গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

আজকে আমরা আলোচনা করবো গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়। যা পেশেন্ট কেয়ার টেকনিক ১ এর হাউজকিপিং এর ধারণা অংশের অন্তর্গত।

 

গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

 

গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

গৃহের সকল কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন, নিরাপদে চলাফেরা, আরাম ও বিশ্রামের জন্য গৃহ পরিবেশ পরিষ্কার- পরচ্ছন্ন, পরিপাটি রাখা প্রয়োজন। গৃহে এরকম পরিবেশ বজায় রাখলে রোগীর জন্য গৃহ নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়। বাড়ির পরিবেশ যদি নিরাপদ না থাকে তবে নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে কেয়ারগিভারের করণীয় বিষয়সমূহ হচ্ছে:

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

  • আসবাবপত্র যথাস্থানে রাখা, যাতে করে ঘরের মধ্যে চলাফেরা করতে রোগীর কোনো অসুবিধা না হয়।
  • কোনো আসবাবপত্র ভেঙে গেলে সেটা সরিয়ে ফেলা বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেরামত করা।
  • গৃহে চলাচলের জায়গায়, সিঁড়িতে, টয়লেটে, রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখা
  • সিঁড়ি, বেলকোনি ও ছাদের চারপাশে রেলিং এর ব্যবস্থা রাখা
  • বাথরুম, রান্নাঘর, গোসল খানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, মেঝে যাতে পিচ্ছিল না থাকে সে জন্য ঝাড়ু বা ব্রাশ দিয়ে ঘষে শ্যাওলা বা পিচ্ছিল পদার্থ দূর করা।
  • মেঝেতে কাচের টুকরা, পিন, সুচ ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখলে সাথে সাথে তা তুলে নিরাপদ স্থানে ফেলা।
  • ঘরের মেঝেতে পানি পড়লে সাথে সাথে মুছে ফেলা।
  •  ছুরি, কাঁচি, বটি, নেইল কাটার এরকম ধারালো বস্তু কাজ শেষে যথাস্থানে গুছিয়ে রাখা। রোগী বা শিশুদের কাছ থেকে নিরাপদ অবস্থানে রাখতে হবে।
  • রান্নাঘরের ময়লা আবর্জনা ডাস্টবিন বা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলা।
  •  বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে বা সুইচ ভেঙে গেলে তা মেরামত করার জন্য সাথে সাথে যথাযথ ব্যক্তিকে অবহিত করা।

পরিবারের অন্যান্যদের সহযোগিতা ও প্রচেষ্টা ছাড়া রোগীর কক্ষে তথা গৃহে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা কেয়ারগিভারের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। এজন্য এসকল ক্ষেত্রে কার্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে রোগীর স্বজনদের অন্তর্ভুক্ত করা কেয়ারপিতারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

 

রোগীর ঘর বা বেডরুম পরিষ্কার করা:

বাড়িতে একজন রোগী বেশিরভাগ সময় তার শোবার ঘরেই অবস্থান করে থাকেন। আবার হাসপাতালেও রোগীরা একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অবস্থান করেন। উভয় ক্ষেত্রেই মৌলিক কার্যাবলি একই রকম। এই অংশে আমরা হোম কেয়ার সেটিংসে রোগীর শোবার ঘর পরিষ্কারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবো। রোগীর শোবার ঘর পরিষ্কারের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত:

১. বিছানা, বিছানার চাদর ও বালিশ ইত্যাদি প্রস্তুত করা ও গুছিয়ে রাখা

২. বিছানা ও বিছানার চারপাশ পরিষ্কার করা

৩. বিছানার পাশে অবস্থিত আসবাবপত্র পরিষ্কার রাখা

৪. অন্যন্য আসবাব, চেয়ার, টেবিল, ওয়াল কেবিনেট, আলমারি, ওয়্যারড্রোব ইত্যাদি পরিষ্কার করা

৫. ড্রেসিং টেবিল, সাইড টেবিল, সোফা ইত্যাদি গুছিয়ে রাখা

৬. কার্পেট পরিষ্কার করা

৭. মেঝে মুছে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা

এর মধ্যে ঘরে বিভিন্ন দ্রব্যাদি স্থাপন ও পুনঃস্থাপনও অন্তর্ভুক্ত। সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো রোগীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা

 

গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন পন্য ও সরঞ্জাম সঠিক উপায়ে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে হয়। কখন কোনো ধরনের পদার্থ ব্যবহার করতে হবে সেটি জানতে হয়, যার মধ্যে আছে বেডরুম পরিষ্কার করার ৪টি মৌলিক এজেন্ট যথা :

১. সাধারণ পরিষ্কার ও চেয়ার টেবিল মোছার জন্য ক্লিনিং এজেন্ট

২. সাবান ও ডিটারজেন্ট দেওয়া পানি গোসল করা, ধোয়া, কাপড় কাচা ও থালা-বাসন মাজার জন্য ব্যবহার করা হয়

৩. পরিষ্কার করা কঠিন এমন জায়গাগুলোকে ঘষে পরিষ্কার করার জন্য ক্লিনসার

৪. বিশেষ জিনিষপত্র পরিষ্কার করার জন্য বিশেষ ধরনের ক্লিনিং এজেন্ট যেমন: গ্লাস ক্লিনার

পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত পণ্যগুলো মারাত্মক রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে। এজন্য এই কাজগুলো সর্বদা গ্লাভ্স ও অন্যন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরিধান করে সম্পাদন করা উচিৎ। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে কাজ করার জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তারপর পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথায় রাসায়নিক পদার্থটি ভালোমত কাজ নাও করতে পারে। বাথরুমের অভ্যন্তরের মেঝে, দেওয়াল বা অন্য কোনো পৃষ্ঠ জীবাণুমুক্ত করার জন্য যদি নির্দেশিত ক্যামিকেল না পাওয়া গেলে ব্লিচিং পাউডারের দ্রবন ব্যবহার করা যেতে পারে। কাজের শুরুতেই ব্লিচিং পাউডার দ্রবন তৈরি করে নেয়া উচিৎ প্রতিদিন।

 

গৃহ পরিবেশে নিরাপত্তা রক্ষায় করণীয়

 

ময়লা ফেলা বা ডিজপোসিং অফ ট্র্যাশ

রোগীর সেবায় এবং লাইট হাউজকিপিং করতে গেলে অনেক ময়লা আবর্জনা উৎপন্ন হতে পারে। পেশেন্ট কেয়ারে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অধ্যায়ে আমরা এ সম্পর্কে জেনেছি। বাসাবাড়িতেও অনেক সময় রোগীর সাথে সংশ্লিষ্ট ময়লা আবর্জনা ফেলার কাজটি কেয়ারগিভারকে করতে হয়। এ ময়লা আবর্জনা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের, যেমন: খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ, বডি ফ্লুইড্‌স, কাগজের টুকরা বা অন্যান্য শুকনো আবর্জনা, ঔষধের খালি প্যাকেট ইত্যাদি। প্রতিদিনের ময়লা ট্র্যাশব্যাগে ভালোমতো বেঁধে ডাস্টবিনে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় ঘর দূর্ঘন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন রোগ জীবানুর আবির্ভাব ঘটতে পারে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment