আজকের আলোচনার বিষয়ঃ বেসিক লাইফ সাপোর্ট। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর বেসিক লাইফ সাপোর্ট অংশের অন্তর্গত।

বেসিক লাইফ সাপোর্ট (Basic Life Support)
যখন একজন রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় (হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়), তখন তাদের জীবন রক্ষার্থে বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) প্রদান করা যেতে পারে। মুলত এখানে হৃদপিণ্ড থেকে শরীরের চারপাশে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখতে বুকের চাপ দেওয়া হয়, যা টিস্যু ও মস্তিষ্কের অক্সিজেন সরবরাহ বজায় রাখা নিশ্চিত করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা অ্যাসফেন্সিয়া (মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব)-এর শিকার ব্যক্তিরা এমন জরুরি অবস্থার মধ্যে থাকে, যেখানে তাদের জীবন বাচাতে এবং তাদের স্বাস্থ্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য “চেইন জফ সারভাইভালো” নামক চারটি কাজের সমন্বয় প্রয়োজন হয়।

এই চারটি কাজ হলঃ
১. কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট প্রতিরোধ
২. কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের অবিলম্বে সনাক্তকরণ এবং জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা ব্যবস্থা সক্রিয়কর
৩. বেসিক লাইফ সাপোর্ট (CPR- Candiopulmonary resuscitation and AED – Automated External defibrillator)
৪. অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট এবং পরবর্তী সেবা
বেসিক লাইফ সাপোর্ট – গুরুত্ব (Importance of Basic Life Support)
বেসিক লাইফ সাপোর্ট (BLS) হল একটি জরুরি চিকিৎসা সেবা। যেকোনো জায়গায় একজন সরনাপন্ন ব্যক্তির জীবন বাচানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি খুবই সহায়ক হতে পারে। এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে BLS-এর উদ্দেশ্য ব্যক্তির ‘রোগমুক্তি করা নয় বরং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা না আসা পর্যন্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যেতে না দেওয়া।
BLS পদ্ধতিটি মূলত হৃদযন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রের বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্মুখীন ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে, ব্যক্তির শ্বাস এবং হৃদস্পন্দন পুনরুজ্জীবিত করা যেতে পারে। তবে পরবর্তীতে রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। BLS পদ্ধতিটি সঠিক উপায়ে প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে, বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রদত্ত BLS প্রশিক্ষণের উপর প্রচুর জোর দেওয়া হয়। সঠিক উপায়ে BLS প্রদান করতে ব্যর্থ হলে রোগী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরতে পারে, তাই সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই প্রশিক্ষণটি নেয়া জরুরি।

বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন এমন পরিস্থিতি (Situation where BLS is needed)
সাধারণত হৃদযন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে বেসিক লাইফ সাপোর্ট প্রয়োজন হয়। যেমন :
- হার্ট অ্যাটাক
- করোনারি ধমনীর রোগ
- হার্ট ফেইলিউর
- হার্টের অনিয়মিত ছন্দ
- যেকোনো শ্বাস-প্ৰশ্বাসজনিত রোগ
এছাড়া প্রয়োজন হতে পারে ইলেক্ট্রোকিউশন, প্রচুর রক্তক্ষরণ, এলার্জি প্রতিক্রিয়া, ডুবে যাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত মাদকসেবন প্রভৃতি পরিস্থিতিতে। একটি কার্ডিওপালমোনারী অ্যারেন্ট সাধারণত সতর্কতা ছাড়াই ঘটে। যদি কেউ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে থাকে, তবে সে,
- অজ্ঞান হয়ে যাবে
- প্ৰতিক্রিয়াহীন হবে এবং
- স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিবেনা
ৰেসিক লাইফ সাপোর্টের সময় প্রাথমিক পরিস্থিতি পরীক্ষা: (DR-AB)
ধাপ-১ পারিপার্শ্বিক বিপদচিহ্ন (Danger):
আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থান ও স্থান এবং তোমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত কর। রোগীর আশেপাশের অবস্থা, রোগীর কোনো সংক্রমক রোগের চিহ্ন আছে কি না ইত্যাদি।

ধাপ-২ রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা (Response):
সাহায্যের জন্য আশেপাশের মানুষের কাছে আবেদন কর, রোগীকে উদ্দীপিত কর, রোগীর কাঁধে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকো। ১০ সেকেন্ডের জন্য এই লক্ষণগুলো আছে কি না লক্ষ্য কর:
- অজ্ঞান হওয়া
- প্রতিক্রিয়াহীনতা এবং
- শ্বাস-প্ৰশ্বাসহীনতা
অভিজ্ঞরা ক্যারোটিড পালস পরীক্ষা করেও দেখতে পারে, তবে এটা জরুরি অবস্থায় অত্যাবশ্যক।
রোগী তোমার ডাকে সাড়া দিলে তাকে তার অবস্থানে থাকতে দাও ও তার কি সমস্যা হয়েছিল তা জানার চেষ্টা কর। প্রয়োজনে সাহায্য নাও। রোগী তোমার ডাকে সাড়া না দিলে পরবর্তী ধাপে যাও।
ধাপ- ৩ রোগীর শ্বাসনালী (Airway):
এয়ারওয়ে ব্যবস্থাপনা মেরুদণ্ডসহ অন্য যে কোনো আঘাতের চেয়ে পুরুত্বপূর্ণ। শ্বাসনালীতে কিছু আছে কিনা পরীক্ষা করতে রোগীর মুখ খুলে দেশ এবং যদি থাকে তা বের করার জন্য মাথা একপাশে ঘুরিয়ে দাও। যদি কিছু বের না হয়, তাহলে রোগীর প্রতিক্রিয়াশীলতা দেখার জন্য পুনরায় পরীক্ষা কর। শ্বাসনালী পর্যবেক্ষণ করার কৌশলগুলো মনে রাখতে হবে – প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কপালে এক হাত রেখে মাথা পিছনের দিকে বা ঘাড়ের দিকে সামান্য ভাঁজ করবে ও অন্য হাত দিয়ে চিবুক সামান্য উঁচু করে ধরতে হবে, শিশুদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে হবে।

ধাপ-৪ শ্বাসপ্রশ্বাস (Breathing) :
রোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা কর, মাথা এবং চিবুকের অবস্থান বজায় রেখে এটি কর, তোমার পাল এবং কান রোগীর মুখের উপর রাখো যেন বুক পর্যবেক্ষণ করার সময় শ্বাসযন্ত্রের যে কোনোও প্রচেষ্টা অনুভব করা যায় এবং বুকের উঠানামা দেখা যায়। ১০ সেকেন্ড ধরে স্বাভাবিক শ্বাস-প্ৰশ্বাস আছে কি না তা মুল্যায়ন করা উচিত। যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়, কিন্তু জান থাকে, তাহলে রোগীকে পুনরউদ্ধার অবস্থানে (Recovery position) নিয়ে আসতে হবে।
১- ব্যক্তির হাত-পা সোজা কর। তার মাথার পাশে ডান হাতটি ভাঁজ করে রাখো।
২- ব্যক্তির বাম হাতটি তার ডান পাশের নীচে রাখো।
৩- ব্যক্তির বাম পা হাঁটু বরাবর ভাঁজ কর। ব্যক্তির মাথা এবং ঘাড় সতর্কতার সাথে ধরে আলতোভাবে ভাঁজ
করা হাঁটুটিকে ডানদিকে নিয়ে কাত করে শোয়াও
৪- উপরের পা সামঞ্জস্য কর, যাতে নিজস্ব এবং হাঁটু উভয়ই ডান কোণে ৰাকানো থাকে। নিশ্চিত কর যে ব্যক্তিটি
যেন ঘুড়ে না যায়।
যদি রোগী শ্বাস-প্রশ্বাস না নেয়, তবে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা কর বা ৯৯৯ এ কল করে সাহায্যের জন্য আবেদন কর। অবিলম্বে তার উপর CPR শুরু কর।
আরও দেখুনঃ