাকস্থলীর পেশি সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্যবস্তুকে পিষে মণ্ডে পরিণত করে। গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস খাদ্য পরিপাক সহায়তা করে।

 

পরিপাকতন্ত্র বা পৌষ্টিকতন্ত্র

 

(ছ) অন্ত্র (Intestine):

পাকস্থলীর পরে পৌষ্টিকনালির অংশ হল অন্ত্র। এটি একটি লম্বা প্যাঁচানো নালি। এর দুটি প্রধান অংশ- ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদন্ত্র

ক্ষুদ্রান্ত (Small Intestine):

পাকস্থলী থেকে বৃহদান্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত লম্বা, প্যাঁচানো নলটিকে ক্ষুদ্রান্ত্র বলে। ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনটি অংশ- ডিওডেনাম, জেজুনাম ও ইলিয়াম। ডিওডেনামে পিত্তথলি পিত্তনালির মাধ্যমে যকৃতের পিত্তরস এবং অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় নালি হয়ে অগ্ন্যাশয় রস ডিওডেনামে এসে পৌঁছে। ক্ষুদ্রান্ত্রের গায়ে আন্ত্রিক গ্রন্থিও থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্তঃপ্রাচীরে আঙুলের মতো প্রক্ষেপিত অংশ থাকে, এদের ভিলাই বলে। ভিলাই পরিপাককৃত খাদ্য উপাদান শোষণ করে।

বৃহদন্ত্র (Large Intestine):

ইলিয়াম থেকে পায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত মোটা নলাকৃতির অংশ হলো বৃহদান্ত্র। বৃহদান্ত্রের তিনটি অংশ- সিকাম, কোলন ও মলাশয়। সিকামের সাথে অ্যাপেনডিক্স নামক ক্ষুদ্র নলের মতো প্রবৃদ্ধি সংযুক্ত থাকে। বৃহদন্ত্রে মূলত পানি শোষিত হয়, মল তৈরি হয় এবং মল জমা থাকে। পায়ু (Anus): পৌষ্টিক নালির শেষ প্রান্তে অবস্থিত ছিদ্রপথই হলো পায়ু।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment