উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ

আজকে আমরা আলোচনা করবো উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর সাধারণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা অংশের অন্তর্গত।

 

উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ

 

উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ:

হাইপারটেনশনের আরেক নাম উচ্চ রক্তচাপ, যাকে HTN দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যখন কোনো ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে থাকে, তখন ধরে নেওয়া হয় তিনি হাইপারটেনশনে ভুগছেন। কারো রক্তচাপ যদি উভয় বাহুতে ১৪০/৯০ মি.মি. বা তার ওপরে থাকে, তাহলে তার উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে বলা যেতে পারে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

ঝুঁকি:

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর স্বল্প থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে এই উচ্চ রক্তচাপ। বিশেষত স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর, হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখের ক্ষতি এবং বৃক্ক বা কিডনির বিকলতা ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায় ।

কারণ:

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মেদ, কাজের চাপ বা টেনশন, মদ্যপান, অতিরিক্ত আওয়াজ, বদ্ধ পরিবেশ ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আবার এটি বংশগত সূত্রে প্রাপ্ত একটি অসুখও। তবে ধারণা করা হয়, প্রায় ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার কারণ হিসেবে লবণের ব্যবহারকে দায়ী করা হয়।

করণীয়:

চিকিৎসকরা মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের রক্তচাপের জন্য ওজন কমানো, ধূমপান ছেড়ে দেওয়া এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়ামকে চিকিৎসার প্রথম ধাপ হিসেবে ধরেন। যদিও ধূমপান ছেড়ে দেওয়ায় সরাসরি রক্তচাপ কমে না; কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে এটি সম্পৃক্ত, কারণ এটি ছেড়ে দিলে উচ্চ রক্তচাপের বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আসে। যেমন স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাক।

মৃদু উচ্চ রক্তচাপ সাধারণত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। ফল, শাকসবজি, স্নেহবিহীন দুগ্ধজাত খাদ্য এবং নিম্নমাত্রার লবণ ও তেলজাতীয় খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পরিবেশগত চাপ যেমন উঁচু মাত্রার শব্দের পরিবেশ বা অতিরিক্ত আলো পরিহার করাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী। এর পরও যাঁরা মাঝারি থেকে উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন, তাঁদের রক্তচাপ নিরাপদ মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়।

 

উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ

 

নিম্ন রক্তচাপ:

নিম্ন রক্তচাপ বা Low Blood pressure শব্দটা বেশ প্রচলিত। মেডিক্যাল পরিভাষায় নিম্ন রক্তচাপ হলো দেহের রক্ত সংবহনতন্ত্রের এমন একটি অবস্থা, যেখানে রক্তের সিস্টোলিক চাপ ৯০ মি.মি. পারদের নিচে এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৬০ মি.মি. পারদের নিচে থাকে।

কারণ:

দেহে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তস্বল্পতা, হরমোনের পরিবর্তন, রক্তগাত্রের প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়া, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, হৃৎপিন্ড কিংবা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির সমস্যা, ঠিকমতো বা সময়মতো না খেলে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে। তবে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়াই হাইপাটেনশনের প্রধান কারণ বলে ধরা হয়। এ ছাড়া রক্তপাত, অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণ যেমন অনশন কিংবা অতিরিক্ত ফ্লুইড বের হয়ে যাওয়া; যেমন বমি কিংবা ডায়রিয়ার কারণেও নিম্ন রক্তচাপ হয়।

ঝুঁকি:

যাদের রক্তচাপ অস্বাভাবিক হারে কম, তাদের হৃক্রিয়া, অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি কিংবা মস্তিষ্কজাত সমস্যা থাকতে পারে। এই রক্তচাপ বজায় থাকলে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কম থাকার কারণে সেখানে অক্সিজেন ও পুষ্টির অভাব হতে পারে, যা জীবনের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।

করণীয়:

আলু, ডিম, মাছ, মাংস, ছানা, বাদাম, সবুজ শাক ইত্যাদি এবং লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ, খাদ্যে কিছু ইলেকট্রোলাইট (গ্লুকোজ ও স্যালাইন) যোগ, সকালে ক্যাফেইন গ্রহণ সহায়ক হতে পারে। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সুস্থতার জন্য রক্তচাপকে নিরাপদ মাত্রার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা সবার জন্যই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

 

উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ

 

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিচের সতর্কতামূলক নিয়মগুলো পালন করলে উপকার পাওয়া যায়:

১। ডায়াবেটিস থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা।

২। দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৩। চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করা, যেমন: ঘি, মাখন, গরু ও খাসির মাংস, চিংড়ি ইত্যাদি।

৪। সুষম খাদ্য গ্রহণ করা।

৫। পরিমাণের অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।

৬। নিয়মিত ব্যায়াম করা।

৭। ধুমপান থেকে বিরত থাকা।

৮। দৈনিক ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমান।

৯। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা।

১০। খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment