আজকের আলোচনার বিষয়ঃ তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অংশের অন্তর্গত।

তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র
তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের নাম হল থার্মোমিটার। অর্থাৎ যে যন্ত্রের সাহায্যে কোনো বস্তুর তাপমাত্রা সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় এবং বিভিন্ন বস্তুর তাপমাত্রার পার্থক্য নির্ণয় করা যায় তাকে থার্মোমিটার বলে। মানবদেহের তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্যেও থার্মমিটার নামক যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।
তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য বিভিন্ন প্রকার থার্মোমিটার রয়েছে, তবে মাবনদেহের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য অধিক ব্যবহৃত এমন তিনটি থার্মোমিটার নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো:

১। ক্লিনিক্যাল বা গ্লাস বার্মোমিটার:
এর প্রাধানত তিনটি অংশ। এর নিচের দিকে থাকে সরু মারকারি বাল, মূল বর্তি কাচের গ্লাস দিয়ে আবথ্য এবং এর মাঝখানে থাকে লিকুইড মার্কারী ব পারদপূর্ণ কলাম যা দ্বারা তাপমাত্রার পরিমাণ নির্ণয় করে। একে অনেক সময় পারদ বা মার্কারী থার্মোমিটারও বলা হয়ে থাকে। এটিতে ১৪- ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৫-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ফেল থাকে।
২। ডিজিটাল থার্মোমিটার:
এটিরও নিচের দিকে থাকে সরু মারকারি বাঘ, বডির মাঝখানে একটি ডিসপ্লে থাকে যেখানে তাপমাত্রা দেখা যায়। ডিসপ্লের উপরে একটু সুইচ থাকে যার মাধ্যমে থার্মোমিটারটি চালু এবং বন্ধ করা যায়। এর কোন স্কেল থাকে না তাপমাত্রা সরাসরি ডিসপ্লেতে দেখা যায়।
৩। ইনফ্রারেড থার্মোমিটার:
এটি সাধারণ সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয়। এই মার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপার জন্য পারদপূর্ণ অংশটি রোগীর শরীরে স্পর্শ করার প্রয়োজন হয় না। যেমন, সাম্প্রতিক করোনা মহামারির সময় আমাদের দেশেও এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেছে। এর উপরের ও সামনের দিকে একটা স্ক্যানার থাকে যা তাপমাত্রা নির্ণয় করে এবং পিছন দিকে একটা ডিসপ্লে থাকে যেখানে তাপমাত্রা দেখা যায়। ডিসপ্লের নিচের দিকে একটি সুইচ থাকে যার মাধ্যমে থার্মোমিটারটি চালু এবং বন্ধ করা যায়।
তৰে ডিজিটাল ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটার অনেক সময় ব্যয়সাধ্য বিধায় আমাদের দেশে হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা বাসাবাড়িতে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ক্ষেত্রে এনালপ থার্মোমিটারের ব্যবহার কিছুটা বেশি দেখা যায়। এটিকে আবার ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারও বলা হয়ে থাকে।

আবার শরীরের কোন অংশ থেকে ভাপমাত্রা নেয়া হচ্ছে সেটির উপর নির্ভর করে থার্মোমিটারকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন:-
১। ওরাল থার্মোমিটার:
সজ্ঞান রোগীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী হচ্ছে ওরাল থার্মোমিটার। এ ধরনের থার্মোমিটার দিয়ে সাধারণত জিহ্বার নিচে একপাশে রেখে তাপমাত্রা মাপা হয়। এক্ষেত্রে থার্মোমিটারটি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হবে। মুখে তাপমাত্রা পরিমাপের ৫-১০ মিনিট পূর্বে কোন ঠাণ্ডা বা গরম খাবার গ্রহণ, ন্যায়াম বা ধুমপান করা যাবে না। এতে সঠিক তাপমাত্রা নাও আসতে পারে। ৫ বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের মুখে তাপমাত্রা নেয়া যাবে না। আবার মুখে অস্ত্রপাচার হয়েছে, জ্ঞান কিংবা মানসিক সমস্যা আছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে মুখে তাপমাত্রা পরিমাপ করা যায় না।
২। এক্সিলারি থার্মোমিটার:
বাহুর নিচে (Armpit বা axilla) ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার রেখে তাপমাত্রা মাপা যায়। এটি শিশুদের জন্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান। এক্সিলারি তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট কম থাকে।
৩। রেকটাল থার্মোমিটার:
পায়ুপথের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য ব্যবহার করা হয় রেকটাল থার্মোমিটার। সাধারণত যেসকল রোগীর মুখে তাপমাত্রা মাপতে পারে না (যেমন, অান রোগী, মুখে অপারেশন বা সার্জারী হয়েছে এমন রোগী) তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। পায়ুপথে তাপমাত্রা পরিমাণের সময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১ ইঞ্চি এবং বড়দের ক্ষেত্রে ১.৫ ইঞ্চি নামোমিটার পায়ু পথে প্রবেশ করাতে হবে। এক্ষেত্রে থার্মোমিটার প্রবেশ করানোর সময় কখনোই জোরে ধাক্কা দেওয়া যাবে না। পায়ুপথে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ ডিগ্রি বেশি থাকে।
৪। টিমপেনিক থার্মোমিটার:
টিমপেনিক থার্মোমিটারে একটি সেন্সর থাকে যার মাধ্যমে ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের মত কানের টিমপেনিক পর্দার ভাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়। এক্ষেত্রেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি পাওয়া যায়।

সাধারণত সুখের তাপমাত্রা মানবদেহের আদর্শ তাপমাত্রা নির্দেশ করে। এক্সিলারি তাপমাত্রার সাথে সাধারণত ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট যোগ করে এবং রেকটাল বা পায়ুপথে প্রাপ্ত তাপমাত্রা থেকে ১ ডিগ্রি ফারেনহাইট বিয়োগ করলে তা সুখের তাপমাত্রার সমান হয়।
তাপমাত্রা পরিমাপের স্কেল ও সংকেত
মানবদেহের তাপমাত্রাকে সাধারণত দুটি স্কেলে পরিমাপ করা হয়। যেমন:
|
স্কেলের নাম |
সংকেত |
| ১। সেলসিয়াস স্কেল |
°C |
| ২। ফারেনহাইট স্কেল |
°F |
এক স্কেল থেকে অন্য স্কেলে তাপমাত্রা রূপান্তরের সূত্র: সেলসিয়াস থেকে ফারেনহাইট: C/5=F-32/9
উদাহরণ: ৩৭.
৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসকে ফারেনহাইটে রূপান্তর।
আমরা জানি,C/5=F-32/9;
Or; 37.3/5 F-32/9; Or, 5F-160-335.7; Or, 5F-335.7+160; Or, F= 495.7/5; Or, F=99.14; So, F= 99.1°
অর্থাৎ, সেলসিয়াস স্কেলে প্রাপ্ত ৩৭.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে তা ফারেনহাইট স্কেলে ৯৯.১ ডিগ্রী ফারেনহাইট।

মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা:
মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর নরমাল রেঞ্জ হলো ৯৭.০ থেকে ৯৯.০ ডিগ্রী ফারনহাইট কিংবা 36.1 থেকে 37.2 ডিগ্রি সেলসিয়াস। শরীরের তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় তখন তাকে জ্বর বা পাইরেক্সিয়া বা হাইপারথার্মিয়া বলা হয়। অর্থাৎ জ্বর হলে দেহের তাপমাত্রা ৯৯.০ °F এর অধিক নির্দেশ করে। আবার যদি শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তখন তাকে হাইপোথার্মিয়া বলা হয়।
আরও দেখুনঃ